২:৫৮ অপরাহ্ন

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিনি কোল্ড স্টোরেজ
ads
প্রকাশ : মার্চ ২৪, ২০২১ ২:৪২ অপরাহ্ন
কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিনি কোল্ড স্টোরেজ
কৃষি গবেষনা
কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মিনি কোল্ড স্টোরেজ

কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুবি গবেষকের স্বল্প মূল্যের হিমায়িত সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলে উন্নয়নশীল দেশসমূহে ফল ও শাক-সবজির সংগ্রহত্তোর ক্ষতি ৫০% এর উপর; বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম নয়। খবরের কাগজ খুললে নজরে আসে সবজির সঠিক সংরক্ষণের অভাবে কৃষক সঠিক দাম পাচ্ছে না। এছাড়া দিনমজুরের উচ্চমূল্যের ফলে সবজি সংগ্রহ করাই দুরূহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে প্রতিবছর মাঠেই নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সবজি। কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র পরিসরে তৈরি হিমায়িত সংরক্ষণাগার এই ক্ষতি লাঘবে অনেক ভূমিকা রাখতে পারবে। এর ফলে কৃষকের আয় বাড়াতে সহায়তা করবে এবং গ্রামীণ পর্যায়ে এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের এক বিপ্লব সাধিত হতে পারে এমনটি অভিমত ব্যক্ত করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রকল্পের গবেষক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ। তিনিই এই কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করেছেন মিনি কোল্ড স্টোরেজ।
জানা যায়, হিমায়িত ফল ও শাক সবজির সংরক্ষণাগার প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নেই বাংলাদেশে। এর প্রধান কারণ সংরক্ষণাগার তৈরির নির্মাণ খরচ ও কৃষকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব অথবা ফল ও শাক-সবজি শীতলীকরণের উপকারিতা পুরাপুরিভাবে না জানা। অথচ শুধু তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণই ফল ও শাক-সবজি সংরক্ষণকাল ১ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। বাস্তবতার ক্ষেত্রে কৃষক তার উৎপাদিত ফল ও শাক-সবজি বেশিদিন সংগ্রহ করে রাখতে পারে সে সব কৃষক বেশি দামে তাঁর উৎপাদিত দ্রব্য বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে পারে ও আর্থিকভাবে লাভবান হন। ফল ও শাক সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ খরচ কমানো ও সহজে বোধগম্য প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্টোর ইট কোল্ড’ কোম্পানি যুগোপযোগী এক নতুন শীতলীকরণ যন্ত্র আবিষ্কার করে যার নাম কুলবোট। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালির্ফোনিয়া ডেভিস এর হর্টিকালচার ইনোভেশন ল্যাবরেটরি। এই কুলবোট প্রযুক্তি ছোট পরিসরের কৃষকের ফল ও শাক-সবজির সংরক্ষণাগার হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ গবেষণা কাজের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অধীনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে এই কুলবোট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০ ফিট * ৮ ফিট * ৯ ফিট মাপের স্বল্পমূল্যের একটি হিমাগার তৈরি করেছেন। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন প্যাকেজিং দ্রব্য এবং প্রি-কুলিং মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে পচনশীল আকর্ষণীয় দামি স্ট্রবেরি ফলের সংরক্ষণকাল বাড়ানো। প্রধান গবেষক উল্লেখ করেন তিনি স্ট্রবেরি ফলের প্রি-কুলিং এর জন্য তিনটি মাধ্যম ব্যবহার করেন, যেমন কুলবোট প্রযুক্তি, হাইড্রোকুলার এবং সাধারণ টেবিল ফ্যানের বাতাসে শীতলীকরণ। প্রাথমিকভাবে ব্যয় কুলবোট প্রযুক্তিতে বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল বিবেচনায় কুলবোট এই তিন মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী। কুলবোট প্রযুক্তির মাধ্যমে হিমাগার তৈরির জন্য একটি স্বতন্ত্র পাকা ঘর, একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (্এসি), একটি কুলবোট, শোলা, ইনসুলেশন পেপার ও একটি কনসিল দরজা প্রয়োজন। যদি কারো স্বতন্ত্র ঘর থাকে তবে হিমাগারে নির্মাণ খরচ অনেকাংশে কমে যাবে বলে প্রধান গবেষক মনে করেন। হিমাগার নির্মাণের সম্ভাব্য উল্লেখযোগ্য খরচ হিসেবে যেখানে থাকবে কুলবোটের দাম- ২৫,৫০০ টাকা, এসি ১.৫ টন বা ২ টন ৮৫,০০০ টাকা, ইনসুলেশন ও শোলা ৫০০০ টাকা, ঘর নির্মাণ খরচ ১,৫০,০০০ টাকা, বিবিধ ১০,০০০ টাকা সর্বমোট ২,৭৫,৫০০ টাকা (আনুমানিক)। পক্ষান্তরে, জমির দামসহ একটি ছোট আকারের হিমাগার তৈরির জন্য আনুমানিক এক থেকে দুই কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন যা সাাধারণ কৃষকের পক্ষে জোগাড় করা দুরূহ ব্যাপার। কুলবোট প্রযুক্তির বড় অন্তরায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ। যদিও সোলার প্যানেল ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে প্রধান গবেষক মনে করেন। তাছাড়া দেশে এখন আর ততোটা লোডশেডিং হয় না।
তিনি মনে করেন ১০ ফিট * ৮ ফিট * ৯ ফিট ঘরে একজন কৃষক ৪০-৫০ মন ফল ও শাক-সবজি যেমন আলু, আম, স্ট্রবেরি, ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। বিশেষ করে অসময়ে ফল ও শাক-সবজি সরবরাহে বাড়তি একটি ভূমিকা রাখতে পারবে এবং বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। এই অল্প খরচের হিমাগার (মিনি কোল্ড স্টোরেজ) বাংলাদেশের মত কৃষিপ্রধান দেশে অনস্বীকার্য বলে প্রধান গবেষক মনে করেন। কৃষক চাইলেই তাদের বিভিন্ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে বা সক্ষম শ্রেণির কৃষক বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই হিমাগার তৈরি করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।
গবেষণা কাজের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ আরও মনে করেন, নন ক্লাইম্যাকট্রিক ফল (স্ট্রবেরি) সম্পূর্ণ পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়। এই ফলের বৈশিষ্ট্য সংগ্রহের পর ফলের ভিতর শ্বসন প্রক্রিয়া বেড়ে যায় যা ফল দ্রুত পচনের অন্যতম কারণ। এজন্য ফল সংগ্রহের পরপরই প্রি-কুলিং করা খুবই প্রযোজন। যার ফলস্বরূপ শ্বসন প্রক্রিয়া কমে যাবে এবং ফলের সংরক্ষণকাল বেড়ে যাবে অনেকদিন। যদিও প্রি-কুলিং অপারেশন বাংলাদেশে চোখে পড়ে না। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে এখন স্ট্রবেরির চাষাবাদ অনেকাংশে বেড়েছে এবং কৃষকরা আকর্ষণীয় লাভজনক ফল হিসাবে স্ট্রবেরি উৎপাদন করছে। কিন্তু ফল সংরক্ষণাগারের অভাবে তারা সঠিক দাম পাচ্ছে না এবং বেশি দিন স্ট্রবেরি সংরক্ষণ করে রাখতে পারছে না। আলু, টমেটো, গাজরসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা বিরাজমান।
গবেষক মনে করেন, কুলবোট প্রযুক্তির হিমাগার এ সমস্যার সমাধানে অনেকাংশেই সফল হবে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ডুমুরিয়া, তালা, কেশবপুর উপজেলা বাংলাদেশের সবজি উৎপাদনের এক রোল মডেল। এ সকল অঞ্চলে এই হিমাগার তৈরি করলে এই অঞ্চলের কৃষকরা ফল ও শাক-সবজির অনাকাঙ্খিত সংগ্রহত্তোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা ও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এছাড়া পরিবারের পুষ্টির সুষম বন্টন নিশ্চিত হবে বলেও প্রধান গবেষক মনে করেন। একই সাথে এই কুলবোট প্রযুক্তিতে তৈরি মিনি কোল্ড স্টোরেজ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র পরিসরে কৃষিপণ্য সংরক্ষণে বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে আশাবাদ পর্যবেক্ষক মহলের।
তথ্যসূত্রঃ খুবি ফেসবুক পেইজ
শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop