গবাদি প্রাণির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়
প্রাণিসম্পদ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের একটি বিষয়। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন লাইভস্টকের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা। দেশের অনেকেরই জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গরু মহিষের খামার । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে গবাদি প্রাণির দুধ উৎপাদন এবং স্বাস্থ্যের উপর, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন কৃষক ।
দুগ্ধজাত গবাদি প্রাণির উপর জলবায়ুগত প্রভাবের ফলে যে সব সাধারণ লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তা হলো- খাদ্য গ্রহণ হ্রাস, দুধ উৎপাদন এবং দুধের চর্বি হ্রাস, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস।
দুধ উৎপাদনের উপর প্রভাব – তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে গবাদি প্রণিরা কম খাদ্য গ্রহণ করে। যদি পানির ব্যবস্থাপনা সঠিক না হয়, তাহলে প্রাণি তার শরীরে থাকা পানিকে দুধ উৎপাদনে ব্যবহার না করে তার শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহার করে। যার কারণে দুধ উৎপাদন ও দুধে চর্বি কমে যায়।
প্রজনন কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব – দুগ্ধজাত প্রাণিরা শীতের তুলনায় তাপের প্রভাব বেশি অনুভব করে, যা দুগ্ধজাত প্রাণির প্রজনন কর্মক্ষমতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। বেশি তাপের প্রভাবে প্রাণি কম গরমে আসে, গরমে এলেও ভালোভাবে তাপের লক্ষণ দেখা যায় না। এদিকে গর্ভবতী গবাদিপ্রাণির অকালে ভ্রুণ মৃত্যুর সম্ভাবনাও প্রবল।
প্রচন্ড গরমে গবাদিপ্রাণির যত্নে যা যা করনীয়ঃ –
- তাপ এবং শক্তিশালী সূর্যালোক থেকে প্রাণিদের রক্ষা করুন।
- গবাদি প্রাণির জন্য ঘন ছায়াযুক্ত গাছ লাগান।
- খোলা এবং বায়ুচলাচল শেড তৈরি করুন যা প্রাণীদের আর্দ্রতা এবং সরাসরি সূর্যালোক থেকে রক্ষা করে।
- শেডের ছাদ পরিষ্কার এবং সাদা রঙের হতে হবে।
- পুকুরে মহিষকে গোসল করানো এবং ধারায় ঝর্ণার পানি ছিটিয়ে দেওয়া।
- প্রাণির জন্য সর্বদা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
- পাখা, কুলার, ফোয়ারা ইত্যাদির মতো শেড কুলিং ডিভাইসের ব্যবস্থা।
- একটি সুষম খাদ্য নিশ্চিত করুন, যাতে প্রায় ১৬ শতাংশ হজমযোগ্য অপরিশোধিত প্রোটিন থাকা উচিত।
- খনিজগুলির পরিপূরক করার জন্য পশুর খাদ্যে ধাতব স্ক্র্যাপ যোগ করুন।
- গ্রীষ্মকালে ১০ টার আগে এবং ৪-৫ টার পরে খাবার প্রয়োগ করুন।
- মাঠে চরাতে গবাদি প্রাণিকে বাইরে পাঠাবেন না। শীত না হলে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সকালে বা সন্ধ্যায় চরাতে হবে ।
আশা করা যায় উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে খামারিরা তাদের দুগ্ধজাত প্রাণিকে প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচাতে পারবেন এবং দুগ্ধ ব্যবসা থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে।