বগুড়ার শেরপুরে শৌখিন পাখির বাণিজ্যিক খামার
প্রাণিসম্পদ
ছোটবেলা থেকেই পাখি পালনের শখ ছিল হুমায়ুন কবিরের। সেই শখ থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি শুরু করেন পাখি পালন। এমনকি শিক্ষাজীবন শেষ হলেও চাকরির পিছে না ঘুরে পাখির খামার গড়ার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী শিক্ষক বাবার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতেই শৌখিন খামার বানিয়ে দুই জোড়া বাজরিগার ও কিছু ফিঞ্চ পাখি কেনেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হুমায়ুন কবিরকে।
ধীরে ধীরে শৌখিন পাখির খামারটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়। বর্তমানে তার খামারে সহস্রাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। শখের এই খামার থেকেই সব খরচ বাদে প্রতি মাসে আয় করছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তার খামার দেখে এবং পরামর্শ নিয়ে অনেকেই পাখির বাণিজ্যিক খামার গড়ছেন। তাই পাখির রাজ্যে হুমায়ুন কবিরের নাম বার্ডস কিং হিমু। বিশেষ করে ইউটিউব ও অনলাইন জগতে এই নামেই তাকে চেনেন সবাই।
সরেজমিনে সাধুবাড়ী গ্রামে গিয়ে হুমায়ুন কবিরের পাখির খামারের কথা বলতেই একবাক্যে সবাই চেনেন। বাড়িতে ঢুকতেই পাখির কলরব শোনা যাচ্ছিল। তখন হুমায়ুন কবির পাখিদের পরিচর্যা করছিলেন। বাড়ির মধ্যে একাধিক বড় বড় শেডে বিশাল পাখির খামার। সেখানে লাভবার্ড, বাজরিগার, ককাটেল, জাভা, বিদেশি ঘুঘু, ফিঞ্চ, ডায়মন্ড, কবুতরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ হাজার পাখি রয়েছে। ২৬ বছর বয়সি যুবক হুমায়ুন কবির বলেন, বিগত ২০১০ সালে তার শখের পাখির খামারটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়। এসব পাখি তিনি অনলাইন ও মুঠোফোনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিক্রি করে থাকে।
হুমায়ুনের সাফল্য দেখে এলাকার আরো অন্তত দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ বাণিজ্যিক পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। সরকারি-বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শৌখিন পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। অবসর সময় কাটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছেন। তাদেরই এক জনের নাম মাহফুজার রহমান। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাসার ছাদেই গড়ে তুলেছেন সৌখিন পাখির খামার। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সেটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়েছে। তার খামারেও রয়েছে অন্তত ১৫ প্রজাতির বিভিন্ন বিদেশি পাখি। প্রতি মাসে নব্বই থেকে ১ লাখ টাকার পাখি বিক্রি করে থাকেন। তিনিও মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন ঐ খামার থেকে।
একইভাবে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকোরকোলা গ্রামের মাহবুব হোসেন, পৌরশহরের স্যান্যালপাড়ার স্কুলছাত্র লাবিব হাসান, বিকাল বাজারের কলেজছাত্র আবু রায়হান রনি, খন্দকারটোলার ফাহিমসহ আরো অনেকেই পাখির খামার গড়ে ইতিমধ্যে সফলতা পেয়েছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান এই প্রসঙ্গে বলেন, এই উপজেলায় শৌখিন পাখির খামার গড়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেকার তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এই খামার গড়ে তুলেছেন। এটি একটি লাভজনক খাত। তাই তার দপ্তরের থেকে এসব পাখি পালনে উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণসহ কারিগরি সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
সেই সঙ্গে খামারের পাখিরা অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ওষুধও বিনা মূল্যে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় বলে জানান এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।