রাজধানীতে “ভেটেরিনারি শিক্ষায় নারীর যাত্রা, সক্ষমতায় নতুন মাত্রা” শীর্ষক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
প্রাণিসম্পদ
ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মানুষ ও প্রাণির স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন শত বছর ধরে সারা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ভেটেরিনারি শিক্ষা ব্যবস্থা তথা ভেটেরিনারিয়ানরা। মানুষের প্রয়োজনে আবিষ্কৃত ঔষধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, রোগ প্রতিষেধক টিকা এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীতে প্রাতিষ্ঠানিক ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিহাস বহু পুরানো। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে ফ্রান্সের লিযন শহরে ১৭৬৬ সালে পৃথিবীর প্রথম ভেটেরিনারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সূচনালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও মানব স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে সারা বিশ্বের ভেটেরিনারিয়ানরা। দেশের পুরুষ ভেটেরিনারিয়ানরাদের মত নারী ভেটেরিনারিয়ানরাও যেন যুগের সাথে সমানতালে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছে বিভিসি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০শে জুন ২০২২ রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের প্রায় দেড় শতাধিক উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যায়নরত বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীদের নিয়ে “ভেটেরিনারিতে নারী শিক্ষার প্রসারে অবহিতকরণ” সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল BVC)। মূলত ভেটেরিনারি শিক্ষায় প্রসারে নারীদের উদ্ভুদ্ধকরণ এবং নারীরা যাতে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে আরো বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হয় সে লক্ষ্যে নানা বিষয়ক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের নিবন্ধিনভুক্ত ভেটেরিনারি ডাঃ দের তথ্য থেকে দেখা যায় যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর নারী ভেটেরিনারি শিক্ষার্থীদের শতকরা হার কমে গেছে, ফলে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ( APA) এর কার্যক্রমে ভেটেরিনারিতে নারী শিক্ষা প্রসারে কার্যক্রম গ্রহন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিভিসি ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে নারী ভেটেরিনারি প্র্যাকটিশনারদের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহন করে। ঢাকা মহানগরে অবস্থিত মহিলা কলেজ গুলোতে লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার বিতরন এবং উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহন করেছে। গত জুন-১৪-৬-২০২২ এ প্রথমে আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের সকল ছাত্রীদের মাঝে ভেটেরিনারি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক সভার আয়োজন করে বিভিসি।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল এর সদস্য ও প্রাক্তন ভিসি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. গোলাম শাহী আলম। মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে ভেটেরিনারি কাউন্সিল (BVC) এর ( ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার ডাঃ গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস। আহ্বায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, প্রফেসর রেহানা আকতার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক্টোপ্যারাসাইকোলজি অনুবিভাগের ড. বেগম শামছুন্নাহার আহমদ, আরো উপস্থিত ছিলেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যাপক প্রফেসর সাবিকুন নাহার এবং অধ্যাপক শায়লা নাসরিন।
পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এর পর সনাতন ধর্মের গীতা থেকে পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, প্রফেসর রেহানা আকতার, তিনি আগত অতিথি এবং ছাত্রীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি সকল ছাত্রীদের ভেটেরিনারি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক এবং ভেটেরিনারি শিক্ষায় সুন্দর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে চমৎকার দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করেন।
এর পর বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের মূল আলোচক বাংলাদেশে ভেটেরিনারি কাউন্সিল (BVC) এর ( ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার ডাঃ গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার মূল আলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন ভেটেরিনারি শিক্ষায় “নারীর যাত্রা, সক্ষমতায় নতুন মাত্রা” শীর্ষক শ্লোগানের মাধ্যমে
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের ভেটেরিনারি শিক্ষায় ও পেশায় উদ্বুদ্ধকরণে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন ভেটেরিনারি শিক্ষা একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা। এই শিক্ষা গ্রহন শেষে বিসিএস লাইভস্টোক অফিসার, ভেটেরিনারি শিক্ষক, বাংলাদেশ আর্মি, বিজিবি, পুলিশ অফিসার, বন বিভাগ, ঔষধ প্রশাসন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ব্যাংকিং সেক্টরসহ নানামুখী চাকুরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি খাতে দুধ, মাংস, ঔষধ, খাদ্য প্রক্রিয়াযাতকরণ ও প্রসেসিং কারখানাসহ ইত্যাদি গ্রুপ অব প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা ভেটেরিনারি শিক্ষায় যথেষ্ট সচেতন না থাকাতে অনেকেই এই ভেট শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী থাকেনা। তিনি ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ভেটেরিনারি পেশা আপনাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। এই পেশায় রয়েছে দেশে – বিদেশে ব্যাপক চাহিদা সেইসাথে চাকুরির পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুবিধা। ইতোমধ্যে দেশে অনেক ভেটেরিনারি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়াও এ পেশার পেশাগত জ্ঞান অর্জন করে দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানরা ডেইরী, পোল্ট্রি, ল্যাবসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে। ডাঃ গোপাল পরিশেষে বলেন বিভিসি, ঢাকাস্থ সকল মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যায়নরত বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীদের ভেটেরিনারি শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী, ভেটেরিনারি শিক্ষায় প্রসারে নারীদের অবহিতকরণ কার্যক্রম নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।
এরপর বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল এর সদস্য ও প্রাক্তন ভিসি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. গোলাম শাহী আলম, তিনি তার বক্তব্য অত্যন্ত সুনিপুনভাবে ভেটেরিনারি শিক্ষার অদ্যপান্ত, ভেটেরিনারি শিক্ষা নারীরা কেন গ্রহন করবে, ভেটেরিনারি শিক্ষায় নারীদের কি সুযোগ আছে এবং এই শিক্ষায় কি সম্ভাবনা আছে উক্ত বিষয়ে অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন।