গ্রীষ্মের দাবদাহে মুরগির হিটস্ট্রোকসহ অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধে করণীয়
পোলট্রি
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। গরমের প্রভাব পড়েছে গবাদি প্রাণিতেও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুরগির স্ট্রোক করে মারা যাবার খবর প্রতিনিয়তই পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ন্ত ব্রয়লার বেশি স্ট্রোক করছে আর লেয়ার মুরগিতে কমে যাচ্ছে ডিমের উৎপাদন। তীব্র দাবদাহে গত ১০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির দাবি, চলমান তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোকের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে, যার আনুমানিক ক্ষতি দিনে ২০ কোটি টাকা। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন কমেছে ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
গরমের বিরূপ প্রভাব থেকে মুরগিকে বাচাতে খামারিরা ফার্ম ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন আনছে। ফার্মে অতিরিক্ত ফ্যানের ব্যবস্থা, মুরগির গায়ে পানি ছিটানো, দিনের বেলা খাবার বন্ধ রাখা, খাবার পানিতে স্ট্রোক প্রতিরোধে ঔষধ ব্যবহার করা, ঘরের চালে চট দিয়ে তার উপর পানি ছিটানো সহ খামার ব্যবস্থাপনায় যত ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব সবই করছেন খামারিরা কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না।
পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ ডা. খালিদ হোসাইন বলেন – গরমে মুরগির খামার ব্যবস্থাপনা সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই সময়ে মুরগির হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে খামার ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। খামারে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করা, শেড ঠান্ডা রাখা, দুপুর বেলা খাবার বন্ধ রাখার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আবার টিনের চাল যেন উপ্তত্ত না হয় সেজন্য পাটের ব্যাগ দিয়ে তাতে নিয়মিত পানি স্প্রে করে শেডের ভিতর ঠান্ডা রাখা যেতে পারে। যেসব ফার্ম সিমেন্ট শীট ব্যবহার করে তাদের অবশ্য এই ধরনের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন খুব বেশি প্রয়োজন হয় না।
গরমে সাধারণ ঢেউটিন ব্যবহারকারী ফার্ম এবং আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারকারী ফার্মের মাঝে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আনোয়ারের সিমেন্ট শীট ব্যবহারকারী ফার্মে খামার ব্যবস্থাপনায় তুলনামূলক কম পরিবর্তন আনতে হচ্ছে, তুলনামূলকভাবে অনেক কম মুরগি মারা যাচ্ছে যা এগ্রিভিউ এর সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের লেয়ার খামারী তাইফুল জানান যে তার খামারে বিভিন্ন বয়সের ১৪ হাজার লেয়ার মুরগি আছে। গরমের প্রচন্ড তাপে তার খামার ব্যবস্থাপনায় খুব কমই পরিবর্তন আনতে হয়েছে। মুরগির দৈনিক খাবার গ্রহন কিছুটা কমেছে তবে তা অন্যান্যদের তুলনায় অনেক কম। ফলে ডিমের প্রোডাকশনে খুব একটা হেরফের হয়নি, তিনি আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহার করে এই তীব্র গরমেও সন্তোষজনক ফলাফল পাচ্ছেন।
কেরানিগঞ্জের খামারি সোহাগ পোল্ট্রি জানায় যে তার বিভিন্ন বয়সের ব্রয়লার রয়েছে। তার এলাকায় গরমে প্রায় প্রতিটি খামারের বাড়ন্ত মুরগি স্ট্রোক করছে। খামারের ব্যবস্থাপনা ভেদে ২০ থেকে ৩০ দিন বয়সী মুরগির দৈনিক স্ট্রোক করে মর্টালিটি প্রায় ৫-১০ শতাংশ হলেও তার ফার্মে খুব বেশি মুরগি মারা যাচ্ছে না, আনোয়ারের সিমেন্ট শীট ব্যবহারের ফলে ঘরের তাপমাত্রা মোটামুটি নিয়ন্ত্রনেই থাকে, ফলে তীব্র গরমের কারণে খামার ব্যবস্থাপনায় খুব বেশি পরিবর্তন আনতে হয় না।
টাংগাইল এর ঘাটাইলের এ আর পোল্ট্রি কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ রুহুল আমীন বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আনোয়র সিমেন্ট শীট ব্যবহার করি, আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না, সিমেন্ট শীট টেকসই তাই পরিবির্তনও করতে হয় না কয়দিন পর পর।
ধামরাই উপজেলার ভাই ভাই পোল্ট্রির স্বত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেনের ৭ টি বড় বড় শেড রয়েছে, সবগুলাতেই আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহার করা। এই তীব্র গরমেও তার মুরগির প্রোডাকশন ভালো আছে, মর্টালিটি খুব একটা নেই বললেই চলে।