৪:৪৭ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • পদ্মা সেতু কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনবে-
ads
প্রকাশ : জুন ২৩, ২০২২ ৩:১৮ অপরাহ্ন
পদ্মা সেতু কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনবে-
কৃষি বিভাগ

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু ,বাকৃবি: পদ্মা সেতু চালু হওযার ফলে বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে এ এলাকার কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং অল্প সময়ে কৃষি পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পারবে। ফলে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হ্ওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে ব্যাপকভাবে। খুলনা ও বাগেরহাটের মাছ, যশোরের সবজি আর ফুল, পটুয়াখালীর মুগডাল-তরমুজ-মাছ, মাদারীপুরে প্রচুর পেঁয়াজ-মসুর-সরিষা, বরিশালের ধান ও পানসহ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের ও আওযামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম এর সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আবু হাদী নূর আলী খান এর সভাপতিত্বে বাকৃবি শিক্ষক কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ রমিজ উদ্দিন এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে মাগুরার লিচু চাষীরাই আগামী বছর থেকে প্রতি মৌসুমে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বাড়তি লিচু বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। লিচুর পাশাপাশি মাগুরায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি, ১২ হাজার হেক্টরে পেঁয়াজ ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জমিতে কাচামরিচের চাষ হয়।

পাট-পেঁয়াজ আবাদে দেশের মধ্যে অন্যতম ফরিদপুর জেলা। এসব পণ্য দ্রæত ঢাকার বাজারে পাঠানো সম্ভব হবে। যশোর ও ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের কদর আছে দেশ জুড়ে। এখানকার পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছের বাগানও করা যেতে পারে।

এখন অঞ্চলগুলোতে রপ্তানিমুখী কৃষি ভিত্তিক পণ্যগুলোর জন্য জোন চিহ্নিত করতে হবে। দেশে কৃষি পণ্যের জন্য উপযুক্ত কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে । কৃষির পাশাপাশি কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত না করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ভারী শিল্প কারখানা, সমৃদ্ধ হবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিসহ পুরো বাংলাদেশ।

কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানিমুখী কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা অতি দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে এবং সেখানকার কৃষকদের জীবন ও জীবিকায় সূচনা হবে এক নতুন অধ্যায়ের।

প্রফেসর ড. মোঃ রমিজ উদ্দিন বলেন, এছাড়া প্রাণিসম্পদ খাতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা হবে উল্লেখযোগ্য। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো তে বিশেষকরে শরীয়তপুর এই বছরে উৎপাদন হয় ৮১ হাজার টন মাংস ও ১ লাখ ৫ হাজার টন দুধ।প্রতি বছর জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৪২ হাজার টন মাংস ও ৩২ হাজার টন দুধ উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এতদিন ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে উদ্বৃত্ত এসব মাংস ও দুধ ঢাকায় বিক্রি করা যায়নি। তুলনামূলক কম দামে বাড়তি মাংস ও দুধ বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে খামারিদের। এখন সেতু চালু হলে মাত্র ২ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাবে এসব দুধ ও মাংস।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মৎস্য সেক্টর বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি খাত থেকে এরকম বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রচলিত পদ্ধতিতে যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদিত হচ্ছে তার বর্তমান স্থানীয় বাজার মূল্য হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকার মত। চাষ পদ্ধতি একটু উন্নত করে আধা-নিবিড় প্রক্রিয়ায় চাষ করলে চিংড়ির উৎপাদন ৭ গুণ বাড়াানো সম্ভব, এবং যার ফার্মগেট মূল্য হচ্ছে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। যা দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশে চিংড়ি খামারের আয়তন ও উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ২৫৭৮৮৮ হেক্টর ২৭০১১৪ মেট্রিক টন। চিংড়ি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য। সামগ্রিক কৃষিক্ষেত্রে চিংড়ি একমাত্র রপ্তানিযোগ্য পণ্য যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চিংড়ি উৎপাদনের ৯০% এরও বেশি উৎপাদিত হয় খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে। প্রচলিত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের উৎপাদনশীলতা অত্যন্ত কম, যা বর্তমানে হেক্টর প্রতি এক মেট্রিক টনের মত। প্রচলিত পদ্ধতির এই চিংড়ি খামারগুলোতে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করলে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ৭ থেকে ৮ টনে উন্নীত করা সম্ভব। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সাথে সাথেই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়ি চাষ এলাকায় ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পদ্মা সেতুর সুদূর প্রসারী প্রভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় চাষীদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্যোক্তাদের তথ্য ও জ্ঞানের আদান-প্রদান হবে। তাতে করে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিচালিত চিংড়ি খামারের উৎপাদনশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে, আন্তর্জাতিক মানদন্ডে চিংড়ি উৎপাদিত হবে এবং বিদেশে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

রপ্তানি বাজার এর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে বিশেষ করে রাজধানী শহর থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে চিংড়ির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, চাষিরা অধিক মূল্য পাবে এবং লাভবান হবে। অনেক দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা বিশেষ করে আধুনিক চিংড়ি চাষী, মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারী, ঔষধ সরবরাহকারী, মাছ-চিংড়ি বিপণনকারী, রপ্তানিকারক, ইত্যাদি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারা এ সমস্ত অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন।

শিক্ষক নেতারা এসময় আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসিকতা ও দৃঢ় আতœবিশ্বাসের অবিশ্বাস্য এক রূপকথা পদ্মা সেতু। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র ভেদ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সক্ষমতাকে আরও একবার জানান দিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। তাই পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এটি বাঙালি জাতির গৌরব, মর্যাদা আর অহঙ্কারের প্রতীক। এ সেতুর প্রতিটি পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির আবেগ ও জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয় ও দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি।

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মো: জয়নাল আবেদীন, বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সুবাস চন্দ্র দাস, প্রফেসর ড. মো এনামুল হক, প্রোক্টর প্রফেসর ড.মুহাম্মদ মহির উদ্দীন, পরিচালক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রফেসর ড. মো: হারুন-অর-রশিদসহ বাকৃবি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম এর শিক্ষক মন্ডলী এবং বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop