উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে কৃষি
কৃষি গবেষনা
।।অর্ঘ্য চন্দ।।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান জীবনীশক্তি হচ্ছে কৃষি। আবহমানকাল ধরে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কৃষির রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.৬ শতাংশ। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম।
ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১৫.৭৭ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ৪৫৩.৪৪ লাখ মেট্রিক টন, যার ফলে দেশ আজ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০০৬ সালে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিলো ২৬১.৩৩ লাখ মেট্রিক টন। এক ও দুই ফসলি জমি অঞ্চল বিশেষে চার ফসলি জমিতে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশে বর্তমানে ফসলের নিবিড়তা ২১৬% যেখানে ২০০৬ সালে দেশে ফসলের নিবিড়তা ছিলো ১৮০%।
ধান উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। খরা, লবণাক্ততা, জলমগ্নতা সহনশীল ও জিংকসমৃদ্ধ ধানসহ এ পর্যন্ত ধানের ১৩৪টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে ধান উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৬ সালে শাকসবজির উৎপাদন ছিল ২০ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবজি উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। যার ফলস্বরূপ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এছাড়াও আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম।
২০০৯ থেকে বিভিন্ন ফসলের ৬৩১টি উচ্চ ফলনশীল নতুন নতুন জাত ও ৯৪০টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজি ও মসলা উৎপাদন অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ পদ্ধতিটিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০১৫ সালে কৃষিতে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বিআরআরআই কর্তৃক ধানের ৫৫টি জাত, বিএআরআই কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ২৫৮টি জাত, বিজেআরআই কর্তৃক পাটের ১৫টি জাত, বিএসআরআই কর্তৃক ইক্ষুর ৯তি জাত ও সুগার বিট, তাল ও স্টেভিয়ার ৪টি জাত, সিডিবি কর্তৃক তুলার ১০টি জাত এবং বিআইএনএ কর্তৃক বিভিন্ন ফসলের ৬৮টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে গম ও ভুট্টা গবেষণা আরো সম্প্রসারিত হবে। দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুষ্টিবিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন টেকসই খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
তাছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন লকডাউনে ঘরবন্দি, ঠিক সেই সময়েও মাঠে ছিলেন বাংলার কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত ফসলই বাঁচিয়ে রেখেছে ঘরবন্দি ১৬ কোটি মানুষের জীবন। বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের অর্থনীতি। করোনাকালে কৃষির এই অবদান আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে – কৃষিই আসল ভরসা।
কৃষকের এই অবদানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। সর্বোচ্চ উৎপাদন ও সুষ্ঠ বাজারজাতকরণ কেবল করোনা সংকটে নয়, দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায়ও অবদান রাখবে। বর্তমান সময়ে এদেশের উন্নতির জন্য কৃষিবিদদের অবদান প্রশংসনীয়।
কৃষিবিদদের হাতেই সৃষ্টি হচ্ছে ফসলের নতুন নতুন জাত কিংবা ফসল উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি। কৃষি বিজ্ঞানিদের গবেষণায় ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে দেশ আজ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির বিভিন্ন সূচকে বিশ্বের জন্য পথিকৃৎ। কৃষিতে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে সাধারণ কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নিরলস গবেষণার ফলে। এগিয়ে যাক আমাদের কৃষি, এগিয়ে যাক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
লেখক: শিক্ষার্থী (৪র্থ বর্ষ) , কৃষি অনুষদ
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট –৩১০০