১০:২১ পূর্বাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • নোয়াখালীতে বন্ধ ১৩০০ পোল্ট্রি খামার, ক্ষতি মাসে ২০ কোটি টাকা
ads
প্রকাশ : এপ্রিল ২৬, ২০২১ ৮:৫৫ অপরাহ্ন
নোয়াখালীতে বন্ধ ১৩০০ পোল্ট্রি খামার, ক্ষতি মাসে ২০ কোটি টাকা
পোলট্রি

আল মামুন একজন পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ৩২ হাজার মুরগি নিয়ে পোল্ট্রি খামার চালু করেন। পরবর্তীতে ব্যবসায় সফলতা আসলে ঋণ নিয়ে ৯টি খামার গড়ে তুলেন। ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালী-এ তিন প্রজাতির প্রায় ৫৫ হাজার মুরগি ছিল তার খামারে।

২০১৯ সাল থেকে তার খামারে রোগের প্রাদুর্ভাভ শুরু হয়। রাণীক্ষেত, গামবোরা, ককসিডিওসিস, পুলোরাম, ঠান্ডাজনিত ও বার্ডফ্লুসহ বিভিন্ন রোগে মরতে থাকে খামারের মুরগি। বর্তমানে তার ৮টি খামারই বন্ধ। একই অবস্থা জেলার অনেক খামারির। জেলা পোল্ট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে বন্ধ হয়েছে অন্তত একহাজার ৩০০ মুরগির খামার। আর তাতে প্রতিমাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার মুরগি ও ডিম উৎপাদন বন্ধ হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই ব্যাংক ঋণে জর্জিরত। খামারগুলো বন্ধ হওয়ায় মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তেমনি কর্মচারিদের কাজ না থাকায় জেলায় বেকারত্বের হারও বাড়ছে। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের মাংসের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগই আসে পোল্ট্রি খামারে উৎপাদিত মুরগি থেকে।

ব্রয়লারসহ কিছু মুরগি মাংস ও লেয়ার জাতের মুরগি ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। আবার সোনালী প্রজাতি মাংস ও ডিম—দুটোই উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয়। ৭ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে একটি ব্রয়লার মুরগির ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি হয়ে থাকে। এরপর তা বাজারজাত করা যায়। পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডিম দেয় লেয়ার মুরগি। একবারে তারা ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে। মুরগির জাত হিসেবে ডিমের রং লাল ও সাদা হয়।

জেলা পোল্ট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২০ সালের শেষের দিকে জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী ছিল। এগুলো থেকে প্রতিমাসে ৬০০ টন মুরগি ও ১ কোটি ডিম উৎপাদন হত। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগে খামারগুলোর লাখ লাখ মুরগি মারা যায়। মুরগির খাদ্য, ওষুধ ক্রয়ের একটি অংশ সরকারি রাজস্বে যোগ হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

উপজেলার গাংচিল গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত খামারি আল মামুন বলেন, গত ২০১৯ সালের জুনে রাণীক্ষেত রোগে তার ৯টি খামারের ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার মূল্যের ১৮ হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা যায়। দ্বিতীয় ধাপে ২০২০ সালে জানুয়ারিতে বার্ডফ্লু রোগে মারা যায় ৩৭ হাজার মুরগি। যার বাজার মূল্য ছিল ২ কোটি ৪লাখ টাকা। নিরুপায় হয়ে ওই বছরের ডিসেম্বরে খামারগুলো বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে দিশেহার হয়ে পড়েছেন। এতকিছুর পরও সরকার ঘোষিত কোন প্রণোদনা পাননি বলে অভিযোগ করেন মামুন।

কোম্পানীগঞ্জের চরযাত্রা গ্রামের খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার দুটি খামারে তিনটি ঘরে প্রায় তিন হাজার মুরগি ছিল। কিন্তু মুরগি বাচ্চা, ওষুধ, খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, যাতায়ত ব্যবস্থা ও খামার পরিচালনায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত তিন মাস আগে খামার দুটি বন্ধ করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এবং তার খামারের ৪ জন কর্মচারি বেকার হয়ে গেছেন।

চরএলাহী ইউনিয়নের খামারি আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের বর্তমানে বেহাল অবস্থা। দেশের পরিস্থিতি, বাজারে ওষুধ ও খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমার তিনটি খামার দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ হয়ে আছে। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ায় বর্তমানে নতুন করে শুরু করার সাহসও পাচ্ছি না।

জেলা পোল্ট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন জানান, জেলার বর্তমান পোল্ট্রি খামারিরা একটা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। এ সিন্ডিকেট কোন প্রকার পূর্বঘোষণা ছাড়াই মুরগির বাচ্চা, খাদ্য ও ওষুধের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। সরকারি কোন সংস্থার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা নিজেদের মতো করে কয়েক মাস পরপর এসব করে যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম আকন্দ জানান, করোনাকালীন ও তার আগে বিভিন্ন রোগে মুরগি মারা যাওয়া কিছু খামারি তাদের খামারগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যে কেউ কেউ আবার নতুন করে চালুও করছেন। জেলার ক্ষতিগ্রস্থ ৭৭৮ জন খামারি প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে গত মার্চে ৭৩৬ জনকে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ও তালিকার বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত যেসব খামারি রয়েছেন উপজেলা পর্যায়ে তাদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মুরগির বাচ্চা, ওষুধ ও খাদ্য মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে এ কর্মকর্তা বলেন, বাচ্চা, ওষুধ ও খাদ্য বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোন হস্তক্ষেপ নেই। তবে খামারিদের সুবিধার্থে এসবের বাজার একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখার উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সূত্রঃ সময়  নিউজ টিভি

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop