১২:৫২ পূর্বাহ্ন

শনিবার, ৯ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : জানুয়ারী ২৬, ২০২২ ৪:৩০ অপরাহ্ন
শরীয়তপুরে স্কোয়াস চাষে লাভবান কৃষক
এগ্রিবিজনেস

মধ্যপ্রাচ্যের সুপরিচিত কুমড়া জাতীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি স্কোয়াস প্রথমবারের মতো চাষ শুরু হয়েছে শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর বিচ্ছিন্ন চর নওপাড়া ইউনিয়নে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শ ও সহায়তায় সবজিটি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। একই সঙ্গে বাগান সম্প্রসারণে অন্যান্য কৃষককে আগ্রহী করতে নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

স্কোয়াস নামের মধ্যপ্রাচ্যের এ সবজিটি দেশে তেমন পরিচিত নয়। তবে শরীয়তপুর জেলার দুর্গম চরাঞ্চল নওপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের এ সবজিটি চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে অবহিতকরণ প্রশিক্ষণ সভা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সাধারণ কৃষকদের সবজিটি খেতে ও চাষাবাদে আগ্রহী করার জন্য কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সবজিটি বিনামূল্যে বিতরণ করছেন। সেই সঙ্গে বাড়ির উঠানে উঠানে অস্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তৈরি করে কৃষকদের মধ্যে সবজিটির খাদ্যগুণ তুলে ধরছেন। পাশাপাশি চাষাবাদে জড়িত কৃষকদের ফসলের মাঠে গিয়ে বিষমুক্ত পরিবেশ রক্ষা করে অধিক উৎপাদনের কলা কৌশল শিখাচ্ছেন।

সবজিটি চাষ করে কৃষক সাত থেকে আটগুণ লাভ করছেন। এ বিষয়ে সবজি চাষি রেজাউল করিম মোহাম্মদ জানান, অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ৮ শতাংশ জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্কোয়াস চাষ করেন। এতে চাষের ব্যয় তুলে লাভবানও হয়েছেন। তার আয় আসবে ৫০ হাজারের ওপরে। তার পাশাপাশি গ্রামের অনেকেই সবজিটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সবজির খাদ্যগুণ নিয়ে নড়িয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রোকনুজ্জামান বলেছেন, সবজি বলতেই খনিজ লবণ ও ভিটামিনে পরিপূর্ণ খাদ্য। সবজিটি খাদ্য ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। স্কোয়াস চাষ কৃষকের জন্য লাভজনক। এটি খাওয়া নিশ্চিত করা গেলে খাদ্য ঘাটতি পূরণ ও চাহিদা মিটবে। সেই সঙ্গে ভাতের ওপর চাপ কমবে।

কৃষি বিভাগ সর্বদা কৃষকের পাশে রয়েছে মন্তব্য করে শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুস সাত্তার জানান, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে কৃষককে সবসময় পরামর্শ দেওয়া হয়। কীটনাশক ব্যবহার না করে শরীয়তপুরে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন করা হয়। এতে এ জেলার নিরাপদ সবজির কদর সারা দেশে। বর্তমানে নতুন ফসল চাষে শিক্ষিত যুব সমাজ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। নতুন সবজি স্কোয়াস পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর অধিক প্রচার প্রয়োজন।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে জেলায় প্রায় ১০ একর জমিতে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০ জন কৃষক নতুন সবজি স্কোয়াস চাষে জড়িত হয়েছেন। এদের সবাই লাভবান হচ্ছেন বলে দাবি কৃষি বিভাগের। 

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২৫, ২০২২ ৩:২২ অপরাহ্ন
গাজর চাষে ভাগ্যবদল ১০ হাজার কৃষকের
এগ্রিবিজনেস

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় এবার গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে গাজর চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

উপজেলার কিটিংচর, দেউলী, দশানী, ভাকুম, নয়াপাড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা, লক্ষীপুর, নীলটেক, কানাইনগর, মোসলেমাবাদ, বিন্নাডাঙ্গী, আজিমপুর ও চর দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি কৃষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত।

লাভজনক হওয়ায় নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক হারে গাজর চাষের দিকে ঝুঁকছেন এই অঞ্চলের কৃষকেরা।

কৃষি অফিস ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলায় গাজর চাষ শুরু হয় প্রায় দুই দশক আগে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী-দশানী ও ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় গাজর চাষ এখন সমগ্র সিংগাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সীমিত আকারে রপ্তানিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবার ফলনও বেড়েছে। তবে সিংগাইরে গত বৃষ্টিতে ৫০ হেক্টরের মতো জমির গাজর নষ্ট হয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে গাজর উৎপাদন হয়েছিল ৩৫-৩৬ মে. টন। এবার উৎপাদন হয়েছে ৩৭-৩৮ মেট্রিক টন।

চাষি মো. সরিফুল ইসলাম ও মো. মেরেজ খান জানান, বীজের দাম অনেক বেশি। বাজারে কোথাও বীজ পাওয়া যায় না। গত বছর এক কেজি বীজের দাম নিয়েছিল ১২-১৩ হাজার টাকা। এবার নিয়েছে ১৫-১৮ হাজার টাকা। বীজের দাম কম হলে আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম। গাজরের বীজের দাম কমানোর দাবি জানান তারা।

গাজরের ভরা মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদাও বেড়েছে। শ্রমিকেরা জানান, প্রতি বছর এ সময় আমরা বেশি মজুরি পেয়ে থাকি। গাজর বপন, পরিচর্যা, উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাত করণের সঙ্গে জড়িত অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হচ্ছে। এখানকার গাজর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।

ব্যাপারী মো. মহর আলী বলেন, সিংগাইর ও ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি গাজর চাষ হলেও সিংগাইরের গাজরের চাহিদা বেশি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১১’শ হেক্টর জমিতে গাছর চাষ হয়েছে। বিঘা প্রতি গড় উৎপাদন ২’শ মণের উপরে। এ উপজেলা থেকে বার্ষিক প্রায় ৫ কোটি টাকার গাজর বিক্রি হয়।

গাজর চাষ অধ্যুষিত জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলি গ্রামের কৃষক ইদ্রিস ব্যাপারী, কুদ্দুস ব্যাপারী বলেন, ২৫/৩০ বছর ধরে গাজর চাষ করি। এবারও ১০ বিঘা জমিতে বুনেছি। বিঘাপ্রতি ৫’শ গ্রাম বীজ যার মূল্য ৮-৯ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে জমি চাষ, সার, পরিচর্যা ব্যয় ও কীটনাশক মিলে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। গড়ে বিক্রি ওঠে প্রায় আশি হাজার থেকে এক লাখ টাকা। মাত্র আড়াই থেকে তিন মাসে দ্বিগুণের বেশি লাভ।

রাজিব মোল্লা নামের আরেক তরুণ চাষি বলেন, চলতি বছর ১২ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। ফলন হয়েছে ভালো। আগাম বাজারজাত করার জন্য ব্যাপারীরা সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাম বলেছে। এ টাকায় বিক্রি করলেও খরচ বাদে আমার দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান স্বপন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি। বিগত সময়ে গাজর চাষ এ অঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি কৃষকের আর্থিক উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।

গাজর চাষে কৃষকদের সকল রকম সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২৫, ২০২২ ১২:৪০ অপরাহ্ন
ভালো ফলনেও পেঁয়াজের দামে হতাশ চাষিরা
এগ্রিবিজনেস

পাবনায় আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষীরা। তারা জানালেন, বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচই উঠছে না।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের বিক্রয়মূল্য কম হওয়ার তাদেরকেও কম দামেই কিনতে হচ্ছে।

এদিকে, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কম।

পাবনায় চলতি মৌসুমে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বিঘা প্রতি গড় ফলন হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি। তবে হাসি নেই কৃষকের মুখে। তারা বলছেন, এই পেঁয়াজ বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয়ও তুলতে পারছেন না।

কৃষকরা জানালেন, মণ প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৫শ’ টাকা। অথচ প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানালেন, এবার তাদেরকে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। বাধ্য হয়েই কৃষকদের কাছ থেকেও কম দামেই কিনতে হচ্ছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কম। পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার বিষয়টি সংশিষ্ট দপ্তরকে জানানো হবে। চলতি মৌসুমে পাবনায় ৯ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২৩, ২০২২ ৪:৩২ অপরাহ্ন
দেশের সুগন্ধি চালের ঘ্রাণ বিদেশেও
এগ্রিবিজনেস

দেশের মতো আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়ছে সুগন্ধি চালের। কাটারিভোগ, কালিজিরা, চিনিগুঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের চাল যাচ্ছে বিশ্বের ১৩০ টির বেশি দেশে। তবে রপ্তানির তালিকায় এগিয়ে রয়েছে চিনিগুঁড়া চাল। মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশই এই চাল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এসব চালের বড় ক্রেতা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। রপ্তানি অনুমোদন বাড়ালে এবং কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধান হলে বড় আকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে। বিশেষ করে সরবরাহ ব্যবস্থা, মোড়কীকরণ ও মান সনদে গুরুত্ব দিলে খুব দ্রুতই বাজার বড় হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের চালে স্বাদ ও মানের কারণেই মূলত এই চাহিদা বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সরেজমিন উইং সূত্রে জানা যায়, সাধারণত দেশে আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধানের আবাদ হলেও বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল সুগন্ধি ধান আউশ ও বোরো মৌসুমেও চাষ করা হচ্ছে। উৎসবপ্রিয় ও ভোজনরসিক বাঙালি সুপ্রাচীনকাল থেকে সাধারণ ধানের পাশাপাশি সুগন্ধি ধানের চাষ করে আসছে। তবে লাভজনক হওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ধানের বাণিজ্যিক চাষাবাদও শুরু হয়েছে। এতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি সাধারণ চাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে সুগন্ধি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। এর মধ্যে চিনিগুঁড়ার দামই সবচেয়ে বেশি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ৬৬ হাজার ৩০৫ মেট্রিক টন সুগন্ধি ধান উৎপাদন হয়। পরের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৮ মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয়।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো দাম পাওয়ায় সুগন্ধি ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। ভরা মৌসুমে এক মণ মোটা ধান বিক্রি করে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পাওয়া যায়। বিপরীতে প্রতি বস্তা চিকন সুগন্ধি চালের ধানের দাম তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ জন্য কৃষক অধিক লাভের আশায় সুগন্ধি ও চিকন ধানের আবাদ বাড়াচ্ছেন।

গত ১০ বছরে ধারাবাহিকভাবে সুগন্ধি চালের রপ্তানিও বেড়েছে। বাংলাদেশের কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্যাকেটজাত সুগন্ধি চাল আরব আমিরাত, ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩৬ দেশে রপ্তানি করছে। এসব সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর রপ্তানি করা সুগন্ধি চালের পরিমাণ প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যা ছিল মাত্র ৬৬৩ টন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘দেশের সুগন্ধি চালের চাহিদা বিভিন্ন দেশে বাড়ছে। এর বড় কারণ—এই মানের চাল সাধারণত কোনো দেশেই উৎপাদন হয় না। বিশেষ করে চিনিগুঁড়া চাল। পোলাউ, ফ্রাইডরাইস ও পায়েস-ফিন্নি খেতে দেশের এই চালের কোনো বিকল্প নেই। ’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন ৪০৯ কেজি সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ১০ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন ৫২৯ কেজিতে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতিতে রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। এ সময় ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশ রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘সুগন্ধি চালের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন ৫০০ থেকে এক হাজার টন রপ্তানি হতো। এখন তা ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন হচ্ছে। এই চালের ৯৫ শতাংশ ক্রেতাই বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা। ’

তবে সুগন্ধি চালের রপ্তানি এখনো উন্মুক্ত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানি এখন পর্যন্ত সরকার নিরুৎসাহ করছে। দেশের বাজারের কথা চিন্তা করেই হয়তো এটা করছে। তবে সরকার রপ্তানি অনুমোদন আরো বাড়ালেও দেশে ঘাটতি হবে না। কারণ দেশে চাহিদার তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন উদ্বৃত্ত থাকে প্রতিবছর। নিয়মিত চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বেসরকারি খাতের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান প্রাণ, ইস্পাহানি, স্কয়ারসহ অনেকে রয়েছে এ তালিকায়।

প্রাণ-আরএফএলের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘বহির্বিশ্বে সুগন্ধি চালের চাহিদা অনেক। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুসারে দিতে পারি না। গত বছর আমাদের শুধু চাল থেকেই রপ্তানি আয় হয়েছিল আট মিলিয়ন ডলার। চলতি বছর ছয় হাজার টন রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছি। চাহিদা রয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। সরকার চাইলে এই খাত থেকে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি অনুমোদনের সীমা বাড়াতে হবে। ’

বাংলাদেশ ৯টি পণ্য জি-আই বা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ছিল দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও কালিজিরা চাল। জিআই সনদ পওয়ায় দেশীয় ব্র্যান্ড পণ্য হিসেবে বহির্বিশ্বে জায়গা করে নিতে পারবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানা যায়, চালের রপ্তানি বাড়াতে মান সনদ প্রদানকারী চলতি বছর স্থাপনকৃত ব্রির ল্যাবটিকে আইএসও মানের করে গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এটি আইএসও সনদ পাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। এতে ল্যাব কর্তৃক কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট যেকোনো দেশেই গ্রহণযোগ্য হবে।

দেশে ৩২ ধরনের ধানের চাষ হচ্ছে। অতিসুগন্ধি জাতগুলো হলো—কালিজিরা, চিনিগুঁড়া, কাটারিভোগ, তুলসীমালা, বাদশাভোগ, খাসখানী, চিনি আতপ, বাঁশফুল, দূর্বাশাইল, বেগুনবিচি, কালপাখরী ইত্যাদি। হাল্কা সুগন্ধযুক্ত জাতগুলোর মধ্যে কৃষ্ণভোগ, গোবিন্দভোগ, পুনিয়া, কামিনী, জিরাভোগ, চিনিশাইল, সাদাগুঁড়া, মধুমাধব, দুধশাইল উল্লেখযোগ্য।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২৩, ২০২২ ১২:৩৫ অপরাহ্ন
উৎপাদন খরচই উঠছে না আলুচাষিদের
এগ্রিবিজনেস

আগাম আলু চাষ করে লোকসানের মুখে ঠাকুরগাঁও ও জয়পুরহাটের চাষিরা। বাজারে পুরনো আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় নতুন আলুর চাহিদা কম। এ কারণে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না চাষিরা। তবে পুরাতন আলুর মজুদ শেষ হলেই কৃষকরা আলুর নায্যমূল্য পাবেন বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত কয়েক বছর ধরে আলুর ভালো ফলন হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। ক্ষেতে আলু তোলার ব্যস্ততা। গেলবারের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার আগাম আলু আবাদ করেছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা। তবে প্রত্যাশিত ফলন পেলেও কাঙ্খিত দাম পাচ্ছেন না। তাই লোকসান এড়াতে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার দাবি তাদের।

চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষে ব্যয় হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

এ নিয়ে কৃষি বিভাগ বলছে, পুরনো আলুর মজুদ শেষ হলেই ন্যায্যমূল্য পাবে কৃষকরা। এবার ২৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু হোসেন বলেন, বাজারে এখন আলুর দাম তুলনামূলক কম কারণ গত বছরের যে সমস্ত আলু রয়েছে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে। এগুলো শেষ হলে আমরা আশা করি কৃষকরা যথাযথ আলুর দাম পাবেন।

এদিকে, আবহাওয়া ভালো থাকায় জয়পুরহাটেও আগাম আলুর ফলন ভালো হলেও কাঙ্খিত দাম পচ্ছেন না চাষিরা।

প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। প্রকারভেদে প্রতি মণ আলু বিক্রি করে ১৫০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে উৎপাদন খরচও উঠছে না।

তবে, আলুর দাম কম হলেও লোকসান নয়, লাভ কমেছে বলে দাবি জেলা কৃষি কর্মকর্তাদের।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার ৪০ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। কৃষক ভাইয়েরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য উপযুক্ত সময়ে সঠিক জাত চাষাবাদ করতে হবে। তাহলে তারা লাভবান হবেন।

লোকসান ঠেকাতে সার কীটনাশক ও বীজের দাম কমানোর পাশাপাশি আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি কৃষকদের।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২২, ২০২২ ৩:৫১ অপরাহ্ন
শীতকালীন সবজির ভালো দাম পেয়ে জাজিরার কৃষকের মুখে হাসি
এগ্রিবিজনেস

বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় শীতকালীন সবজির দাম দ্বিগুণেরও বেশি পেয়ে জাজিরার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। আবহাওয়া শীতকালীন সবজির অনুকূলে থাকায় কৃষকরা ফলনও পেয়েছেন বেশ ভালো। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কারিগরি সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অধিক ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় আশপাশের কৃষদের মধ্যেও সবজি আবাদের আগ্রহ বেড়েছে অনেক।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জামাল হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও জাজিরার কৃষকরা বন্যার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার সাথে সাথে শীতকালীন সবজি আবাদ করেছেন। আবহাওয়া শীতকালীন সবজি আবাদের অনুকূলে থাকায় কৃষকরা ফলন পেয়েছেন ভালো। কৃষকের উৎপাদিত সবজি একটু আগাম বাজারে আসায় দামও পেয়েছেন বেশ ভালো। প্রতি কেজি করলা পাইকারি ৭০-৮০ টকা ও বেগুন ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি করে তারা বেশ লাভবান হয়েছেন। শীতকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে করলা, বেগুন, লাল শাক, শশাসহ নানান জাতের সবজি।

এ বছর জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ৩শ’ ৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে।

মিরাশার সমবায় কৃষি বাজারের পাইকার মো: আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, এবছর কৃষকরা সবজির যে বাজার মূল্য পেয়েছেন, তা বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শুধু কৃষকরাই নয় এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারের ছোট-বড় পাইকাররাও অনেক লাভের মুখ দেখেছেন।

মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের বেগুন চাষি মো: ফারুক মোল্লা বলেন, এবছর আমরা একটু সবজির আগাম ফলন পেয়েছি। প্রথম দিকে প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৭০টাকা কেজি ও করলা ৭০-৮০ টাকা পাইকারি বিক্রি করেছি। এখনো মৌসুমের শেষের দিকে বেগুন ৩০-৩৫ টাকা ও করলা ৪৫-৫০ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করছি। বেগুন করলা ছাড়াও অন সব শীতকালীন সবজির দামই অন্যান্য বছরের তুলনায় আমরা বেশি পেয়েছি।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২২, ২০২২ ৩:১৯ অপরাহ্ন
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে উচ্চ মূল্যের সবজি চাষে স্বাবলম্বী শাকিল
এগ্রিবিজনেস

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের গোমজানি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ শুভ আধুনিক পদ্ধতিতে বেশ কয়েকটি উচ্চ মূল্যের সবজি চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন । শিক্ষিত হলেই শুধু চাকুরির পেছনে ছুটতে হয় এমন ধারনা বদলে দিয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ ।

এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের বিদেশী জাতসহ প্রায় ১০ রকম সবজি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন । শাকিলের সবজি চাষ দেখে স্থানীয় অনেক কৃষকই অনুপ্রাণিত হচ্ছে। গোমজানি সহ আশপাশের গ্রামের অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরা শাকিলের পরামর্শ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতি সবজি ও ফলমূল চাষে ঝুঁকছে ।

জানা গেছে, ২০২০ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে বিএসসি পরীক্ষা শেষ করে শাকিল আহামেদ বেশ কয়েকটি দপ্তরে চাকুরি পরীক্ষা দেন। এতে ১০/১২ হাজার টাকা বেতনে মার্কেটিং চাকুরির জন্য তাকে ডাকা হয় । অথচ মাত্র ১০/১২ হাজার টাকা দিয়ে শহরে থাকাটাই কষ্টকর ব্যাপার মনে করেন সে। জীবিকার ব্যয়বারের কথা চিন্তা করে গ্রামে ছুটে আসে শাকিল । গ্রামে ফিরে বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে বিদেশী জাতের এক প্রকার সবজি স্কোয়াশ চাষ করেন । প্রথম বছর স্কোয়াশ বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করেন তিনি । ফলে কৃষি চাষাাবাদে উৎসাহিত হয়ে এবছর প্রায় ১০ রকম সবজি ও ফল চাষ করেছেন । সেখান থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা লাভ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তার চাষকৃত উল্লেখযোগ্য সবজি ও ফল হলো রেড ক্যাবেজ, ব্রোকলি,রক মেলন, তরমুজ, পাতাকপি, লাউ ও লাল শাক ইত্যাদি ।

উপজেলা কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোমজানি গ্রামের তরুণ উদ্যাক্তা শাকিল আহমেদ শুভ উচ্চমূল্যের প্রায় ১০ প্রকার সবজি ও ফল চাষ করেছে । এতে ওই এলাকা সহ আশপাশের গ্রামের কৃষকরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে । চলতি মৌসুমে শাকিল আহমেদ ৪২ শতাংশ জমিতে স্কোয়াশ, ৪০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকাম, ৫০ শতাংশ জমিতে শসা, ১২৫ শতাংশ জমিতে সমন্বিত মিশ্র ফল ও সবজি চাষ চাষ করছেন। সমন্বিত সবজি চাষের একই জমিতে রয়েছে পেঁপে,টমেটো, শসা, রেড ক্যাবেজ, ব্রোকলি,রক মেলন তরমুজ, পাতাকপি, লাউ ও লাল শাক। একটি জমিকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে সমন্বিত চাষ শুরু করেন। তিনি মোট ২৫৭ শতাংশ জমিতে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৬ লাখ টাকা। ১০ লাখ টাকা বিক্রির টার্গেট নিয়ে কাজ করছে । বর্তমানে তার উৎপাদিত সবজি ও ফল স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্রি হচ্ছে ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষিবিদ ও তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহমেদ শুভ তার জমিতে প্রায় ১০ প্রকার উচ্চমূল্যের বিদেশী সবজিসহ ফল চাষ করেছেন । এয়াড়া আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বিষ প্রয়োগ ব্যতিত পোকা দমন, ক্ষতিকারক সার ব্যবহার না করে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার, পোকা পালন করে মুরগি ও মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে পানি ও সারের অপব্যবহার রোধ করা, অনলাইনে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে পরামর্শের মাধ্যমে আধুনিকরণ করে কৃষিকাজে বিশেষ ভূমিকা রেখে অল্প দিনেই প্রশংসিত হয়েছেন ।

কৃষিবিদ ও তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল আহম্মেদ জানান, বিএসসি পরীক্ষা শেষ করে ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস (কোভিডে-১৯) এর প্রভাবে আর্থিক সংকটে যখন সময় কাটছিল । ওই সংকট সময়ে মানুষের ধারে ধারে ঘুরে একটি ভাল চাকুরির খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেন তিনি । সেই সময়ে মাথায় আসে গ্রামে গিয়ে চাষাবাদ করবে । যেই ভাবনা সেই কাজ গ্রামে ফিরে বাবার কাছ থেকে স্বল্প পরিমানে টাকা নিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন স্কোয়াশ চাষ । এতে দ্বিগুনেরও বেশি লাভ হয় । প্রথমেই লাভের মুখ দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে ঝুঁকেন তিনি । এতে দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি বিভাগ ও ঔষধ কোম্পানির কর্মীরাও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন । বর্তমানে শাকিলের কাছ বেশ কিছু কৃষক ও বেকার যুবকরা পরামর্শ নিয়ে সবজি চাষে লাভবান হয়েছে জানান তিনি ।

এছাড়া ফার্মনেট এশিয়া নামের একটি অনলাইন ভিত্তিক কোম্পানী চালু করেন তিনি। যার কাজ কৃষক- ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় । ফলে কৃষক ও ভোক্তা উভয় শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হবে

দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃশোয়েব মাহমুদ বলেন, গোমজানি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিবিদ শাকিল আহমেদ শুভ উচ্চমূল্যের প্রায় ১০ প্রকার সবজি ও ফল চাষ করে সফল হয়েছে। তরুণ উদ্যাক্তা শাকিল আহমেদ শুভকে দেলদুয়ার উপজেলা কৃষিবিভাগ থেকে সবধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২২, ২০২২ ২:২২ অপরাহ্ন
ক্রেতা নেই ধানের, চালের দাম চড়া!
এগ্রিবিজনেস

আমরা ধান উৎপাদন করে যথাযথ দামে বিক্রি করতে পারছি না। মাঝখানে যারা মাধ্যম রয়েছে তারা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। আমাদের এখানে ৬২ কেজি বস্তা ধানের দাম দেড় হাজার টাকা। এই রেটে চলছে কিন্তু ধান কেউ কিনছে না। দুই একজন যারা কিনছেন তারা ২৩ ধান কিনছেন তাও বাকিতে।

ধান বিক্রি করতে না পেরে আক্ষেপ করে শনিবার (২২ জানুয়ারি) কথাগুলো বলছিলেন খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের আশীষ মণ্ডল।

তিনি আরও বলেন, দাকোপের সুতারখালি এলাকায় প্রত্যেক বাড়িতে শত শত মণ ধান উঠানে ভিজতেছে। কৃষকরা দিশেহারা। সার, বীজ দোকান থেকে বাকি এনেছে সেই পয়সা এখন কোথা থেকে দেবে ভরা মৌসুমে যদি ধান বিক্রি করতে না পারে। এলাকায় কোনো খাদ্য গুদাম নেই যে কৃষকরা ধানগুলো রাখবে। আইলা দূর্গত প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষ ধানগুলো রাখবে কোথায়, ধানগুলোতো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ধানের দাম না বাড়া মিলারদের কারসাজি বলে অভিযোগ তার। তবে কৃষকদের এ অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন মিল মালিকরা।

এ রহমান পরশ অটো রাইস মিলস লিমিটেডের সেলস অফিসার (রাইস) গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা তো ধান কিনতেছি। ধান না কিনলে মিল চালাবো কি করে। ধানের দাম অতিরিক্ত। চালের বাজার থেকে ধানের দাম বেশি। চিকন ধান কিনছি ১১৬০ টাকা মণ দরে। মিনিকেট ও বাসমতি ধান আপাতত কিনছি না। শুধু বালাম ধান কিনছি। মোটা স্বর্ণা কিনছি ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। মিল মালিকরা ধান কিনছে না কৃষকদের এ তথ্য ঠিক না। মোটা ধান হাজার টাকার ওপরে আছে। যা এখন স্বাভাবিক উচিত ছিল ৮০০-৮৫০ টাকায়। মিল থেকে আড়তে চাল যায়। মিল কত টাকায় চাল বিক্রি করছে আর ক্রেতার হাতে কত টাকায় চাল যাচ্ছে এই মাঝখানেই চালের দাম বাড়ছে-কমছে।

খুলনা জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না এটা বলা আমাদের জন্য মুশকিল। কৃষক আমাদের কাছে আসছে না। না আসার কারণ যেটা আমি বুঝি ধানে আদ্রতা বেশি বলে আমরা নিতে পারছি না। আবহাওয়া খারাপ যাওয়ার কারণে মিলাররা সঠিক সময়ে ধান শুকাতে পারছে না যার কারণে চালের দাম বেশি। আগে যে ধান এক দিনে শুকানো যেন তিন দিনেও এখন ধান শুকাতে পারছেন না। ১৪ শতাংশের ওপরে আদ্রতা গেলে আমরা ধান নিতে পারি না। কিন্তু কৃষকরা ১৮-১৯ শতাংশ আদ্রতার ধান নিয়ে আসে। যা নেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক কৃষক ধান পরিষ্কার করেন না। মারাই দিয়েই বাজারে নিয়ে আসেন যা পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। আমাদের পক্ষে তা কেনা সম্ভব হয় না।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, আমনের ভরা মৌসুমেও খুলনায় বেড়েছে চালের দাম। পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে বেশি। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষসহ সব ধরনের ভোক্তারা।

তারা চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

বড় বাজারের মুরাদ ট্রেডার্সের ম্যানেজার জিয়াউল হক মিলন বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে খুলনায় কিছুদিন ধরে চালের দাম বেড়েছে। ১৫ দিনের ব্যবধানে মিনিকেট ৫৬ থেকে বেড়ে ৬২ টাকা হয়েছে। বাসমতি ৬৪,৬৮ – ৭০,৭২,৭৩ টাকায়, ২৮ বালাম ৪৭ – ৪৯ টাকায়, নাজিরশাইল ৬০–৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২২, ২০২২ ১২:৪৮ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে বেড়েছে পান চাষ
এগ্রিবিজনেস

রাজশাহীতে এবছর বেড়েছে পানের চাষ। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে পানের বরজের সংখ্যা। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায়, পান চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

গত মৌসুমে রাজশাহীতে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ৭৬ হাজার ১৫২ মেট্রিকটন পান উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজারমূল্য ১৮’শ কোটি টাকারও বেশি। এর আগের অর্থবছরে ৪ হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে ৭২ হাজার ৩৩১ মেট্রিকটন পান উৎপাদিত হয়েছিল।

রাজশাহীর পান সুমিষ্ট হওয়ায়, এর চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। বরজ এবং স্থানীয় হাটে চাষিরা সরাসরি পান বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। অন্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানের চাষ।

পান চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। পান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আগামীতে আরো কর্মসূচি নেয়া হবে বলে জানালেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা: উম্মে ছালমা।

পান নিয়ে গবেষণা ও বাজার সম্প্রসারণে টেকসই উদ্যোগ নেয়া হলে রাজশাহীর পান হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় খাত।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২১, ২০২২ ৫:০৩ অপরাহ্ন
এক মণ আলু বিক্রি করে তিন বেলার ভাত
এগ্রিবিজনেস

গ্যানোলা আলু তিন টাকা কেজি। মোটা চালের সর্বনিম্ন বাজারদর ৪২ টাকা কেজি। যদি আলু তিন টাকা করে কেজি হয় তাহলে ১৪ কেজি আলু বিক্রি করে এক কেজি চাল কেনা যাবে। আর আমার বাড়িতে দৈনিক চাল লাগে প্রায় তিন কেজি। তাহলে হিসাব অনুযায়ী এক মণ আলু বিক্রি করে আমার বাড়িতে তিন বেলার ভাত হয়। তবে কেমনে হবে, এভাবে কি চলা যায়?

আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুরের সদর উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার কৃষক মমিনুল ইসলাম। মমিনুল ইসলাম পেশায় কৃষক, অবসর সময়ে পল্লী চিকিৎসকের পেশায় নিযুক্ত তিনি। তবে শহর খুব কাছে হওয়ায় কৃষি পেশাই তার ভরসা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাত জন। পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনবেলা খাবারে লাগে প্রায় তিন কেজি চাল।

মমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন আলু লাগাই তখন বীজ বেশি দামে কিনেছি। এখন আলু তুলবো, আলুর দাম নাই। এই আলুগুলো যদি দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে পাঠানো যেতো তবে হয়তো দাম ভালো পাইতাম। কিন্তু এখন আলুগুলো যাচ্ছে না। আলুতে এবার এত লোকসান, জমিতে যে সার-বিষ দিছি সেগুলোর খরচই উঠবে না।

বর্তমানে গ্যানোলা আলু তিন টাকা কেজি যাচ্ছে। এই দাম দিয়ে তো কাজের লোকের টাকাই উঠে না। যদি আলু সাত টাকা দরে বিক্রি করি, তবে হয়তো আলুর বীজের দামটা উঠবে। কিন্তু বাকি সব খরচের টাকা উঠবে না। এজন্য আমরা কৃষকরা এবার ধরা। সরকার যদি আমাদের কৃষকদের বিভিন্ন ভূর্তকি দিয়ে দেখতো তবে হয়তো ভালো হতো। এ বছর আলু আবাদ করেছি ২ বিঘার মতো। খরচ এখন পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকার মতো হয়েছে।

মমিনুল ইসলামের মতো অবস্থা দিনাজপুর জেলার প্রায় সব কৃষকেরই। আলুর দাম নেই, ফলে কৃষকের এবারে মাথায় হাত। জেলায় আগাম জাত হিসেবে কৃষকরা গ্যানোলা, ক্যারেজ ও স্টারিজ জাতের আলুর চাষ করেন। এবারে গ্যানোলা আলু কৃষকরা বিক্রি করছেন কিন থেকে পাঁচ টাকা কেজি, আর ক্যারেজ ও স্টারিজ আলু বিক্রি করছেন সাত টাকা কেজি দরে। ফলে সবারই এবারে লোকসান।

বিরল উপজেলার মাঝাডাঙা এলাকার কৃষক লক্ষ্মী কান্ত রায়, আমি এবার দুই বিঘা আলু লাগাইছি। আলু উঠাইছি ভাই কিন্তু দাম নাই। তিন টাকা-চার টাকা আলু বিক্রি করলে লাভ হবে। বিষ, সার, বীজ মিলে বিঘা হারে খরচ হইছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখন আলুর দাম যদি ভালো থাকতো তবে হয়তো ভালো লাভ হতো। দুইটা টাকার মুখ দেখতে পেতাম।

বিরল উপজেলার মাঝাডাঙা এলাকার রাজ কুমার রায়, এ বছর দুই বিঘা আলু আবাদ করেছি। বর্তমানের আলু তিন চার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই আলু যদি সাত টাকাও বিক্রি হয় তবুও লাভ থাকবে না। এই আলু এখন ১২ হইতে ১৪  টাকা বিক্রি হইলে তবেই লাভ হতো।

রফিকুল ইসলাম নামে এক আলু চাষি বলেন, তিন বিঘা মাটিতে খরচ এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে সাত-আট টাকা কেজি দরে। এভাবে লাভ হবে না। সরকার তো আমাদের দিকে দেখে না। সরকার যদি আলুর দামটা ঠিক রাখতো। ১৪ থেকে ১৫ টাকা যদি আলু কিনতো তবে লাভ হতো।

মালঝার এলাকার কৃষক আব্বাস আলী বলেন, বাজার খুবই খারাপ। ক্যারেজ আলু সাত টাকা কেজি, গ্যানোলা আলু ৪-৫ টাকা কেজি। আমি ক্যারেজ আলু লাগাইছি। সেই সময়ে বীজ আলু নিয়েছি ৩০-৩৫ টাকা কেজি। সার-বিষ, কামলা-কৃষাণ অনেক খরচ। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৬৭ বস্তা। প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি। সাত টাকা কেজি বিক্রি করে পোষাবে না।

তার দেওয়া হিসাব মতে প্রতি বিঘায় আলু হয়েছে চার হাজার ৩৫৫ কেজি থেকে চার হজার ৬৯০ কেজি। সাত টাকা করে কেজি হিসেবে এর দাম পড়ে ৩০ হাজার থেকে ৩৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ নিজের জমিতে চাষাবাদ করে তার লোকসান গুনতে হবে ২ থেকে ৭ হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবারে জেলায় ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি হেক্টরে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৩ দশমিক ৭৭ মে.টন। এ পর্যন্ত আলু রোপণ হয়েছে ৪৬ হজার ৯১০ হেক্টর জমিতে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ এএসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও অনেকেই আলু রোপণ করছেন, ফলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে আলু চাষাবাদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় অনেকেই আগাম আলু চাষে ঝুঁকছেন। এবারে উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারদর ঠিক থাকলে কৃষকরা হয়তো লাভবান হতেন। তবে কৃষকরা যদি দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই তিন থেকে চার মাস আলু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, তাহলে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop