পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, তবে হতাশ চাষিরা
এগ্রিবিজনেস
পাবনায় এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ চাষি পেঁয়াজ ঘরে তুলেছেন। তবে পেঁয়াজের দাম আশানুরূপ না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। এতে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছরও জেলার চাষিরা লাভের আশায় অনাবাদী জমি আবাদের উপযুক্ত করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে বাজারে দাম কম থাকায় তাদের লোকসান গুনতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ মৌসুমে পাবনায় ৯ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ দশমিক ১১ লাখ মেট্রিক টন। আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। তবে সব কৃষকের পেঁয়াজ ঘরে না তোলায় উৎপাদনের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করতে পারছে না কৃষি অফিস।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চরাঞ্চল বা উঁচু জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ও জানুয়ারির শুরুতে জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে সেগুলো পরিপাটি করে জেলা শহর বা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। চারা পেঁয়াজ উঠার তিন মাস আগে বাজার সামাল দেয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ।
সুজানগর পৌরহাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে এসেছেন খয়রান গ্রামের পেঁয়াজচাষি রফিক হোসেন। তিনি জানান, যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাতে কিছুটা লোকসান গুনতে হচ্ছে। মণপ্রতি সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারলে অন্তত খরচের টাকা উঠত।
সদরের সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাছেন আলী জানান, এ জেলার পেঁয়াজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার না থাকায় বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এ কারণে কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলেই স্থানীয় হাট-বাজারে দ্রুত বিক্রি করে দেন।
সদরের পুষ্পপাড়া হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা সাইদুল ইসলাম, রজব আলীসহ অনেকে বলেন, গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ভালো ছিল। এই আশায় এবার পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। হাটে পেঁয়াজ এনে হতাশ। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার দর কমিয়ে পেঁয়াজ কিনে ঢাকার বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করছে।
ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, গত বছর এ সময় এক মণ মূলকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কিন্তু এ বছর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়। এতে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। মূলকাটা পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। তাই আশানুরূপ দাম না পেলেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর জেলায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলায় এবার ৯ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ১১ লাখ মেট্রিক টন মূলকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় দাম কম হলেও কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে না। জেলায় একটি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা যায় কি না সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।