প্রশিক্ষণের নামে হাতি শাবক নির্যাতন, কারণ দর্শানোর নির্দেশ
প্রাণ ও প্রকৃতি
প্রশিক্ষণের নামে হাতির বাচ্চাকে বশে আনার জন্য অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের বিরুদ্ধে বন বিভাগ ও থানাপুলিশকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জাস্টিস অব্ দি পিস মুহম্মদ আলী আহসান সোমবার বিকালে এ নির্দেশ দেন।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন এবং প্রাণী কল্যাণ আইন অনুযায়ী হাতির প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন নিরসনে জুড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নিষ্ক্রিয়তায় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে পাহাড়ের গহীনে হাতির মালিকরা পোষ মানানোর জন্য হাতি শাবকদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায়।
স্থানীয়রা জানান, চার বছরের হাতি শাবককে বশে আনতে পেটানো হয় ইচ্ছে মত, কখনো কখনো লোহা দিয়ে তৈরি কুকু ব্যবহার করা হয় নির্যাতনের কাজে। ব্যবসার কাজে নামানোর জন্য অমানবিকভাবে এ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
স্থানীয়ভাবে এ প্রশিক্ষণকে বলা হয় ‘হাদানি’।
এ সময় বাচ্চা হাতিটিকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে বেঁধে রাখা হয়। দুই থেকে তিন মাসব্যাপী চলা এ প্রশিক্ষণের সময় নানা কলাকৌশল শেখাতে মূল অস্ত্রই হল নির্মম শারীরিক নির্যাতন। এই সময় হাতিটি শৃঙ্খলমুক্ত হতে জোরাজুরি করে, যন্ত্রণায় শুঁড় উপরে তুলে কাতরায়।
এ রকম নির্মম নির্যাতনের পর মানুষের বশ্যতা শিকারে বাধ্য করা হয় হাতি শাবক। যার ফলে অনেক হাতি মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে যায়। যাকে স্থানীয় ভাষায় পাগলা হাতি বলা হয়ে থাকে। উক্ত পাগলা হাতির আক্রমণে প্রায় সময় মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
হাতি সুরক্ষার জন্য দেশে প্রচলিত আইন থাকা সত্ত্বেও উক্ত বেআইনী ও প্রাচীন পদ্ধতিতে হাতিকে পোষ মানানো হয় এবং নিষ্ঠুর নির্যাতনের ফলে হাতি শাবক মারাও যায়।
এমতাবস্থায় বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মৌলভীবাজার চিফ জুডিসিয়াল স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই নির্দেশ দেয় আদালত।
আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তদন্তপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী ও মৌলভীবাজার জুড়ী থানা অফিসার ইনচাজ সঞ্জয় চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেয়া হয়।
একই সাথে হাতি নির্যাতনের উক্ত ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা, স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত প্রশিক্ষণের নামে নির্দয় নির্যাতনে কয়টি হাতি মারা গেছে তার সংখ্যা, হাতি কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং হাতির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জুড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, এখনও নির্দেশনা হাতে পাইনি। কাগজ পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।