এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি উৎপাদনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আব্দুর রাজ্জাক সাইফ
পোলট্রি
দেশের অধিকাংশ পোল্ট্রি খামারি মনে করে এন্টিবায়োটিক ছাড়া খামার করা সম্ভব নয়। খামারিগণ নিজেদের অজ্ঞতা কিংবা অন্ধ অনুসরণে বিনা প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন । অধিকাংশ খামারি রুটিন অনুসরণ করে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে থাকেন । অহেতুক এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গতানুগতিক এই ধারার বাহিরে গিয়ে এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগী পালনে সফলতা দেখিয়েছেন ঢাকার ডেমরার পোল্ট্রি খামারি আব্দুর রাজ্জাক সাইফ । গত ৯ বছর ধরে এন্টিবায়োটিক মুক্ত ব মুরগি পালন করে অনেক খামারির কাছেই অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন । এগ্রিভিউ২৪.কম এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি উৎপাদন সম্পর্কে আব্দুর রাজ্জাক সাইফের সফলতার কথাগুলি পাঠকদের মাঝে তুলে ধরা হলো-
এগ্রিভিউ২৪: কেন পোল্ট্রি ব্যবসায় আসলেন?
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ : ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিলো নিজে কিছু করার। সবাই তো চাকরির পিছনে ছুটে, তাই আমি ভিন্ন কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম।আশে পাশের অনেকের সফলতায় অনুপ্রানিত হয়ে এই সেক্টরে আসলাম ।
এগ্রিভিউ২৪: কবে থেকে এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি পালন শুরু করলেন ও কেন ?
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: ১১ বছর আগে যখন খামার শুরু করি তখন না জেনে রুটিন মাফিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতাম। খামার শুরুর প্রথম দিকেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে একদিকে অর্থ অন্য দিকে খামাররের মুরগী দুই দিকেই ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়েছে। প্রথম ২ বছর খামারে ভালো করতে পারি নি। একদিন এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম এন্টিবায়োটিক ছাড়া মুরগি পালন করা সম্ভব। পরে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম ইউরোপে এন্টিবায়োটিক ছাড়া মুরগি পালন করে ভালো ফল পাচ্ছে।তারপর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সহায়তায় এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার শুরু করি।
এগ্রিভিউ২৪: এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি পালনে কি কি সুবিধা পেয়েছেন?
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ : এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করায় মুরগির গ্রোথ ও মাংস উৎপাদন আগে থেকে ভালো পেয়েছি । ৩০ দিনে গড়ে ১.৭ – ২.০ কেজি পর্যন্ত ওজন পাচ্ছি নিয়োমিত। অহেতুক এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ ব্যবহার না করায় এখন প্রতি হাজার মুরগিতে ৫ হাজার টাকার ওষুধ খরচ বেচে যাচ্ছে । প্রতি মাসে ৭০০০ মুরগির জন্য অনেক টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে না , যার ফলে আমার উৎপাদন খরচ কমে এসেছে।আমাদের লাভ হচ্ছে, খরচও কমেছে, স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ মাংস ও উৎপাদন করতে পারছি ।
এগ্রিভিউ২৪ : আপনার খামারে মুরগির মর্টালিটি কেমন?
আব্দুর রাজ্জাক সাইফঃ অন্যান্য খামারের তুলনায় আমার এখানে মুরগির মৃত্যুরহার কম। হাজারে সর্বোচ্চ ৩০ টি মুরগি মারা যায় ।
এগ্রিভিউ২৪ : পোল্ট্রি খামার শুরু করার আগে আপনি কি কোন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন?
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: আমি সরকারি ও বেসরকারি ভাবে ৫/৬ টার মত কোর্স করেছি । যা আমাকে মুরগি পালনে সহায়তা করেছে। তাছাড়া সরকারি যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী অনেক কোর্স করেছি। এগ্রিভিউ২৪: এন্টিবায়োটিক পরিবর্তে আপনি খামারে কি ব্যবহার করেন? আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: আমি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক ব্যবহার করে আসছি খামারে।
এগ্রিভিউ২৪ : আপনার খামারের বায়োসিকিউরিটি সম্পর্কে যদি বলতেন।
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: আমার খামার লোকালয় থেকে অনেক দূরে । খামারে ডাক্তার ব্যতীত বাহিরের কোন মানুষ প্রবেশ করতে দেই না । মুরগি কেনাবেচা বা বাজারজাতের জন্য নিজস্ব গাড়ি রয়েছে । তাছাড়া খামার নিয়মিত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। সব সময় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ নিতাম।
এগ্রিভিউ২৪ : মুরগির খাদ্য সম্পর্কে যদি বলতেন।
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: আমার খামারের ৫০ ভাগ খাদ্য নিজে তৈরি করি আর বাকি ৫০ ভাগ খাদ্য বাজার থেকে কিনি।সব সময় উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতাম। প্রতিনিয়ত খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে মাঝেমাঝে সমস্যায় পড়তে হত ।তাই নিজে খাদ্য তৈরি করার চেষ্টা করতাম ।
এগ্রিভিউ২৪: নতুন খামারিদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: বেশিরভাগ খামারি বিশ্বাস করতে চায় না, এন্টিবায়োটিক ছাড়া খামার করা সম্ভব। আমি ভালো ফল পেয়েছি আশা করি আপনিও পাবেন। খামারের বায়োসিকিউরিটি ঠিক রাখলে ইনশাল্লাহ ভালো ফল পাবেন
এগ্রিভিউ২৪: আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুর রাজ্জাক সাইফ: আপনাকেও ধন্যবাদ।