অনাবৃষ্টিতে সাতক্ষীরার আমনে ধ্বস
কৃষি বিভাগ
সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে গেছে সাতক্ষীরা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার আমন ধানের ক্ষেত। বেঁশো পোকা ও মাজরা পোকার আক্রমণে ব্যাহত হয়েছে ফলন।
সাতক্ষীরা খামারবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৮৯ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড ধান তিন মেট্রিক টন, উফসি ২.৭০ মেট্রিক টন ও স্থানীয় এক দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, সাতক্ষীরা সদরের কাশেমপুর, শিবপুর, জগন্নাথপুর, নেবাখালি, পায়রাডাঙা, যোগরাজপুর, দেবনগর, ছাতিয়ানতলা, মুকুন্দপুর, মাঠপাড়া, শাল্যে, মাছখোলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে বৈশাখ মাসের শেষের দিক থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা অধিকাংশ বিলে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে দেরিতে স্বল্প মাত্রার বৃষ্টি হলেও তা ধান চাষের জন্য উপযোগী ছিল না। ফলে অনেকেই শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে বেশি বয়সের ধানের চারা লাগিয়েছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় বা কম বৃষ্টির কারণে ধান গাছ বাড়েনি। কোথাও কোথাও ধান গাছের উচ্চতা এক ফুটেরও কম। শীষে ধান নেই।
আবার যেসব ধান গাছ বড় হয়েছে সেসব ধানের শীষ চিটায় ভর্তি। আবার চিটাতে বা ধানে কালো রং এর মাজরা বা বেঁশো পোকার আক্রমণের দাগ। ধান না হওয়ায় ও গাছের বৃদ্ধি না হওয়ায় কাটা খরচ বাঁচাতে খেতে গরু ও ছাগল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই ধান গাছ কেটে বস্তায় ভরে বাড়িতে গরু ছাগলের খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ধান গাছ তড়িঘড়ি করে কেটে সরিষা চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। গত বছর যে সব জায়গায় জলাবদ্ধতা ছিল না সেসব জায়গায় বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ বস্তা ধান হয়েছে। এবার সেইসব জায়গায় ধান হবে দুই থেকে তিন বস্তা করে। শ্যালো মেশিনের পানির বিল, সার ও কীটনাশকের দোকানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারবেন না কৃষকরা। এমনকি সরকারি প্রণোদনা না পেলে আগামী বছরে কৃষকরা আমন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
একই এলাকার কৃষক মুনসুর আলী ও আজগার আলী জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় তারা কৃষি বিভাগের শরনাপন্ন হয়েছেন। কোন সদুত্তর মেলেনি। বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে চাষ করেছেন। বেশি টাকা দিয়ে সার ও কীটনাশক কিনতে হয়েছে। এরপরও তাদের ১৪ বিঘা জমির মধ্যে আট বিঘা জমিতে একেবারেই ধান নেই। প্রায় শুকনা ধান গাছ কেটে বস্তায় ভরে গরু ছাগলের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। শ্যালো মেশিনের বকেয়া পানির বিল, সার ও কীটনাশকের বকেয়া বিল পরিশোধ করবেন কি করে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
জানতে চাইলে শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার একর আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ও লবণাক্ততার কারণে ৫ থেকে ৬’শ বিঘা জমিতে ধান হয়নি বললেই চলে। কৃষি বিভাগ চাষিদের পাশে না দাঁড়ালে আগামীবার তারা ধান চাষে বিরত থাকতে পারে।
সাতক্ষীরা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন জানান, আমন ধান পুরোপুরি বৃষ্টি নির্ভরশীল। পরিমাণের তুলনায় দেরিতে বৃষ্টি হলেও তা অপ্রতুল। সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, শিবপুর, কাশেমপুর, নেবাখালিসহ কিছু স্থানে সামান্য কিছু জমিতে ধানের ফসল ভালো হয়নি। বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় ও লবণাক্ততা এর মূল কারণ। কৃষি বিভাগ সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করায় অনেককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা গেছে। দ্রুত ধান কেটে আগাম সরিষার চাষের প্রণোদনার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে কৃষকদের। তা ছাড়া ওইসব জমিতে ইরি ও সবজি চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। ঢাকা টাইমস