ফার্ম পরিচালনায় বৈশ্বিক পরিবেশ ও নিয়ম অনুসরণ অপরিহার্য
প্রাণিসম্পদ
শুধু পোল্ট্রি’ই- নয় যে কোন ক্রর্ম সাধনের পূর্বে সে-সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন একান্ত জরুরী আর জীবন্ত বিজনেস হওয়ায় পোল্ট্রিতে তাহা আরো অধিকতর গুরুত্ব বহন করে থাকে অতএব ফার্ম করার পূর্বে ফার্ম পরিচালনা সম্পর্কে সবিস্তারে জানা একান্ত জরুরী, মনে রাখা দরকার অভিজ্ঞতাই সফলতার চাবিকাঠি, আরো উল্লেখ যে পোল্ট্রি তথা লাইভ ষ্টক বিজনেসে জানার শেষ নেই এখানে যে-যতটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সম্মত হবেন সে-ততটাই বিজনেস সম্প্রসারণে সমৃদ্ধশালী অর্থাৎ লাভবান হবেন নিঃসন্দেহে।
প্রেক্ষাপটঃ
প্রথমেই বলতে হচ্ছে- ঋতু পরিবর্তনের দেশ বাংলাদেশ, ঋতুর সাথে আবহাওয়া ও পরিবেশের বেশ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে তার সাথে ইদানীং যোগ হচ্ছে বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয় অর্থাৎ গ্রীনহাউজে বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, যার প্রভাবে বছরের অধিকাংশ সময়ে দেশের নিম্ন অঞ্চল সমূহে জলের প্রবাহ থাকছে, বিজ্ঞানীরা এ-ও বলছেন সামনের দিনগুলোতে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল সমূহের নিচু ও সমতল ভূমিগুলোতে বছরের বেশিরভাগ সময়ে পানির প্রবাহ থাকবে যার ফলে দেশের সমগ্র এলাকায় কম বেশি ক্ষতি সাধিত হবে!
ভিটি ও সেড নির্মাণঃ
ঘরের ভিটি উঁচু করে নির্মাণ করা উচিৎ, যাতে করে বর্ষা মৌসুম অথবা ঝড় বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাসে ফার্মে কোন প্রকার পানির প্রবাহ না ঘটে, আর পারিপার্শ্বিক কারণে যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করে অর্থাৎ মাচা পদ্ধতিতে সেড নির্মাণ করা প্রয়োজন, কোন ক্রর্মেই ঝুঁকি নিয়ে ফার্ম পরিচালনা করা সঠিক কাজ নয়, কেননা এতে লাভের পরিবর্তে লোকসানের মুখে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়!
যোগাযোগ ও বিপণনঃ
ফার্ম স্হাপনে যোগাযোগ ব্যবস্হা মাথায় রাখা দরকার আর সেক্ষেত্রে প্রথমে বেছে নিয়ে হবে বড় কোন রাস্তার দ্বার যেখানে মালামাল পরিবহনের সকল সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধমান এবং সেই সাথে থাকতে হবে বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্হা তবেই কেবল নিরাপদে নিচিন্তে ফার্ম পরিচালনা সম্ভব বটে!
পণ্য উৎপাদনে লক্ষ্মণীয় বিষয়ঃ
যে কোন পণ্য উৎপাদনের পূর্বে বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিৎ কোথায় কি পণ্য উৎপাদন করবেন? কেননা যেখানে যে-সকল পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেখানে সেইসব পণ্য উৎপাদন শ্রেয়, অর্থাৎ ডিমের চাহিদা থাকলে সেখানে লেয়ার, হাঁস ও কোয়েল পাখি আর মাংসের চাহিদা বেশী হলে সেখানে রেডি ব্রয়লার, সোনালী, কক্-মুরগী ও টার্কির ফার্ম করা কিংবা দুধের চাহিদা হলে- গরু ছাগল মহিষের ফার্ম স্হাপন এছাড়া এলাকা ভেদে মাছ চাষে মনোনিবেশ করাটাও মন্দ নয় বটে!
ঘরের অবকাঠামোঃ
পরিবেশ গত দিক বিবেচনায় ঘর তৈরি করা উচিৎ যেমন ঘরের দৈর্ঘ্য পূর্ব পশ্চিমে লম্বালম্বি ও উওর দক্ষিণে আড়াআড়ি করে নির্মাণ করা এবং ঘরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নির্ভর করে আপনি কতোগুলো প্রাণী/পাখি পালন করতে চাচ্ছেন তাঁর উপর, যেমন ধরুন আপনি এক হাজারটি ব্রয়লার পালন করতে ইচ্ছুক, সেক্ষেত্রে প্রতিটির জন্য কমপক্ষে ১ফুট জায়গা প্রয়োজন অর্থাৎ (দৈর্ঘ্য ৫০×২০= ১,০০০ফুট) সে অনুযায়ী যতগুলো প্রাণী পালন করবেন ততধিক পরিমাণ জায়গা প্রশস্ত করতে হবে, মনে রাখতে হবে ঘরের দৈর্ঘ্য যা-ই হোক না কেন প্রস্থ ২০-২৫ ফুটের অধিক হওয়া কাম্য নয় কেননা প্রস্হ উঁচু হলে আলো-বাতাসের ঘার্তি হতে পারে?
ঘরের উচ্চতা ও ছাউনিঃ
ঘরের উচ্চতা কমপক্ষে ৯ ফুট হওয়া উচিৎ তাতে করে মাঝখান বরাবর ১১-১২ ফুট উ করা যেতে পারে এবং ঘরের বাহিরে কমপক্ষে ২-ফুট বাড়তি ছাউনি দিতে হবে যাতে ঝড় বৃষ্টির পানি ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে, বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে যাতে ঘরের দক্ষিণ দিকটা খোলা থাকে এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে।
লেখকঃ মো. সিরাজুল ইসলাম
ব্যবস্হাপনা পরিচালক, ব্রাদার্স পোলট্রি ইন্টারন্যাশনাল,ঢাকা।Email: brothers [email protected]