১২:০৪ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : অগাস্ট ২০, ২০২৪ ৬:৩২ অপরাহ্ন
‘মহানন্দা স্মার্ট সিস্টেম’-নিরাপদ মাছ উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশে নতুন দিগন্ত
মৎস্য

নিরাপদ খাদ্য মানুষের অধিকার। উৎপাদিত মাছ ও চিংড়ি খেয়ে কেউ অসুস্থ হবে না- এ প্রত্যাশা সবার। তাছাড়া মাছ ও চিংড়ি হলো আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্য। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানসম্পন্ন ও নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু চাষ পর্যায়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত, অননুমোদিত এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার উৎপাদিত মাছ ও চিংড়ির গুণগত মান বিনষ্ট ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ করে তোলে।খাদ্য শৃঙ্খলের সকল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আন্তক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে শেষতক ভোক্তাবৃন্দ পর্যন্ত সকল স্তরেই খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা জরুরি। কেবল নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার মাধ্যমেই স্বাস্থ খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় করা সম্ভব। অথচ জেনে শুনে অনিরাপদ খাবার খেয়ে এ জাতি নিশ্চিত পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাছ চাষের ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। এতে প্রাকৃতিক-জলজ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।মাছ ও মানুষের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি ধ্বংসের মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র্য।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২২ এর বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে, চাষের মাছে অবস্থান ৫ম । ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪৯.১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা ২০০৭-০৮ অর্থবছরের মোট উৎপাদন ২৫ দশমিক ৬৩ লাখ টনের চেয়ে ৮৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।
তবে মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকলেও রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে পিছিয়ে বাংলাদেশ। রপ্তানিতে এখন অবস্থান ২১তম। এক যুগে মাছের উৎপাদন ৮৫ শতাংশ বাড়লেও দাম নাগালের বাইরে। মাছের খাবার খরচ মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগের বেশি হওয়ায় এই শিল্পের লাভ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই অল্প খরচে অধিক উৎপাদন করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন মাছ চাষিরা।এ জন্য মাছ চাষে রাসায়নিক এবং এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিকাশ ঘটছে। যা আমাদের জলজ পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ফলে এক সময় এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণু আর দমন করা যায় না। এ ছাড়া এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে তাৎক্ষণিক সমাধান হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা মানবদেহে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ জন্যই রোগ দমনে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রোবায়োটিকের ব্যবহার অধিক যৌক্তিক এবং স্থায়িত্বশীল বলে বিবেচিত হচ্ছে এবং এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, রপ্তানি বাধা দূর করতে জোর দেয়া হচ্ছে নিরাপদ মাছ উৎপাদনে।
দেশে বাণিজ্যিকভাবে সর্বপ্রথম প্রোবায়োটিক ভিত্তিক মাছ চাষ শুরু করেছে ইম্প্রেস গ্রুপের (আই এন সি টি এল) প্রতিষ্ঠান মহানন্দা এগ্রিকালচার এন্ড ফিসারিজ লিমিটেড, হবিগঞ্জ। মাৎস্য চাষের অত্যাধুনিক পদ্ধতিকে তারা ‘মহানন্দা স্মার্ট সিস্টেম ‘ বলে আখ্যায়িত করছেন যা একটি এডভান্সড বায়োলোজিকাল একোয়াকালচার সিস্টেম, সম্পূর্ণ প্রোবায়োটিক ভিত্তিক। প্রোবায়োটিক হচ্ছে উপকারী অণুজীব যাদের উপস্থিতিতে ক্ষতিকর অণুজীব দমন করা যায় এবং এদের ক্ষতি করার ক্ষমতাও কমানো যায়। প্রোবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে ব্যাসিলাস গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া, ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া, নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার সমাহার। জলজ পরিবেশে প্রোবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, চাষকৃত প্রজাতির অন্ত্রে উপকারী অণুজীব বংশবিস্তার করে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন উৎপাদনে সহায়তা করে, ক্ষতিকর জীবাণুর অতিরিক্ত বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধে জৈবিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, বৃদ্ধি সহায়ক হিসেবে কাজ করে, হজমে সাহায্য করে, প্রজননের সাহায্য করে, পানির গুণগত মান উন্নত করে, প্রোটিনের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে। এ জন্য রোগ দমনে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রোবায়োটিকের ব্যবহার অধিক যৌক্তিক এবং স্থায়িত্বশীল বলে বিবেচিত হচ্ছে।
এক নজরে নজরে মহানন্দা এগ্রিকালচার এন্ড ফিশারিজ লিমিটেড:
আয়তন ৫৭.৭৬ একর ,পুকুরের সংখ্যা ৩০ টি ,প্রতিটির গড় আয়তন ১.৫০একর, চাষকৃত পুকরের সংখ্যা ২৬ টি, ব্রড পালন ও নার্সারি পুকুরের সংখ্যা ৪ টি । চাষকৃত মৎস্য প্রজাতি: পাংগাস, কৈ, তেলাপিয়া, কার্প, মলা । বাৎসরিক (২০২৩-২৪) মৎস্য উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০০ মেট্রিকটন ।
উল্লেখ্য, শুরুতে এই ফার্মে প্রচলিত পদ্ধতিতে পাংগাস, তেলাপিয়া উৎপাদন করা হতো যে খানে গত বছরে উৎপাদন ছিল ৩৫০ মেট্রিক টন। ২০২৩ সাল থেকে খামারে রাসায়সিক ও এন্টিবায়োটিক মুক্ত মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়, যার ফলে অতীতের সময়ের চেয়ে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ সম্ভব হচ্ছে । প্রোবায়োটিক এর মাধ্যমে রাসায়নিক ও এন্টিবায়োটিক মুক্ত চিংড়ি ও মাছ চাষ ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের ব্যবহারিত একটি বহুল প্রচলিত প্রযুক্তি। মুলত, সেই প্রযুক্তির আদলেই ‘মহানন্দা স্মার্ট সিস্টেম’ এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। খামারে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রোবায়োটিক এর মাঝে বায়োচিপ ,বায়োএকোয়া এবং পাওয়ার ফিড অন্যতম।
ফার্ম ফিসারিজ এক্সিকিউটিভ কৃষিবিদ মোহা: আতিক আশহাব জানিয়েছেন, এডভান্সড বায়োলকিজাল পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য তিনি থাইল্যান্ড থেকে আনত ট্রেইনার এর মাধ্যমে ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়েছেন এবং এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুফল তারা নিজেরাও ভোগ করছেন।
ফার্ম ম্যানেজার কৃষিবিদ ড. বদরুজ্জোহা সরকার জানিয়েছেন তাদের উদ্ভাবিত মাছ চাষের এই পদ্ধতি বাংলাদেশের মাছ চাষের জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট অঞ্চলের বেশ কিছু খামারিদের কাছে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের কলাকৌশল ইতোমধ্যে ছড়িয়েছে বলে জানান তিনি।
ফার্ম হেড অব অপারেশন কৃষিবিদ জনাব মো: রফিকুল ইসলাম আকন্দ জানিয়েছেন, কেমিক্যাল ও এন্টিবায়োটিক ছাড়াও যে মাছ চাষ সম্ভব তা আমরা প্রমান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং অনেকাংশেই সফল।সকলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভোক্তার খাবারের প্লেটে নিরাপদ মাছ পৌছানো সম্ভব।এই ক্ষেত্রে উৎপাদনকারি,মাছ ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত সকলের অংশীদারিত্ব ও সচেতনতা প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জুন ৩০, ২০২৪ ৯:১৪ পূর্বাহ্ন
বাকৃবিতে সামুদ্রিক মাছের ভেল্যু-চেইন বিষয়ক মৎস্য খামারী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
মৎস্য

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনুঃ ‘টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার ও ভেল্যু-চেইন জোরদারের মাধ্যমে মৎস্য পণ্যের পোস্ট হারভেস্ট ক্ষতি কমিয়ে উপক‚লীয় অঞ্চলের আয় বৃদ্ধি’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ মৎস্য খামারী, জেলে, উদ্যোক্তা ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে সামুদ্রিক মাছের ভেল্যু-চেইন বিশেষ করে কাচা মাছ থেকে ফিস পাউডার, ফিস স্মোকিং, ও ফিস ক্যানিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) অধীনে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (এসসিএমএফপি) এর অর্থায়নে পরিচালিত কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য বিজ্ঞানী প্রফেসর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, একোয়াকালচার বিভাগ, বাকৃবি এবং প্রফেসর ড. চয়ন গোস্বামী, সহযোগী পরিচালক, বাউরেস। অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন প্রধান গবেষক সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রকল্প ও সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (এসজি), বাউরেস এবং কৃষি বিজ্ঞানী ড. পরেশ কুমার শর্মা। প্রশিক্ষণ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান গবেষক প্রকল্পটির বিষদ বিবরণসহ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মৎস্য বিজ্ঞানী জনাব সাজ্জাদ হোসেন, পিএইচডি ফেলো (ডিওএফ প্রতিনীধি) তার বক্তব্যে বলেন সামুদ্রিক মাছ থেকে ফিস পাউডার, ফিস স্মোকিং ও ফিস ক্যানিং করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা প্রসংসার দাবিদার এ ধরনের প্রকল্প খুবই দরকার। তিনি প্রধান গবেষকের কার্যক্রমকে স্বাগত জানান। প্রফেসর মোঃ সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, ফিস ক্যানিং করার সময় ফুড সেফটির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মোঃ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ভেল্যু-চেইনের গুরুত্বারোপ করেন এবং প্রশিক্ষণের শুভ উদ্ভোধন করেছেন।
সংক্ষিপ্ত উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুল প্রশিক্ষনটি পরিচালনা করেন প্রধান গবেষক ড. পরেশ কুমার শর্মা এবং তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন খামার ব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় মৎস্য বিজ্ঞানী ড. আবু তাহের । প্রধার গবেষক খামারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাছের স্মোকিং হলো ইলেকট্রিক ওভেন বা কাঠ, বা অন্যান্য উপকরণ পোড়ানো ধৈাঁয়ার সংস্পর্শে এনে মাছ সংরক্ষণ করার ঐতিহ্যবাহী একটি পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় মাছের ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করে শেলফ লাইফকে প্রসারিত করা হয়। প্রক্রিয়াটির একটি স্বতন্ত্র ধৈাঁয়াটে গন্ধও আছে যা অনেক রন্ধন শিল্পের অত্যন্ত মূল্যবান গুরুত্ব বহন করে। এটির মাধ্যমে মাছের পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ ও খাওয়ার মাধ্যমে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে। ফিস ক্যানিং হলো মাছকে বায়ুরোধী পাত্রে সীলমোহর এবং তাপপ্রয়োগের মাধমে মাছ সংরক্ষণ করার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় মাছের ব্যাক্টোরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবকে ধ্বংস করে মাছকে হিমায়ন ছাড়াই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছের পুষ্টিমান অপরিবর্তিত রেখে নিরাপদ, দীর্ঘাস্থায়ী খাদ্যপণ্য যা, পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন ফিস প্রোটিন পাউডার হলো কাঁচা মাছ থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরীকৃত পাউডার। তিনি আরও বলেন, এটি নিরাপদ পুষ্টি, সুস্বাদু, উচ্চ-মান প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যপণ্য যা, শিশু ও বয়স্ক লোকদের জন্য বিশেষ উপযোগী। এটি সরাসরি (জবধফু ঃড় বধঃ) ভক্ষণযোগ্য। এটিতে অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড, ওমেড়া-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এবং খনিজ লবন, উচ্চ-মানের উপাদান রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে এটি পচনশীল পন্যের মুল্য সংযোজনকারী (ভ্যালু-চেইন), পোষ্ট-হারভেস্ট ক্ষতি হ্রাস, নতুন বাজার সৃষ্টির, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভুমিকা পালন করতে সহায়তা করে। এটি উদ্যোক্তাদের লাভ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে, খাদ্যের অবচয় হ্রাস করতে সহজে পরিবহনযোগ্য ফিস প্রোটিন পাউডার হলো দীর্ঘ শেলফ লাইফ খাদ্যপণ্য। এটি বিভিন্ন খাবার এবং পানীয়র সাথে যুক্ত তরে বুস্টার প্রোটিন হিসেবে খাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় এটি রাখলে, দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পুরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভুমিকা পালন করে। মানব স্বাস্থ্য সুস্থ ও সবল রাখতে ফিস প্রোটিন পাউডার অপরিহায্য।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মে ১৫, ২০২৪ ৬:৪৬ অপরাহ্ন
প্রথমবারের মতো দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকুয়েনন্স উন্মোচন করেছেন বাকৃবির অধ্যাপক
মৎস্য

দীন মোহাম্মদ দীনু, বাকৃবিঃ দেশীয় শিং মাছের প্রজাতিকে টিকিয়ে রেখে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রথমবারের মতো দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকুয়েন্স উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম ও তাঁর গবেষক দল । এছাড়া তিনি পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণের দাবি করেছেন । তাঁর গবেষক দলের সদস্যগণ হচ্ছেন একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ, স্বর্ণা, হালিমা, জেসমিন, কানিজ এবং সারা ।

অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম জানান, ২০২০ সালে বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এ গবেষণা শুরু করলেও পরে জাপান সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অফ সায়েন্স (জেএসপিএস) এর অর্থায়নে ২০২২ থেকে ২০২৪ সময়কালে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। দেশীয় শিংমাছের ৮টি ফ্যামিলির প্রায় ৮০০ টি পোনার নমুনা নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ^বিদ্যালয়ে সিকুয়েন্সিং ও জিন শনাক্তকরণের কাজ করা হয়। সর্বাধুনিক জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ও সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বায়োইনফরমেটিকস অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে ওই জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্ন করা হয়েছে। দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন এবং পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণ গবেষণা ও এটির ফলাফল সকলের সামনে তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. তাসলিমা খানম। বুধবার (১৫ মে) বেলা ১১ টায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার এর উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এসব জানান। এসময় ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম, সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারি, বাকৃবি জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনুসহ ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম জানান, দেশীয় শিং মাছ বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতি। লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে শিং মাছের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে ২২০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লৌহ উপাদান পাওয়া যায় যা লোহিত রক্ত কণিকার প্রধান উপাদান। এছাড়াও এতে রয়েছে উন্নতমানের আমিষ ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি খেতে সুস্বাদু, কম কাঁটা ও স্বল্প চর্বিযুক্ত হওয়ায় মাছটি বিশেষভাবে সুপরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, অতিরিক্ত আহরণ ও প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দেশীয় এ মাছটি বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। ইয়ার বুকস অব ফিশারিজ স্ট্যাটিটিক্স অব বাংলাদেশের ২০২০ থেকে ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাদুপানির মোট উৎপাদিত মাছের ২ দশমিক ৫২ শতাংশ আসে শিং ও মাগুর মাছ থেকে। স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ শিং মাছ অপেক্ষা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। তাই এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন অন্যতম একটি উপায়। সফলভাবে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনের জন্য লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন সনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিং মাছের জিন নিয়ে গবেষণা শুরু করি। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সংগৃহীত দেশীয় শিং মাছের নমুনা দিয়ে অধ্যাপক তাসলিমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ, জাপান ও সুইডেনের একদল গবেষক গবেষণা কাজ শুরু করেন।

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে প্রধান গবেষক বলেন, গবেষণায় উদ্ভাবিত ড্রাফট জিনোম (প্রথমবার শনাক্তকৃত জিনোম) দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করা সম্ভব যা যেকোনো দেশীয় সকল প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে এই প্রথম। এর মাধ্যমে শুধু স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে করে প্রাকৃতিক জলাশয় ছাড়াও কৃত্রিম পদ্ধতিতে অধিক ফলনশীল স্ত্রী শিং মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। শিং মাছের জিনোম থেকে শুধুমাত্র পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণকারী জিন ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। প্রচলিত হরমোন প্রয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তে মার্কার অ্যাসিসটেড সিলেকশন (এমএএস) পদ্ধতির মাধ্যমে স্বল্প সময়ে স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান গবেষক ড. তাসলিমা দাবি করে আরও বলেন, ‘গবেষণা কাজের ফলাফল চলতি বছরের মার্চে জাপানিজ সোসাইটি অফ ফিশারিজ সায়েন্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ওই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে কনফারেন্স পেপার হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটির উপাত্ত ওই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থিত আন্তজার্তিক মানের ৩০০ বিজ্ঞানীর সামনে উপস্থাপিত হয়। এছাড়াও এই গবেষণার ফলাফল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশের জন্যে বর্তমানে সম্পাদনা পর্যায়ে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা নিয়ে বাকৃবি উপাচার্য বলেন, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য শিং মাছ অনেক উপকারী। সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণের এই গবেষণায় শিং মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভ‚মিকা রাখবে।
এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. তাসলিমা আরও বলেন পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা ও গবেষণা সহায়তা পেলে তিনি তাঁর প্রাপ্ত গবেষণা ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যা বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে । এই গবেষণার পাশাপাশি তিনি স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত শিং ও তিলাপিয়া মাছ থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালে ২টি মাছের প্রবায়োটিক উদ্ভাবন করেন যা বিভিন্ন আধুনিক ও প্রচলিত চাষ পদ্ধতিতে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে, এই গবেষণালব্দ ফলাফল বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে ।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মে ১৩, ২০২৪ ১:১০ অপরাহ্ন
তেলাপিয়া মাছের রোগ ও করণীয়
মৎস্য

তেলাপিয়া চিনেনা এমন লোক পাওয়া যাবে না। এই মাছ চাষে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই লাভবান হতে এখন বাণিজ্যিকভাবে এই মাছের চাষ করছেন। এই মাছ পুকুরে চাষ করার সময় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই মাছের রোগ এবং প্রতিকার করণীয় সম্পর্কে জেনে চাষ করলে অনেক লাভ হওয়ার সুযোগ থাকে চাষিদের।

তেলাপিয়ার রোগের কারণ:

১। পুকুরে বা খাঁচায় মাছের অধিক ঘনত্ব হলে অর্থাৎ পুকুরের জায়গার তুলনায় মাছের পরিমাণ অনেক বেশি হলে।

২। কোন অনুজীব যেমন- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলে এই মাছের রোগ হতে পারে।

৩। কোন কারণে তেলাপিয়া মাছ চাষের পুকুর কিংবা খাঁচায় চাষ করা হলে সেই খাঁচার পরিবেশগত বিশৃঙ্খলতা হলে।

৪। আশেপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পরিমাণ রাসায়নিক সার কিংবা আগাছা নাশকের ব্যবহার।

৫। চাষের পুকুর কিংবা খাঁচায় মাছের জন্য অতিরিক্ত খাবার সরবরাহ।

৬। পুকুর কিংবা খাঁচায় পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেলে।

৭। পুকুর কিংবা খাঁচায় অক্সিজেন সরবরাহ কম হলে।

রোগ হলে করণীয়ঃ

১। তেলাপিয়া মাছ চাষের পুকুরের পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়ে থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। কোন কারণে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট হলে তা দ্রুত ঠিক করতে হবে।

২। মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। কোনভাবেই অতিরিক্ত খাদ্য প্রদান করা যাবে না।

৩। তেলাপিয়া মাছ চাষের পুকুরে কিংবা খাঁচায় বেশি পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে।

৪। পুকুরে তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হলে পুকুরে মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে। আর খাঁচায় চাষ করা হলে তেলাপিয়া চাষের খাঁচায় মাছের ঘনত্ব কমাতে হবে।

৫। তেলাপিয়া মাছের রোগ হলে প্রথমেই রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে হবে। এরপর সেই নির্দিষ্ট কারণ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ১০, ২০২৪ ৪:১৫ অপরাহ্ন
বাকৃবিতে সামদ্রিক ফিন ফিশ চাষ ব্যাবস্থাপনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
মৎস্য

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ ডিন কনফারেন্স হলে ভূমিতে স্থাপিত রিসার্কোলেটিং অ্যাকোয়াকালচার সিস্টেমে (আরএএস) সামদ্রিক ফিন ফিশ চাষ ব্যাবস্থাপনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০ মার্চ ২০২৪ (রবিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর ড. মোঃ আলী রেজা ফারুক এর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির সাবেক ছাত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনা উইলমিংটন এর প্রফেসর ড. মো: শাহ আলম।

এসময় প্রফেসর আলম যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা উইলিনের রিসার্কোলেটিং অ্যাকোয়াকালচার সিস্টেমে (আরএএস) সামদ্রিক ফিন ফিশ চাষ রিসার্চ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন এবং তিনি বলেন, সাধু পানির মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে, বাংলাদেশের স্বল্পজমি বিবেচনায় রিসার্কোলেটিং অ্যাকোয়াকালচার সিস্টেমে (আরএএস) সামদ্রিক ফিন ফিশ নিয়ে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীদের সামুদ্রিক ফিনফিশ নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ে গবেষণা করছে এবং সফল হচ্ছে। এক্ষেত্রে মৎস্য বিজ্ঞানী, খামারি, অর্থনীতিবিদ, সরকারী, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সকলের সমন্বয়ে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারে মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি সম্ভব।

ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ এর সমন্বয়ে আয়োজিত সেমিনারে মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২৪ ৭:৫১ অপরাহ্ন
বাকৃবিতে বাংলাদেশ ফিশারিজ সোসাইটির দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু
মৎস্য

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনুঃ ফিশারিজ সোসাইটি অফ বাংলাদেশ এর আয়োজনে সোসাইটির ৩য় দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ১৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন হলে শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খুরশেদ আলম, বিএন।

প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। বাংলাদেশ ফিশারিজ সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি’র সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ.কে.এম. নওশাদ আলম, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক ড.নাথুরাম সরকার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফিশারিজ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ সাদিকুল ইসলাম।সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন অধ্যাপক ড হারুন অর রশীদ। বক্তব্য রাখেন ডিপার্টমেন্ট অব ফিসারিজের (ডিওএফ) উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরিচালক ড. মোহসেনা বেগম তনু।

সম্মেলনে বক্তারা বাংলাদেশে মৎস্য খাতের অবদান, মৎস্য গবেষণার সফলতা, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, মাছের ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, মুক্তাচাষ স¤প্রসারণ এবং জীবন্ত জীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ নানান বিষয় তুলে ধরেন।
এছাড়াও এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনায় বলা হয় যে, এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৮৩টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে ৭১ টি মাছের প্রজনন ও জিন পোল সংরক্ষণের জন্য এবং ১২ টি মুক্ত জলাশয়ে মাছের ব্যবস্থাপনার জন্য। যা দেশে মৎস্য উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়ে এসময় আরোও আলোচনা করা হয়।

বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা এখন সময়ের একটা দাবি। যার গুরুত্ব আমাদের সংবিধানেও দেওয়া আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু পুষ্টির প্রাপ্যতা ২২৫০ কিলো ক্যালোরি। কিন্তু এই পুষ্টির ৭০ ভাগ আসে উদ্ভিজ্জ উপাদান বা কার্বোহাইড্রেট থেকে। একইভাবে বাংলাদেশের মানুষের প্রোটিন প্রাপ্ততার হার মাথাপিছু ৬৬ গ্রাম। এই প্রোটিনেরও ৭০ ভাগ আসে উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে। সে ক্ষেত্রে প্রাণিজ প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করার ক্ষেত্রে মাৎস্য সেক্টর একটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপাদান গুলো ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে তাহলে শ্রম ও কম জনবলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। স্মার্ট গ্র্যাজুয়েট তৈরীর সাথে সাথে স্মার্ট কৃষক তৈরি করতে হবে যাতে তারা স্মার্ট প্রযুক্তি গুলো ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। স্মার্ট এগ্রিকালচার নিশ্চিত করতে না পারলে দেশ ভঙ্গুর হয়ে যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলের মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং বৈশ্বিক জলজ চাষ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। অ্যাকুয়াকালচার চাষ থেকে বাংলাদেশের ৪৭% মাছ  উৎপাদন করা হয়। একটি মাছের সকল অংশ ব্যবহার যোগ্য। বর্তমানে সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও মাছ থেকে ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ব্যাথানাশকের মত ঔষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। অনেক মাছের চামড়া থেকে দামি জ্যাকেট উৎপাদন করা হচ্ছে। সামুদ্রিক উদ্ভিদ ব্যবহার করে হালাল খাবার ও জেলাটিন উৎপাদন নিশ্চিত করার ব্যাপারেও ব্যাপক গবেষণা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সমুদ্রের সম্পদকে রক্ষা করতে হলে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে হবে। লিপস্টিক, ফাউন্ডেশনে এবং অন্যান্য বর্জ্যে উপস্থিত মাইক্রো প্লাস্টিক সমুদ্র দূষিত করার ফলে মাছ মারা যায়। কারণ মাছ এইগুলো হজম করতে পারে না। তাই সমুদ্রে দূষণ কমাতে হবে।

বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য চাষকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বঙ্গোপসাগরে আমাদের জীবন্ত সম্পদের বিশাল বৈচিত্র্য রয়েছে। এটি ইকনোমিক সম্ভাবনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সুযোগকে প্রসারিত করবে। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে  বিভিন্ন কারিগরি সেশনে গবেষণা নিবন্ধের  ১৭০ টি  ওরাল এবং ৭০ টি পোস্টার উপস্থাপন করা হবে।

সম্মেলনে ফিশারিজ সোসাইটি অফ বাংলাদেশ এর সদস্যগণ ছাড়াও দেশি-বিদেশি মৎস্য বিজ্ঞানী আমন্ত্রিত অতিথিগণ অংশ নেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২৪, ২০২৪ ৬:১৫ অপরাহ্ন
গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
মৎস্য

গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ এর মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা কথা জানান।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল কাইয়ূম। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. জুলফিকার আলী এবং নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে সম্পৃক্ত নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার ভিডিপি-এর প্রতিনিধিগণসহ ইলিশ সংক্রান্ত বিভিন্ন অংশীজনরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মন্ত্রী বলেন, ২০০১-০২ সালে ইলিশ উৎপাদনের যে প্রবৃদ্ধি ছিল এবং ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিল, সে সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইলিশ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। এ প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা, সদিচ্ছা এবং একটি জাতিকে গড়ে তোলার প্রয়াসের জন্য এটি হয়েছে। বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, ইলিশ যেমন আমাদের গৌরবের জায়গা, তেমনি ইলিশ জাতীয় অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও একটা বড় ক্ষেত্র। তাই এটিকে লালন-পালন, পরিচর্যা এবং বিভিন্ন গবেষণাধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এটিকে আরও বেশি উৎপাদন বাড়ানো এবং এটিকে সত্যিকার অর্থে এটিকে একটি বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেই আমরা এগোতে চাই। সকলের যার যার যায়গা অবদান রাখলে ইলিশ উৎপাদনে আরও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে এ সময় মন্ত্রী আরও যোগ করেন, দেশে ইলিশের অভায়শ্রম কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সে জায়গাগুলো থেকে উত্তরণ করা দরকার। ইলিশের বিচরণ পথ সুগম ও নিরাপদ করতে হবে। তা না হলে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রকৃত মৎসীজীবীদের একটা সুনির্দিষ্ট তালিকা করা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এছাড়া মৎস্যজীবী বিভিন্ন সংগঠনকে দায়িত্ব নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তা পালনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। জাটকা নিধন বন্ধ করতে হবে এবং কেউ অবৈধ জাল ব্যবহার করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর পাশাপাশি অভয়াশ্রম সম্পৃক্ত এলাকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে সামাজিক ক্যাম্পেইন করতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে তাদের জন্য ভিজিএফ এর পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

এ সময় মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের উদ্যোক্তাদের চেয়েও দ্বিগুণ লাভ করার মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে জানান মন্ত্রী। দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত জেলেদের রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন মন্ত্রী। বাজারে ইলিশের পর্যাপ্ততা থাকা সত্ত্বেও মধ্যসত্ত্বভোগীদের জন্য ইলিশের দাম অনেক শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় বলেও এ সময় জানানও মন্ত্রী। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, মানুষের মৌলিক বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা দেওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান কাজ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয় ইদানিং বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে বা আছে তাদের চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া চলছে এবং এ অসাধু ব্যবসায়ী যারা কারসাজি করে মূল্য বৃদ্ধি করে মানুষকে কষ্ট দিতে চায় তাদের কোন অবস্থাতে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। মানুষের স্বস্তি, মানুষের শান্তি, তাদের জান-মালের নিরাপত্তা-এ মৌলিক বিষয়গুলো অবশ্যই বর্তমান সরকার প্রাধান্য দেবে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ফলে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ ইলিশ সফলভাবে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে যা ভিত্তি বছর ২০০১-০২ এর তুলনায় ১০৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ফলে এ বছর প্রায় ৪০ দশমিক ৫৮ হাজার কোটি জাটকা নতুন করে ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। মা ইলিশ সংরক্ষেণের সুফল পেতে হলে এ বছর উৎপাদিত ইলিশের পোনা (জাটকা) নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ সাধারণ মানুষের জন্য আরো সহজলভ্য হবে বলে।

পরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ এর প্রতিবেদন শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ২০২৩ সালে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১২ অক্টোবর হতে ০২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০২৩ বাস্তবায়ন করা হয়। এ সময় দেশের ইলিশ সম্পৃক্ত ৩৮ জেলার ১৭৪ উপজেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, ২০২৩ বাস্তবায়নকালে জেলে ও মৎস্যজীবীদের জীবীকা নির্বাহের জন্য ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ২২ দিনে ২৫ কেজি হারে মোট ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ৮, ২০২৪ ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
জেনে নিন পাঙাশ মাছের খাদ্য তৈরির উপাদান
মৎস্য

পাঙাশ মাছের খাদ্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমাদের দেশে মাছের চাষ দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে চাষ হওয়া মাছগুলোর মধ্যে পাঙাশ মাছ অন্যতম।

পাঙাশ মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই মাছ চাষ করলে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পাঙাশ মাছকে খাওয়ানোর জন্য খাদ্য তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসুন আজ জেনে নেই পাঙাশ মাছের খাদ্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-

পাঙাশ মাছের খাদ্যকে পিলেট করে খাওয়ানো সবচেয়ে ভাল হয়। নিচে পাঙাশ মাছকে পিলেট খাদ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো দেওয়া হল-

পাঙাশ মাছকে খাদ্য খাওয়ানোর জন্য ১ টন হিসেবে নিচে উপাদানগুলো দেওয়া হল :

শুটকি অথবা ফিশমিল ১৫০ কেজি (৫০%=৭৫)
ডিওআরবি ১০০ কেজি (১৮%=১৮)

সোয়া মিল ২০০ কেজি (৪৪%=৮৮)
রাইস ব্রান ২০০ কেজি (১৪%=২৮)
এংকর ডাল ১২৫ কেজি (৩৬%=৪৫)

রেপসিড ১২৫ কেজি (৩৬%=৪৫)
লবণ ও ভিটামিন প্রিমিক্সআটা
আটা ১০০ কেজি (১০%=১০)

এই খাদ্য উপাদানের সাথে চিটাগুড়ও দেওয়া যেতে পারে। উপরোক্ত উপায়ে পিলেট খাদ্য উপাদানগুলো নিয়ে পাঙাশ মাছকে পিলেট খাদ্য তৈরি করে খাওয়াতে হবে। উপরে উল্লেখিত খাদ্য উপাদানগুলোকে পিলেট বানিয়ে নিয়ে তারপর পাঙাশ মাছকে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হলে পাঙাশ মাছ খুব দ্রুত শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এই খাদ্য প্রদানের ফলে পাঙাশ মাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। এই উপাদানগুলো দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করলে পাঙাশ মাছের চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : নভেম্বর ২১, ২০২৩ ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
জেনে নিন পাঙাশ মাছের খাদ্য তৈরির উপাদান
মৎস্য

পাঙাশ মাছের খাদ্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমাদের দেশে মাছের চাষ দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে চাষ হওয়া মাছগুলোর মধ্যে পাঙাশ মাছ অন্যতম।

পাঙাশ মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই মাছ চাষ করলে তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। পাঙাশ মাছকে খাওয়ানোর জন্য খাদ্য তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসুন আজ জেনে নেই পাঙাশ মাছের খাদ্য তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-

পাঙাশ মাছের খাদ্যকে পিলেট করে খাওয়ানো সবচেয়ে ভাল হয়। নিচে পাঙাশ মাছকে পিলেট খাদ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো দেওয়া হল-

পাঙাশ মাছকে খাদ্য খাওয়ানোর জন্য ১ টন হিসেবে নিচে উপাদানগুলো দেওয়া হল :

শুটকি অথবা ফিশমিল ১৫০ কেজি (৫০%=৭৫)
ডিওআরবি ১০০ কেজি (১৮%=১৮)

সোয়া মিল ২০০ কেজি (৪৪%=৮৮)
রাইস ব্রান ২০০ কেজি (১৪%=২৮)
এংকর ডাল ১২৫ কেজি (৩৬%=৪৫)

রেপসিড ১২৫ কেজি (৩৬%=৪৫)
লবণ ও ভিটামিন প্রিমিক্সআটা
আটা ১০০ কেজি (১০%=১০)

এই খাদ্য উপাদানের সাথে চিটাগুড়ও দেওয়া যেতে পারে। উপরোক্ত উপায়ে পিলেট খাদ্য উপাদানগুলো নিয়ে পাঙাশ মাছকে পিলেট খাদ্য তৈরি করে খাওয়াতে হবে। উপরে উল্লেখিত খাদ্য উপাদানগুলোকে পিলেট বানিয়ে নিয়ে তারপর পাঙাশ মাছকে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হলে পাঙাশ মাছ খুব দ্রুত শারীরিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এই খাদ্য প্রদানের ফলে পাঙাশ মাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। এই উপাদানগুলো দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি করলে পাঙাশ মাছের চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : নভেম্বর ১৩, ২০২৩ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
চীন কেন মাছ চাষে প্রথম? তারা কি করে, যা আমরা করিনা?
মৎস্য

চীনে মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণের নীতি হল Profylaxis: Prevention is Better then Treatment “চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম”। তারা মানে রোগ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হলো প্রতিরোধ।
পক্ষান্তরে আমরা বাংলাদেশে কি করি! যখন কোনো ডিজিজ ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায় তখন আমরা ট্রিটমেন্ট শুরু করি।
এতে আমাদের খামারিদের খরচ অনেক বেশি হয়, কিছু মাছে মর্টালিটি আছে, খাবার অপচয় হয়, টক্সিক গ্যাস সৃষ্টি হয়, মাছের ওজন কমে যায়। তাহলে যদি আমরা চীনাদের মতো নিয়মিত প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতাম তাহলে কিন্তু উপরোক্ত ক্ষতি গুলোর সম্মুখীন হতে হতো না।

সংক্রামক রোগ সাধারণত মাছের টিস্যু এবং বিভিন্ন অঙ্গ (ত্বক, ফুলকা, অন্ত্র বা মলত্যাগের অঙ্গ) মাধ্যমে মাছকে আক্রমণ করে। তবে ত্বকের গঠন এবং মাছের শ্লেষ্মা ঝিল্লি সংক্রামক অণুজীবের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। পাচনতন্ত্রের প্রবেশকারী প্যাথোজেনিক জীবাণুগুলি মাছের অন্ত্রে থাকা প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক দ্বারা নিধন হয়ে থাকে ।মাছের রক্তকণিকা, লিম্ফয়েড টিস্যু, প্লীহা, লিভার এবং রক্তনালীর রেটিকুলো এন্ডোথেলিয়াল কোষগুলি প্যাথোজেনিক অণুজীবকে নির্মূল করতে পারে। এছাড়াও, মাছের রক্তে ব্যাকটেরিসিডিন থাকে, যা প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার জন্য বিষাক্ত। কিন্তু শীতকালে পানি ঠান্ডা এবং সূর্যের আলো কম থাকায় মাছের এই প্রাকৃতিক ডিফেন্স ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যায়।

জলাশয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী দুই ভাবে সংক্রমিত হয় – ১) প্রাইমারি ইনফেকশন এবং ২) সেকেন্ডারি ইনফেকশন।

১) প্রাইমারি বা প্রাথমিক সংক্রমণ মাছের ইমিউনিটি ভেদে পুকুরের মধ্যেই তৈরি হয়। জীবাণু মাছকে সরাসরি অথবা “স্বাস্থ্যকর” মাছ রোগের বাহক হিসেবে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য দুর্বল মাছ কে আক্রান্ত করে। কারণ একটি স্বাস্থ্যকর মাছ দুর্বল মাছ এর চেয়ে বেশি যায়গায় সাতার কাটে ফলে রোগ জীবাণু সর্বত্র পৌঁছাতে পারে।

২) সেকেন্ডারি ইনফেকশন বা গৌণ সংক্রমণ পুকুরের বাইরে থেকে প্রবেশ করে। যেমন, একটি রোগমুক্ত পুকুরে একটি রোগাক্রান্ত পুকুরের রোগাক্রান্ত বা দূষিত পলি মাটি, পানি, ব্যবহৃত জাল বা অন্যান্য মাছ ধরা সরঞ্জাম, বিভিন্ন মাছ খেকো পাখি দ্বারা রোগের আক্রমণ ঘটে।
চীনারা এক পুকুরে ব্যবহৃত সরঞ্জাম অন্য পুকুরে ব্যবহার করে না, এমনকি এক এক পুকুরের জন্য আলাদা আলাদা শ্রমিক নিয়োজিত করে। মুলত তারা বায়ো সিকিউরিটি শতভাগ মেনে চলে।

চীনারা, তাদের জলাশয়ে মাছের পোনা ছাড়ার পুর্বে হ্যাচারী থেকে আনা পোনা গুলো কে মৃদু জীবানুনাষক দিয়ে পরিশোধন করে তারপর কালচার পুকুরে অবমুক্ত করে। আমাদের দেশে কয়জন খামারি এটা করে !

চীনারা তাদের পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ এর নিয়মিত জায়গায় কাপরের পোটলা বা টিস্যু ব্যাগে বিভিন্ন জীবানুনাষক (ব্লিচিং পাউডার/ পাউডার জীবানুনাষক) বেধে রাখে। ফলে মাছ যখন খাদ্য খেতে আসে তখন কাপরের পোটলা থেকে নিসৃত জীবানুনাষক এর সংস্পর্শে এসে মাছ জীবানু মুক্ত হয়।
আমাদের দেশে কেউ কি এটা মেইনটেইন করে !

চীনারা তাদের পুকুরে জৈব সার প্রয়োগ এর সময় প্রতি ৫০০ কেজি জৈব উপাদানের সাথে ১৫০ গ্রাম করে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নিয়ে তারপর প্রয়োগ করে। কারণ এই জৈব উপাদান গুলোতে বিভিন্ন রোগজীবাণু থাকতে পারে। আমাদের দেশে কি এটা করা হয় !

চীনারা শীতের পুর্বে তাদের পুকুরের মাছের ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন হারবাল ইমিউনিটি বিল্ডার প্রয়োগ করে, যেমন: ২ কেজি রসুন এর পেস্ট প্রতি ৫০০ কেজি ফিডের সাথে মিসিয়ে পর পর ৬ দিন একটানা খাওয়ায়। এছাড়াও প্রতি ৫ কেজি ফিডের সাথে ৪০ গ্রাম করে লবণ ৬ দিন একটানা খাওয়ায়। ফলে মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের কয়জন খামারি এটা করে !

এই সামান্য কয়েকটা পদ্ধতি যদি আমরা মেনে মাছ চাষ করি তাহলে মাছ চাষের বিপ্লব সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

লেখক
মাৎস্যবিদ মো: রাশেদুজ্জামান দিপু
দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
বাংলাদেশ ফিশারিজ এক্সিকিউটিভ এসোসিয়েশন।
ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার
এভানকো বাংলাদেশ লিমিটেড

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop