কর্পোরেট জব আর সংসার সামলিয়েও একজন সফল উদ্যোক্তা শান্তা
পাঁচমিশালি
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । প্রযুক্তির ছোঁয়া দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও প্রযুক্তির সুফল ভোগ করে নিজেদের করে তোলছেন স্বাবলম্বী, নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য এক উচ্চতায় । এফ কমার্সের এই বিপ্লবময় যুগে নারীদের সফলতার গল্প অন্য নারীদের এগিয়ে আসতে অনুপ্রেরণা যোগায়, সাহস দেয় আমিও কিছু করতে পারি এই ভাবনায় । কেউ হয়ত ঘরে বসে সংসার সামলিয়ে; কেউবা ঘর, সংসার আর কর্পোরেট জব সামলিয়ে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা – অনুপ্রেরণা হচ্ছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তাদের । এমনি একজন সফল ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারী উদ্যোক্তা হচ্ছেন ঢাকার উত্তরার শান্তা যিনি সমানতালে ২ কন্যা সন্তান আর স্বামীর সংসার সামলাচ্ছেন, শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে কর্পোরেট জব করছেন আর উদ্যোক্তা হবার সুযোগ করে দিয়েছেন অন্য নারীদের ।
শুরুটা অবশ্য ছিল একটু চ্যালেঞ্জিং, ২০১৬ সালে যখন অনলাইন বিজনেস শুরু করেন তখন কোথা থেকে ড্রেস সংগ্রহ করবেন, কাদের কাছে বিক্রি করবেন, বিক্রি হবে কিনা এইরকম হাজারো প্রশ্ন মনে ঘুরপাক করছিল । কিন্তু তিনি বিশ্বাসী ছিলেন যে শুরু করলে আর সময় দিলে সফলতা আসবেই । ছোট একটি ফেসবুক পেইজের (Fabrics) মাধ্যমে শুরু করেন যাত্রা, বিশ্বাস ছিল যে সর্বোচ্চ গুনগতমান আর কাস্টমারদের সাথে কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে পারলে সফল হওয়া যাবে; পাশাপাশি এগিয়ে যাবার থিম নিজেই ঠিক করে রেখেছিলেন – ১০ টি ড্রেস থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ করার চেয়ে ৫০ টি ড্রেস বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা লাভ করা উত্তম, এতে ব্যবসার সম্প্রসারণ হতে সময় বেশি লাগে না । হয়েছিলও তাই, অল্প সময়ে কাস্টমার বাড়তে থাকে অনেক, নিজের অধীনে তৈরি হয় ২০ এর অধিক রিসেলার । ফলে পরিশ্রম অনেক কমে যেতে লাগলো আর রিসেলারদের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হতে থাকলো ব্যবসা । এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন কাস্টমার আর রিসেলারদের কাছে পরিচিত মুখ “শান্তা আপু” ।
চাকরি আর সংসার এর পাশপাশি অনলাইন বিজনেস শুরু করার কারণ জানতে চাই শান্তা জানান, “আমরা সবাই কমবেশি অনলাইনে সময় ব্যয় করি, কেউ কেউ চ্যাটিং, টিকটক ইত্যাদি দেখে সময় নষ্ট করে, আমার ভাবনা ছিল যে অনলাইনে সময় দিয়ে যদি ভালো একটা আয় হয় তাতে মন্দ কি । তবে এটাও ঠিক যে কোন কিছু করার জন্য স্বপ্ন দেখতে হয়, পারিবারিক সাপোর্টের প্রয়োজন হয়, আলহামদুলিল্লাহ্ আমি সব ধরনের সাপোর্ট পেয়েছিলাম ফলে বড় স্বপ্ন দেখার সাহস বেড়ে গেয়েছিল ।”
দ্রুত সময়ে ব্যবসা প্রসার ও সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যবসার প্রসারের কথা যদি বলি তাহলে বলতেই হবে যে আমি কখনোই কোয়ালিটির সাথে আপোষ করি নাই, আমাদের সব ড্রেস ভারত থেকে আনা, আমি সবসময় চেয়েছিলাম যে একই রেঞ্জের ড্রেস আনতে আর যেহেতু আমার শোরুম নেই তাই স্বল্প লাভে ড্রেস সেল করি আর কাস্টমারগণ এখন অনেক আপডেট, তাঁরা বিভিন্ন কিছু কম্পেয়ার করেই তবে অর্ডার দেন । ফলে আমার জন্য সুবিধা হয়েছে, আর এখন তো রি-সেলারগণ প্রচুর সাপোর্ট দিচ্ছেন । তাই ৭ মাসের ছোট মেয়ে আর ৬ বছরের বড় মেয়েকে সামলিয়ে সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোভাবেই চলছে। তবে করোনার সময় মার্কেট বন্ধ থাকা কিংবা চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় অনলাইন বিজনেস টা অনেক বেশি জমজমাট ছিল । আমাদের দেশে বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই করোনার সময়ে তৈরি হয়েছে ফলে অনেকেরই মার্কেট ট্রেন্ড বুঝতে সময় লেগেছিল, আর যেহেতু আমি আরোও আগে থেকেই অনলাইন ব্যবসায় সাথে সম্পৃক্ত তাই করোনার সময় ব্যবসায় প্রসার ঠিকঠাক মত হয়েছিল ।”
অনলাইন বিজনেসের স্মরণীয় মুহুর্ত জানতে চাইলে শান্তা জানান, ২ টা দিন তো আমি কখনোই ভুলবো না- ১টা হচ্ছে যেদিন প্রথম অর্ডার পেলাম আর আরেকটা হচ্ছে যেদিন প্রথমবারের মত দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ড্রেস পাঠালাম ।
আগামীর পরিকল্পনা আর তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, যেহেতু এখনো অনলাইন বেজড তাই ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে একটি শোরুম দেওয়ার, জানিনা কবে এই ইচ্ছেটা পূরণ হবে তবে লেগে থাকলে একদিন ইনশাআল্লাহ হবে । নতুন উদ্যোক্তাদের বড় বোন হিসেবে পরামর্শ যে, সবসময় সমানতালে সেল হবে না, প্রথমদিকে এমনও মাস গেছে যে সারা মাসেও ৩/৪ টা অর্ডার পাইনি আবার এমনও সময় গেছে যে এত বেশি অর্ডার যে ১৫ দিন, ২০ দিনের প্রি-অর্ডার নিতে হয়েছিল । তাই ধৈর্য্য, সততা আর কাস্টমারদের কাছে কমিটমেন্ট রাখা গেলে ইনশাআল্লাহ সফলতা একদিন না একদিন ধরা দেবেই ।