১:৪০ অপরাহ্ন

শুক্রবার, ১১ এপ্রিল , ২০২৫
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • মাশরুম চাষে সফল তরুণ উদ্যোক্তা সাদ্দাম
ads
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২৫ ১২:০৬ অপরাহ্ন
মাশরুম চাষে সফল তরুণ উদ্যোক্তা সাদ্দাম
কৃষি বিভাগ

মাশরুম চাষে সফল সাতক্ষীরার তরুণ উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন। ২০১৮ সালে যখন স্বল্প পরিসরে মাত্র ৪ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে যখন তিনি মাশরুম চাষ শুরু করনে তখন তার প্রতিবেশীরা তাকে বলতেন পাগল। টাকা পয়সা খরচ করে ব্যাঙের ছাতা চাষ করছে। মাত্র ৬ বছর পার হতে না হতেই তিনি এখন একজন সফল মাশরুম ব্যবসায়ী।

তার মাশরুম ফার্মে বর্তমানে তিনি প্রায় ৭ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। সেখানে সব সময় কাজ করছেন ৬-৭ জন শ্রমিক। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই এটি চাষ করারও উদ্যোগও নিয়েছেন। তার এই মাশরুম দিয়ে তৈরি হচ্ছে মজাদার চপ, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের খাবার। ব্যতিক্রমী এ খাবার খেতে দুরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টিবিদরা নিয়মিত চাষের এই মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কৃষি বিভাগ বলছে সবজির বিকল্প হিসাবে মাশরুম ব্যবহার করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ এই মাশরুমের পরিচিতি বাড়াতে পারলে এটি সাদা সোনা হিসেবে গণ্যহবে বলে মনে করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।

জেলা শহরের পাকুখরালী কাঠালতলা গ্রামের মো. আব্দুল হাকিম ও নাছিমা খাতুন দম্পতির ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (৩২)।

মাশরুম চাষী সাদ্দাম হোসেন জানান, ২০১৮ সালে তৎকালীন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর তার মাধ্যমে ঢাকার সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট থেকে মাত্র ৪ হাজার টাকা খরচ করে ২০০ পিস মাশরুমের বীজ এনে সেটি নিয়ে পরিচর্যা শুরু করি। দিনে দুই থেকে তিন বার পানি দেয়া ছাড়া বাড়তি তেমন কোন কাজ করা লাগেনা এটি চাষে। এক সপ্তাহ’র পর থেকে ওই বীজ থেকে মাশরুম উৎপাদন শুরু হয়। এরপর তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি নিজেই পরবর্তী বছর থেকে বীজও উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে তার এই মাশরুম ফার্মে তার নিজের উৎপাদিত ৪ হাজার ৫০০ পিস বীজ রয়েছে। তিনি সেখানে বর্তমানে ৭ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি এসময় বীজ উৎপাদন সম্পর্কে জানান, প্রথমে কাঠের গুড়া ও ধানের তুস ভালোভাবে মিশিয়ে জীবানু মুক্ত করে ৫’শ গ্রাম বা ১কেজি পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে চা চামচের এক চামচ পরিমান মাশরুমের গুড়ো প্রদান করা হয়। এরপর দিনে ২-৩বার পানি দেয়াসহ এটি ঠিকমত পরিচর্যা করার পর ৩০ দিন পর এ প্যাকেটটি সাদা আকার ধারন করে বীজ উৎপাদন শুরু হয়। আর এই বীজ তৈরি হওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে মাশরুম সংগ্রহ শুরু করা হয়।

তিনি বলেন, যখন মাশরুম চাষ শুরু করি তখন আমাকে আমার প্রতিবেশীরা পাগল বলতেন। আমি  টাকা পয়সা খরচ করে কেন ব্যাঙের ছাতা চাষ করছি। এমন নানা প্রশ্ন আর নানা কথা আমাকে শুনতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকে মাশরুম চাষ করে মাশরুম জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাধারন মানুষের মাঝে বিনা পয়সায় খাওয়ায়ে মার্কেট তৈরী করতে হয়েছে। বর্তমানে এই মাশরুম শহরের বড় বড় শপিং সেন্টার গুলোতে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি মাশরুম ৪ শ’ টাকায় বিক্রি করছি। সব খরচ বাদ দিয়ে এতে আমার লাভ হয় দেড় থেকে দু’শো টাকা। মাশরুম উৎপাদনের ফার্ম ছাড়াও আমার দুটি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

এতে কাজ করছেন ৬-৭ জন শ্রমিক। শহরের দুটি স্থানে আমার ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে মাশরুম ছাড়াও মাশরুমের তৈরী মজাদার চপ, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের খাবারও বিক্রি হচ্ছে। ব্যতিক্রমী এ খাবার খেতে দুরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। এটি অত্যান্ত পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টিবিদরা নিয়মিত চাষের এই মাশরুম খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আমার দেখাদেখি কেউ কেউ এটি চাষ করছেন, আবার অনেকেই এটি চাষ করার উদ্যোগও নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মাশরুম ও মাশরুমের বীজ তৈরীতে আমার মাসে খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। আর এ থেকে সব খরচ বাদে মাসে আমার ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মচারী হাবিবুল্লাহ জানান, এখানে সারা দিন কাজ করে ৫০০ টাকা মজুরি পাই। তা দিয়ে আমি আমার বাবা ও মাকে নিয়ে ভালো ভাবেই জীবন যাপন করতে পারি। এখানে আমি মাশরুম দিয়ে চপ, পাকুড়া, নুডুলস, ফুসকা, ছোলা, চটপটিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করে থাকি। মাশরুমের এই চপ খেতে এখানে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এটি খেতেও খুব সুস্বাদু। সুস্বাদু হওয়ায় অল্প দিনেই মাশরুমের চপ সাতক্ষীরা শহরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল ইসলাম মনির জানান, মাশরুম চাষ সম্প্রসারনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র হ্রাসকরন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একজন করে উদোক্তা তৈরী করা হচ্ছে।

তাদের ১০ দিনের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষনের পাশাপশি কারিগরি সাপোর্টও দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মাশরুমে যে গুনাগুন সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মাশরুম সম্পূর্ণ একটি অর্গানিক খাবার। মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সবজির বিকল্প হিসাবে এটি ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চাষাবাদ এবং বিক্রয় বাড়াতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, খুব অল্প দিনেই সাতক্ষীরা শহরের পারকুখরালী কাঠালতলা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন মাশরুম চাষাবাদে সফলতা অর্জন করেছেন। পরিচিতি লাভ করেছেন একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে।

 

(বাসস)

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop