পোল্ট্রি খাতে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে না পারলে প্রান্তিক খামারি থাকবে না
পোলট্রি
বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লক্ষাধিক প্রান্তিক খামারি, যারা স্বল্প পুঁজিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে মানুষের প্রোটিন চাহিদা পূরণে অবদান রাখছেন, এই খাতের মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু কর্পোরেট গ্রুপগুলোর পরিকল্পিত আধিপত্য বিস্তারের কারণে পোল্ট্রি খাত আজ গভীর সংকটে পড়েছে।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ফিড, ডে-ওল্ড চিক (ডিওসি), ওষুধ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একচেটিয়া আধিপত্য স্থাপন করছে, যা প্রান্তিক খামারিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, কিছু অসাধু কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলার কারণে পোল্ট্রি খাত আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করার নামে তারা এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, যা প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করছে।
বর্তমানে কর্পোরেট গ্রুপগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য বাজারমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বাড়ছে, অথচ বাজারে প্রতিযোগিতার অভাবে তারা তাদের পণ্যের জন্য ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। এর ফলে খামারিরা একে একে তাদের খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, দেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ডিম ও মুরগির দাম নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করবে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে মনে করে, দেশের পোল্ট্রি খাতকে রক্ষা করতে হলে প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
এ জন্য আমাদের প্রস্তাব:
পোল্ট্রি বোর্ড গঠন : পোল্ট্রি খাতকে রক্ষা করতে হবে।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রোধে দ্রুত কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা।
প্রান্তিক খামারিদের জন্য সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ, প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
বাজারে দামের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং ফিড ও ডিওসির মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা।
অসাধু কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা বন্ধে দায়িত্বশীল নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
পোল্ট্রি খাত কেবল একটি শিল্প নয়; এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই এই খাতকে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণ থেকে রক্ষা করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহত হবে এবং সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।
শুভেচ্ছান্তে,
মোঃ সুমন হাওলাদার
সভাপতি, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন