হাওড় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে অতিথি পাখি
প্রাণ ও প্রকৃতি
শীতের শুরুতেই কিশোরগঞ্জের হাওড়গুলোতে একসময় ঝাঁক বেঁধে আসত দেশীয় ও অতিথি পাখি। ওদের শব্দে মুখরিত হতো হাওড় পাড়, আশপাশের মানুষের ঘুম ভাঙত সেই মধুর সুরে। ওরা দল বেঁধে দাপিয়ে বেড়াত এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে। পাখিরা উড়াল দিলেই শুনতে পাওয়া যেত সুমধুর শব্দ। কিন্তু সেই শব্দ কয়েক বছর ধরে আর শোনা যায় না। হাওড়ের লোকজনের এখন আর ঘুম ভাঙে না পাখির কিচিরমিচির ডাকে।
এক সময় কিশোরগঞ্জের হাওড়গুলোকে দেশীয় পাখির রাজ্য বলা হতো। কিন্তু একদিকে, গ্রামের ঘর-বাড়ি আধুনিকায়নের কারণে বিনষ্ট হচ্ছে দেশীয় ও অতিথি পাখির আশ্রয়। অন্যদিকে চাষাবাদ করতে জমিতে ব্যবহার হচ্ছে কীটনাশক। ফলে কিশোরগঞ্জের জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলার হাওড়গুলোতে কমছে পাখি।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আগেও মাঠ-ঘাট ও চাষাবাদের জমিতে ছিল দেশীয় ও অতিথি পাখিদের বিচরণ। ঝাঁক বেঁধে খাদ্যের সন্ধানে ব্যস্ত থাকত পাখিরা। ফসলি জমিগুলোতে এখন পাখিদের সচরাচর দেখা যায় না। কয়েক বছর আগেও গ্রাম ও হাওড়গুলোতে টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালিহাঁস, কোকিল, বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুইসহ বিভিন্ন পাখি দেখা যেত। এখন আর তেমন দেখা যায় না।
ইটনা উপজেলার বড়হাটি গ্রামের আবু কালাম জানান, হাওড়ে আগে পাখিদের প্রচুর প্রাকৃতিক খাদ্য পাওয়া যেত। কিন্তু খাদ্য সংকটের কারণেই হাওড়ে এখন আর আগের মতো পাখি দেখা যায় না। একই উপজেলা আরেক কৃষক মোহসীন মিয়া জানান, আগে প্রচুর পাখিরা ঝাঁক বেঁধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে যেত। এখন আর ওদের দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, হাওড়ে এখনো শীত মৌসুমে অতিথি পাখি আসে, তবে সেই পাখিগুলো শিকারিরা শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দেয়।
অষ্টগ্রামের বড় হাওড়ের কৃষক মফিজ মিয়া বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন প্রচুর পাখি ধরেছি, বর্তমানে সেই পাখি আর চোখেই দেখা যায় না। একই উপজেলার বাংগালপাড়া ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের রমিজ উদ্দিন জানান, এই হাওড়কে এক সময় পাখিদের হাওড় বলা হতো, বর্তমানের কথা আর কি বলব তিনি আরও বলেন, এক সময় পাখিদের কিচিরমিচির মুখরিত শব্দে ঘুম ভাঙত আর এখন আর সেই পাখি নেই।
এ ব্যাপারে পরিবেশবিদ কামরুল হাসান বাবু বলেন, হাওড়ে অতিথি পাখির বিচরণের জন্য অভয়ারণ্যে তৈরি করা যায়নি, পাখির আবাসস্থল ও জীবন রক্ষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মানুষকে আরও সচেতন করা গেলেই হাওড় হবে পাখির নিরাপদ আবাস।