১৭ কেজির কাতল বা ৬৫ হাজারের বাঘাইর, মাছ কেনার হিড়িক বিনিরাইলে
মৎস্য
১৭ কেজি ওজনের বিশাল এক কাতল মাছকে ঘিরে ক্রেতাদের জটলা। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ১৭ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় বিনিরাইল গ্রামের জামাই এহসান সরকার মাছটির দাম বলছেন ১৪ হাজার। পাশেই ঢাউস আকৃতির বাঘাইর ঘিরেও জটলা। বিক্রেতা ৬৫ হাজার দাম চাইলেও ক্রেতা কাপাইস গ্রামের জামাই দাম বলছেন ৪৯ হাজার। বিক্রেতারা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছগুলো ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যতো না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন মাছ দুটি দেখার জন্য।
মাছ কেনা-বেচার এ মেলা বসেছিল গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে। উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালীয়া ও বক্তারপুর এ তিন ইউনিয়নের সীমান্তে পৌষ সংক্রান্তিতে (পৌষ মাসের শেষ দিন) হিন্দু সস্প্রদায়ের আয়োজনে গত আড়াই বছর ধরে বসছে এ মেলা। মেলার নাম ‘জামাই মেলা’। তবে বর্তমানে মেলা পরিচিতি পেয়েছে মাছের মেলায়। বিনিরাইল গ্রামের আশেপাশের গ্রামের জামাইরা মেলার মাছের মূল ক্রেতা। এখন এ মেলা রূপ পেয়েছে সার্বজনীন।
মেলায় দেখা গেছে, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দূর-দূরাস্ত থেকে মেলায় মানুষ মাছ কিনতে এসেছেন। সকাল থেকেই লোকজন জড়ো হলেও দুপুরের পর মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। দেশের নানাপ্রাপ্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বড় বড় মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন মেলায়। সামদ্রিক চিতল, শাপলা পাতা, কোরাল কাইক্কা, লইট্টা, টুরা থেকে দেশি বাঘাইর, রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, বোয়াল, কালীবাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি মেলায় স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও। কোনো ব্যবসায়ী কত বড় সাইজের মাছ নিয়ে আসতে পারলেন এটা নিয়ে যেমন প্রতিযোগিতা ছিল, তেমনি জামাইদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল কে সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ি যাবেন। তবে কম যাননা শ্বশুররাও। তাদেরও প্রতিযোগিতা ছিল জামাইদের চেয়ে বড় মাছ কিনে বাড়ি ফেরার।
মেলায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী নয়ন কুমার দাস (৫০) জানান, মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইর, চিতল, কালবাউশ ও রিটা উঠেছে। বিক্রিও ভালো। এক কেজি থেকে শুরু করে ২০-২৫ কেজি ওজনের মাছ বেশি উঠেছে। মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ২০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে শুধু মাছ নয় আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি, বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের পসরাও ছিল প্রচুর।
বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হলে ভাটিরা গ্রামের ভাওয়াল আশরাফুল বলেন, এবার আত্মীয়ের হয়ে তিনি প্রায় ৩৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, রুই, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন। এ মেলা তাদের এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় একটি উদাহরণ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আশেপাশের গ্রামগুলোর সকল মানুষেন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মনে করিয়ে দেয় হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির কথা।
বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য কিশোর আকন্দ জানান, প্রথম মেলাটি খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হতো। প্রায় ২৫০ বছর ধরে মেলাটি চলে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।