ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গমের বাজার
কৃষি বিভাগ
সর্বনিম্ন নামার পর এবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গমের বাজার। ইতোমধ্যে শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) বেড়েছে গমের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য। এমনই খবর প্রকাশ করেছে বিজনেস রেকর্ডার। রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনের গম রফতানি ফের চালু করতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। কিছুদিন আগে ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিষয়টি আরো গতি পায়। এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তিও শিগগিরই স্বাক্ষর করা হবে। তবে রফতানিতে এখনো কোনো অগ্রগতি দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। এদিকে গমের পাশাপাশি ভুট্টা ও সয়াবিনের দামও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি ইউক্রেনের গম রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী রফতানি বাড়েনি। ফলে গমের দাম আরো বাড়তে পারে।
সর্বশেষ কার্যদিবসে শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে গমের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি বুশেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭ ডলার ৯২ সেন্ট। এর আগে শস্যটির দাম ৭ ডলার ৬৬ সেন্টে নেমে গিয়েছিল, যা ১০ ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন।
সিডনিভিত্তিক কৃষি ব্রোকারেজ ইকন কমোডিটিজের পরামর্শক পরিষেবা বিভাগের পরিচালক ওলে হো বলেন, কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে প্রত্যাশা অনুযায়ী গম রফতানি না বাড়ার খবরে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে গমের ফিউচারস মার্কেট।
এদিকে গম উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২২-২৩ মৌসুমে ইইউতে সব ধরনের গম উৎপাদন ১২ কোটি ৫০ লাখ টনে নামতে পারে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান কমিশন।
সরবরাহ ও চাহিদাসংক্রান্ত প্রতিবেদনে ইউরোপিয়ান কমিশন জানায়, তবে শস্যটির রফতানি রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে। কিন্তু এর আগের পূর্বাভাসে ১৩ কোটি ৪ লাখ টন উৎপাদনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এ পূর্বাভাস সত্য হলে উৎপাদন ২০২১-২২ মৌসুমের চেয়েও কমবে। ওই মৌসুমে ১৩ কোটি ১ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছিল।
এক প্রতিবেদনে কমিশন জানায়, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আবাদ কমে গিয়েছে। সারসহ উৎপাদন উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট কৃষকদের আবাদে নিরুৎসাহিত করছে। এছাড়া খরা ও দাবদাহের প্রভাবও উৎপাদন পূর্বাভাস কমাতে বাধ্য করেছে।
তবে কমিশন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গম রফতানি পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে রফতানি ৩ কোটি ৮০ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে রফতানি রেকর্ড সর্বোচ্চে উন্নীত হবে। ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে রফতানি প্রাক্কলন ছিল তিন কোটি টন।
চলতি মাসেই ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা, এ মৌসুমে আন্তর্জাতিক বাজারে ইইউর গমের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই বিশ্ববাজারে শস্যটির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে দায়ী করা হচ্ছে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের নিম্নমুখী সরবরাহকে।
রুশ সেনারা ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বন্দরে মাইন পুঁতে রাখার অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে। ফলে দেশটি পশ্চিম সীমান্তের স্থল, রেল ও নদীবন্দর দিয়ে অত্যন্ত স্বল্প পরিমাণ গম রফতানিতে বাধ্য হচ্ছে।
তথ্য বলছে, প্রতি মাসে ইউক্রেন ৬০ লাখ টন গম রফতানি করলেও যুদ্ধের পর তা ১০ লাখ টনে নেমেছে। অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার রফতানি প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে আমদানিনির্ভর দেশগুলো ইউরোপসহ বিকল্প উৎস থেকে গম ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছে।
এদিকে নিম্নমুখী উৎপাদন ও বাড়তি রফতানির কারণে মজুদ পূর্বাভাস কমিয়েছে কমিশন। পূর্বাভাস অনুযায়ী, নতুন মৌসুমে অঞ্চলটিতে গমের মজুদ ১ কোটি ৩২ লাখ টনে নামতে পারে। আগের মৌসুমের তুলনায় মজুদ ৪০ লাখ টন কমবে। এদিকে গমের পাশাপাশি ভুট্টা, যব ও সরিষা তেলবীজ উৎপাদন পূর্বাভাসও কমিয়েছে ইউরোপিয়ান কমিশন।