শীতে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করবেন যেভাবে
প্রাণ ও প্রকৃতি
শীতের মৌসুমী চন্দ্রমল্লিকা বেশ জনপ্রিয়। এর আদি জন্মস্থান জাপান ও চীন। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়। বাড়ির আঙিনা, বারান্দা ও ছাদে ফুলটি চাষ করা যায়। জাতভেদে ফলন কম-বেশি হয়। গাছপ্রতি বছরে গড়ে ৩০-৪০টি ফুল পাওয়া যায়। সাধারণত চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় ভালো জন্মায়। বাংলাদেশে শীতকালই এ ফুল চাষের উপযুক্ত সময়। জমি অথবা টবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর। বাইরের পাপড়িগুলো সম্পূর্ণ খুললে এবং মাঝের পাপড়িগুলো ফুটতে শুরু করলে খুব সকালে বা বিকেলে ধারালো ছুরি দিয়ে দীর্ঘ বোঁটাসহ কেটে ফুল তোলা উচিত।
চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উর্বর হালকা দো-আঁশ মাটি, উচু, শুষ্ক ও সহজে পানি নিষ্কাশন হয় এমন জমি দরকার। দক্ষিণ খোলা জমি এ ফুল চাষের জন্য উপযোগী। জমিতে লাঙল দেওয়া বা কোপানোর সময় পরিমাণমতো পাতাপচা সার, পচা গোবর সার, হাড়গুড়া বা সুপার ফসফেট প্রয়োগ করে মেশাতে হয়। জমিকে ভালোভাবে কর্ষণ করে মাটি ঝুরঝুরে ও নরম করে ১ ফুট বা ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা বসাতে হয়। চন্দ্রমল্লিকা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান শোষণ করে। এ কারণে জৈব ও রাসায়নিক খাদ্যযুক্ত মাটিতে এ গাছ খুব ভালোভাবে সাড়া দেয়। প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর বা কম্পোস্ট, ৪০০ কেজি ইউরিয়া, ২৭৫ কেজি টিএসপি, ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক অ্যাসিড ও জিংক অক্সাইড সার দিতে হয়। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন আগে পচা গোবর বা কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন আগে মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। সাকার রোপণের ২৫-৩০ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হয়। বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫-৫০ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। উপরি প্রয়োগের পর সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সেচ দিতে হয়।
চন্দ্রমল্লিকার বেড ও টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত। চারা লাগানোর মাসখানেক পর গাছের আগা কেটে দিতে হয়। এতে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়। চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল এলে সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়। বড় আকারের ফুল পেতে হলে মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়। আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুঁড়িটি অপসারণ করা উচিত। চন্দ্রমল্লিকার চারা বিকেলে লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হয়। চারা লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হয়। গাছ কখনো বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। তাই পানি এমনভাবে দিতে হবে যেন গোড়ায় বেশিক্ষণ পানি জমে না থাকে। চারা রোপণের আগে এবং পরে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো পানি সেচ জরুরি।
চন্দ্রমল্লিকার ফুল সাধারণত ডালপালার তুলনায় বড় হয়। তাই গাছের গোড়া থেকে কুঁড়ি পর্যন্ত একটা শক্ত কাঠি পুঁতে দিতে হয়। এতে ফুল নুয়ে পড়বে না। চারা লাগানোর সময় কাঠি একবারেই পুঁতে দেওয়া ভালো। এজন্য জাত বুঝে চন্দ্রমল্লিকা গাছের উচ্চতা অনুযায়ী বাঁশের কাঠি চারার গোড়া থেকে একটু দূরে পুঁতে দিতে হয়। এ পোকা পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুলে দাগ পড়ে। এমনকি ফুল এবং গাছও শুকিয়ে যায়। এ পোকা দমনের জন্য ২ মিলি ম্যালাথিয়ন ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় অবস্থায়ই গাছের নতুন ডগা বা ফুলের রস চুষে খায়। এটি গাছের বৃদ্ধি এবং ফলনে মারাত্মক ক্ষতি করে। নোভাক্রন (০.১% ) বা রগর (১%) প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়। এ রোগ হলে গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায়। টিল্ট ২৫০ইসি ০.৫ মিলি বা ২ গ্রাম থিয়োভিট প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।