৮:২৮ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • দেশের সুগন্ধি চালের ঘ্রাণ বিদেশেও
ads
প্রকাশ : জানুয়ারী ২৩, ২০২২ ৪:৩২ অপরাহ্ন
দেশের সুগন্ধি চালের ঘ্রাণ বিদেশেও
এগ্রিবিজনেস

দেশের মতো আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়ছে সুগন্ধি চালের। কাটারিভোগ, কালিজিরা, চিনিগুঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের চাল যাচ্ছে বিশ্বের ১৩০ টির বেশি দেশে। তবে রপ্তানির তালিকায় এগিয়ে রয়েছে চিনিগুঁড়া চাল। মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশই এই চাল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এসব চালের বড় ক্রেতা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। রপ্তানি অনুমোদন বাড়ালে এবং কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান হলে বড় আকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে। বিশেষ করে সরবরাহ ব্যবস্থা, মোড়কীকরণ ও মান সনদে গুরুত্ব দিলে খুব দ্রুতই বাজার বড় হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের চালে স্বাদ ও মানের কারণেই মূলত এই চাহিদা বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সরেজমিন উইং সূত্রে জানা যায়, সাধারণত দেশে আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধানের আবাদ হলেও বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল সুগন্ধি ধান আউশ ও বোরো মৌসুমেও চাষ করা হচ্ছে। উৎসবপ্রিয় ও ভোজনরসিক বাঙালি সুপ্রাচীনকাল থেকে সাধারণ ধানের পাশাপাশি সুগন্ধি ধানের চাষ করে আসছে। তবে লাভজনক হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধানের বাণিজ্যিক চাষাবাদও শুরু হয়েছে। এতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি সাধারণ চাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে সুগন্ধি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। এর মধ্যে চিনিগুঁড়ার দামই সবচেয়ে বেশি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ৬৬ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন সুগন্ধি ধান উৎপাদন হয়। পরের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয়।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো দাম পাওয়ায় সুগন্ধি ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। ভরা মৌসুমে এক মণ মোটা ধান বিক্রি করে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পাওয়া যায়। বিপরীতে প্রতি বস্তা চিকন সুগন্ধি চালের ধানের দাম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ জন্য কৃষক অধিক লাভের আশায় সুগন্ধি ও চিকন ধানের আবাদ বাড়াচ্ছেন।

গত ১০ বছরে ধারাবাহিকভাবে সুগন্ধি চালের রপ্তানিও বেড়েছে। বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত সুগন্ধি চাল আরব আমিরাত, ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩৬ দেশে রপ্তানি করছে। এসব সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর রপ্তানি করা সুগন্ধি চালের পরিমাণ প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যা ছিল মাত্র ৬৬৩ টন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘দেশের সুগন্ধি চালের চাহিদা বিভিন্ন দেশে বাড়ছে। এর বড় কারণ—এই মানের চাল সাধারণত কোনো দেশেই উৎপাদন হয় না। বিশেষ করে চিনিগুঁড়া চাল। পোলাউ, ফ্রাইডরাইস ও পায়েস-ফিন্নি খেতে দেশের এই চালের কোনো বিকল্প নেই। ’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন ৪০৯ কেজি সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন ৫২৯ কেজিতে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। এ সময় ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘সুগন্ধি চালের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন ৫০০ থেকে এক হাজার টন রপ্তানি হতো। এখন তা ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন হচ্ছে। এই চালের ৯৫ শতাংশ ক্রেতাই বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা। ’

তবে সুগন্ধি চালের রপ্তানি এখনো উন্মুক্ত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানি এখন পর্যন্ত সরকার নিরুৎসাহ করছে। দেশের বাজারের কথা চিন্তা করেই হয়তো এটা করছে। তবে সরকার রপ্তানি অনুমোদন আরো বাড়ালেও দেশে ঘাটতি হবে না। কারণ দেশে চাহিদার তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন উদ্বৃত্ত থাকে প্রতিবছর। নিয়মিত চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বেসরকারি খাতের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান প্রাণ, ইস্পাহানি, স্কয়ারসহ অনেকে রয়েছে এ তালিকায়।

প্রাণ-আরএফএলের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বহির্বিশ্বে সুগন্ধি চালের চাহিদা অনেক। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুসারে দিতে পারি না। গত বছর আমাদের শুধু চাল থেকেই রপ্তানি আয় হয়েছিল আট মিলিয়ন ডলার। চলতি বছর ছয় হাজার টন রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছি। চাহিদা রয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। সরকার চাইলে এই খাত থেকে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি অনুমোদনের সীমা বাড়াতে হবে। ’

বাংলাদেশ ৯টি পণ্য জি-আই বা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ছিল দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও কালিজিরা চাল। জিআই সনদ পওয়ায় দেশীয় ব্র্যান্ড পণ্য হিসেবে বহির্বিশ্বে জায়গা করে নিতে পারবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানা যায়, চালের রপ্তানি বাড়াতে মান সনদ প্রদানকারী চলতি বছর স্থাপনকৃত ব্রির ল্যাবটিকে আইএসও মানের করে গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এটি আইএসও সনদ পাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। এতে ল্যাব কর্তৃক কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট যেকোনো দেশেই গ্রহণযোগ্য হবে।

দেশে ৩২ ধরনের ধানের চাষ হচ্ছে। অতিসুগন্ধি জাতগুলো হলো—কালিজিরা, চিনিগুঁড়া, কাটারিভোগ, তুলসীমালা, বাদশাভোগ, খাসখানী, চিনি আতপ, বাঁশফুল, দূর্বাশাইল, বেগুনবিচি, কালপাখরী ইত্যাদি। হাল্কা সুগন্ধযুক্ত জাতগুলোর মধ্যে কৃষ্ণভোগ, গোবিন্দভোগ, পুনিয়া, কামিনী, জিরাভোগ, চিনিশাইল, সাদাগুঁড়া, মধুমাধব, দুধশাইল উল্লেখযোগ্য।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop