কুমিল্লায় নতুন ধানের দ্বিগুণ ফলন
কৃষি বিভাগ
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিনা ধান-২১ চাষে সাফল্য পাচ্ছেন কুমিল্লার কৃষকরা। ধান চাষে কম খরচের সাথে সময়ও কম ব্যয় হয়। দীর্ঘ খরায়ও এটি টিকে থাকতে পারে। ফলনও হচ্ছে দ্বিগুণ।
সম্প্রতি বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জুয়েল সরকার মাঠ পরিদর্শন করেন। মাঠ পরিদর্শনে দেখেন, বিনা ধান-২১ চাষ করে প্রতি হেক্টরে কৃষক সাড়ে ৫ টন ধান পেয়েছেন। এই আউশ মৌসুমে অন্য ধান চাষ করে হেক্টরে পেতেন পৌনে ৩ টন ধান। ফসলের প্রধান মৌসুম বোরোর মতই ফলন হচ্ছে।
সূত্র মতে, আফ্রিকার নেরিকা-১০ ধানের জাত থেকে এই বিনা ধান-২১ উদ্ভাবন করা হয়। নেরিকার ফলন কম হতো। বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম গবেষণা করে এর ফলন বাড়িয়ে দেন। গাছের উচ্চতা কম বেশি ছিল। সেগুলো সমান করা হয়। ধানের সাইজ চিকন করা হয়। বিনা ধান-২১ প্রথমবারের মতো কুমিল্লার মাঠে ৫০ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। এতে ভালো ফলন এসেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে আউশ মৌসুমে কুমিল্লার মাঠে বিনা ধান-২১ এর আবাদ বাড়বে।
বুড়িচং উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের কৃষক শামছুল হক, নজরুল ইসলাম ও সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের রিপন মিয়া বলেন, প্রথমবারের মতো বিনা ধান-২১ চাষ করেছেন। প্রথমে ফলন নিয়ে টেনশনে ছিলেন। তবে প্রথমবারেই ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে তারা আরো বেশি জমিতে এই ধান চাষ করবেন বলে জানান। তাদের দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও এই ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, কুমিল্লার মানুষ সৌখিন। তারা চিকন চাউল খেতে পছন্দ করেন। বিনা ধান-২১ এর চাউলও চিকন। এই কারণে এই ধান চাষে কৃষক ভালো লাভ পাবেন। এছাড়া এই ধান পানি ছাড়া ২০ দিন টিকে থাকতে পারে। তবে পানি পেলে আবার বেড়ে উঠবে।
বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, আফ্রিকার নেরিকা-১০ ধানের জাত থেকে এই বিনা ধান-২১ উদ্ভাবন করা হয়। নেরিকার ফলন কম হতো। তাই কৃষকের আগ্রহ কম ছিল। গামা রশ্মি প্রয়োগ করে ফলন বাড়ানো হয়। গাছের কম বেশি উচ্চতা সমান করা হয়। মোটা ধানের সাইজ চিকন করা হয়। তাই এই ধান চাষ নিয়ে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে আউশ মৌসুমে উঁচু সবগুলো জমি বিনা ধান-২১ এ হেসে উঠবে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান জানান, আউশ মৌসুমে অনেক জমি খালি পড়ে থাকে। কারণ ফলন কম পাওয়ায় অনেকে এই মৌসুমে ধান চাষ করতে চান না। অন্য ধান চাষে হেক্টরে আগে পেতেন পৌনে ৩ টন ধান। বিনা ধান-২১ চাষে প্রতি হেক্টরে কৃষক সাড়ে ৫ টন ধান পাচ্ছেন। এছাড়া ধানের জীবনকাল কম হওয়ায় এক জমিতে চার ফসলও করা সম্ভব হচ্ছে। এদিকে এই ধান চাষে সেচসহ অন্যান্য খরচ নেই বললেই চলে।