১৫ লক্ষাধিক টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনে চাষিরা
কৃষি বিভাগ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার কৃষি যোদ্ধাগণ এবারো সবজির উৎপাদন বিশেষ অবদান রাখছে। দেশে উৎপাদিত প্রায় ২ কোটি টন শীত ও গ্রীস্মকালীন সবজির প্রায় ২০ লাখ টনই আসছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। গত মাসের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভরকরে নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণের পরেও এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে ১৫ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষে মাঠে মাঠে কাজ করছেন দক্ষিণাঞ্চরের কৃষিযোদ্ধাগণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল লক্ষ্য অর্জনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। চলতি মাসে যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেয়, তবে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও সবজি উৎপাদন লক্ষ্য অর্জন নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলে মনে করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। গত দেড় দশকে দক্ষিণাঞ্চলে সবজির আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে তিনগুনেরও বেশি।
কৃষিবীদদের মতে, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত মানের সবজি বীজসহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছলে উৎপাদন প্রায় দ্বিগুনে পৌঁছান সম্ভব হবে। এমনকি খোলা মাঠে ও বাড়ির আঙিনার পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে পতিত জমিতেও সবজির আবাদ বাড়ছে। আর দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অনেক এলাকায় আবাদকৃত সবজির বীজ ও চারার যোগান হচ্ছে বরিশাল ও পিরোজপুরের ‘ভাসমান বেড’ থেকে। যুগের পর যুগ ধরে বরিশালের বানরীপাড়া, উজিরপুর এবং পিরোজপুরের নাজিরপুর ও সদর উপজেলার কিছু অংশে কচুরিপানার ঢিপ তৈরি করে তার ওপর শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের চারা তৈরি হচ্ছে। এ অঞ্চলের কৃষকদের উদ্ভাবিত সনাতন ও লাগসই প্রযুক্তির ‘সারজন পদ্ধতি’তে বিভিন্ন সবজির চারা তৈরি করে জলাবদ্ধ বিশাল এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ কৃষি-অর্থনীতিও অনেকটাই সচল রয়েছে।
চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টন। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে কার্তিকের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকার আগাম শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পরেও কৃষি যোদ্ধাগণ পুনরায় রবি ফসল আবাদে মাঠে নেমেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি-ঘরের আঙিনায়ও বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হচ্ছে।
ইতোমধ্যে লালশাক, পালং শাক, সিম, ফুলকপি, বাধা কপি, শালগম, গাজর ও মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে এসেছে। তবে এর বাইরে সাম্প্রতিক প্রবল বর্ষণের ধকল কাটিয়েও লাউ সহ বেশ কিছু বারমাসি সবজিও বাজারে রয়েছে। তবে এবার অগ্রহায়ণের অকাল বর্ষণের রেশ ধরে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। কৃষকরা এবার কিছুটা বেশি দাম পেলেও অগ্রহায়ণের বর্ষণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘দেশে গত বছর প্রায় ১ কোটি ৯৮ লাখ টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। দেশে উৎপাদিত সবজি ‘অভ্যন্তরীণ পূর্ণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে’ বলে আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। ডিএই’র মতে বর্তমানে ‘বিশ্বের প্রায় ১১৪টি দেশে বাংলাদেশের কৃষি পণ্য রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে শীতকালীন সবজিই অন্যতম’। এ বাজার আরো সম্প্রসারণে সরকার দেশে সবজি আবাদ বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এদিকে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটÑবারী’ মাঠ পর্যায়ে গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মতো বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজিরও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এমনকি বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় যে ভাসমান ঢিবিতে সবজি বীজসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ হচ্ছে, বারি’র বিজ্ঞানীগণ সে ক্ষেত্রেও আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাচ্ছেন। ফলে কৃষকগণ আরো আস্থা এবং নির্ভরতা সাথেই ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে মনযোগী হচ্ছেন। এরফলে প্লাবন ভ‚মিতে অধিক ফসল উৎপাদনও সম্ভব হচ্ছে। এতে করে কৃষকগণ লাভবান হচ্ছেন।