দিনাজপুরে ধানের দাম কমায় দুশ্চিন্তায় কৃষক
কৃষি বিভাগ
বাজারে নতুন ধানের সরবরাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই কমতে শুরু করেছে ধানের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭৫ কেজির প্রতি বস্তা ধানের দাম কমেছে প্রকারভেদে ১শ থেকে দেড়শ টাকা। ধানের দাম কমতে শুরু করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। সদর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ধানের হাট গোপালগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ধানের সরবরাহ বেড়েছে।
হাট-সংশ্লিষ্টরা জানান, নভেম্বর মাসের শুরু থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন আমন। ক্রমান্বয়ে সরবরাহও বাড়ছে। গত সপ্তাহে গোপালগঞ্জ ধানের হাটে ধান উঠেছিল ৫শ বস্তার মতো। সোমবার বাজারে ১ হাজারেরও বেশি বস্তা ধান উঠেছে। পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হওয়ায় বাজারে নতুন ধানের সরবরাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান হাট-সংশ্লিষ্টরা।
বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে ধানের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭৫ কেজির প্রতি বস্তায় ধানের দাম কমেছে ১শ থেকে ১৫০ টাকা। গত এক সপ্তাহ আগে প্রতিবস্তা গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৩০ টাকায়, সোমবার তা নেমে এসেছে ১ হাজার ৯৫০ টাকায়। অনুরূপ কটরাপারী ২ হাজার ১০ টাকা থেকে নেমে ১ হাজার ৯২০ টাকায়, বিনা-৭ জাতের ধান ২ হাজার ২শ থেকে নেমে ২ হাজার ৫০ টাকায় এবং প্রতি বস্তা সুমন স্বর্ণ জাতের ধান ২ হাজার ৭০ থেকে নেমে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বিআর-৫১ জাতের ধানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ধানের দাম কমতে শুরু করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার কৃষক নাজির হোসেন বলেন, আমরা ভেবেছিলাম-যতই দিন যাবে, ততই ধানের দাম বাড়বে। কিন্তু দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে গত সপ্তাহের তুলনায় আজ ধানের দাম কমেছে। এতে হতাশ তিনি। ধান বিক্রি করতে আসা বিরল উপজেলার কানাইবাড়ী এলাকার কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধান আবাদ করতে গিয়ে খরচ হয়েছে বেশি। পোকার হাত রক্ষায় এবার আমন ক্ষেতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। এতে ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ পড়েছে বেশি। তাই ধানের ভালো দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
বাজারে ধান ক্রেতারা জানান, মিল-মালিকরা যে দামে ধান কিনছে, সেই অনুযায়ীই তাদের ধান কিনতে হয়। বেশি দামে ধান কিনলে লোকসান গুনতে হবে তাদের। গোপালগঞ্জ পাইকারি ধান ক্রেতা বিভাকর বসাক জানান, কাটা-মাড়াই কেবল শুরু হয়েছে। নতুন অবস্থায় বাজার একটু উঠানামা করতেই পারে। কারণ এখনো বোঝা যাচ্ছে না প্রকৃত অবস্থা। সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে ক্রেতার তুলনায় ধান বেশি হওয়ায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কিছুটা প্রতিকূল অবস্থা গেলেও এবার দিনাজপুরে আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকলে কৃষকরা আমন আবাদ করে লাভবানই হবেন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় এবার জেলায় চালের উৎপাদন ৭ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে।