শত্রুতার বিষে মরল ১০ লাখ টাকার মাছ
মৎস্য
বরিশালের উজিরপুরে পূর্বশত্রুতার জের ধরে মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই এলাকার বাসিন্দা হরষিত মণ্ডল ও সঞ্জাত মণ্ডলের বিরুদ্ধে।
বুধবার গভীর রাতে উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের পটিবাড়ী-কুড়লিয়া যৌথ মৎস্য প্রকল্পে এ বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মৎস্য ঘের কমিটির সদস্য সৈকত মণ্ডল বাদী হয়ে উজিরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সাতলা ও জল্লা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় ৩০ একর জমিতে পটিবাড়ী-কুড়লিয়া যৌথ মাছের ঘের রয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ওই মৎস্য প্রকল্পের অধীনে মাছ চাষ করছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার কতিপয় ব্যক্তিরা। তবে চলতি মৌসুমে করোনার সময়ে এলাকার কর্মহীন ও বেকার যুবকরা একত্রিত হয়ে কুড়লিয়া ও পটিবাড়ী এলাকার সব জমি মালিকদের সম্মতি নিয়ে মাছের ঘেরটি ৫ বছরের জন্য লিজ নেয়।
মাছ চাষের শুরুতেই অর্ধ শত জমির মালিকদের মধ্যে ওই এলাকার বাসিন্দা মৃত হরিমোহন মণ্ডলের পুত্র হরষিত মণ্ডল ও তার ছোটভাই সঞ্জাত মণ্ডল মাছের ঘেরের বিরোধিতা করে আসছে। এ নিয়ে ঘের মালিকদের সঙ্গে হরষিত মণ্ডলের ও সঞ্জাত মণ্ডলের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
এরই অংশ হিসেবে ওই ঘেরের নিজেদের অংশের ডোবার মাছ ধরে নেওয়ার পাঁয়তারা করে হরষিত মণ্ডল ও তার সহযোগীরা। তবে সকল মালিকদের বাধার মুখে মাছ ধরে নিতে ব্যর্থ হয় হরষিত মণ্ডল ও তার ভাই সঞ্জাত মণ্ডলসহ তাদের সহযোগীরা। মাছ ধরে নিতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে।
ভোরে মাছের ঘেরে বিষ প্রয়োগের পর বিষক্রিয়ায় সকালে ওই ডোবায় থাকা চিতল, কাতল রুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছ ছটফট ও লাফালাফি করতে থাকে। এ সময় অসংখ্য মাছ মড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে ঘের কর্তৃপক্ষকে জানায়।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান উজিরপুর মডেল থানার ওসি মো আলী এরশাদ। এ সময় তিনি কিছু মাছ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। তবে তিনি চলে আসার পর বিকাল নাগাদ মৎস্য ঘেরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মরা মাছ ভেসে ওঠে। বিষ প্রয়োগে কমপক্ষে ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করেছে বলে অভিযোগ ঘের মালিকদের।
এ বিষয়ে মৎস্য ঘের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালেক মিঞা জানান, বেশ কয়েক বছর তিনি বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে দেশে ফেরেন। করোনার সময়ে বিদেশে যেতে না পেরে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। পরে ওই মৎস্য ঘেরে থাকা কয়েকজন জমির মালিকসহ এলাকার বেকার ও কর্মহীন যুবকদের নিয়ে কুড়লিয়া-পটিবাড়ী মৎস্য প্রকল্পের অধীনে মাছ ছাড়ার পরিকল্পনা করি। আমার নিজের এ মৎস্য ঘেরে ১৫ বিঘা জমি রয়েছে। ঘেরের অন্যান্য সদস্যদেরও জমি রয়েছে এ মৎস্য ঘেরে। আমরা এ মৎস্য ঘেরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হরষিত মণ্ডল আমাদের ঘেরে বিষ প্রয়োগ করে ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ নিধন করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত হরষিত মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার বলেন, গত এক মাস পূর্বে ঘের মালিক ও হরষিত মণ্ডলকে নিয়ে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করেছি। বৈঠকে আমি ঘের মালিকদের হরষিত মণ্ডলকে ঘেরের অংশীদার রাখা অথবা বিগত বছরে হরষিতের ডোবার বিনিময়ে যে অর্থ প্রদান করা হতো তা দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ঘের মালিকরা আমার উভয় প্রস্তাব মেনে নিলেও হরষিত কোনো প্রস্তাব মেনে নেয়নি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. গিয়াস উদ্দীন বেপারী আমাকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এরপর ঘের মালিক পক্ষ হরষিতের ডোবার বিনিময়ে ২০ হাজার টাকা আমার কাছে জমা রেখে গেছেন। তবে হরষিত মণ্ডল সেই টাকাও নেয়নি।
এ বিষয়ে মৎস্য ঘেরের সভাপতি সাংবাদিক নিকুঞ্জ বালা পলাশ বলেন, বরিশাল প্রেস ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে ঘেরের অন্য সদস্যরা আমাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিষ প্রয়োগের ফলে ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে গেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলী এরশাদ বলেন ঘেরে বিষ প্রয়োগের বিষয়ে মৎস্য ঘের মালিকদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করতে সকালেই আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তবে এ সময় অল্প কিছু মাছ ভেসে উঠতে দেখেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।