৯:১৫ অপরাহ্ন

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
  • হোম
  • দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপের হাসি
ads
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২১ ৪:৫৫ অপরাহ্ন
দেলোয়ারের বাগানে টিউলিপের হাসি
প্রাণ ও প্রকৃতি

টিউলিপকে বলা হয় বিদেশি ফুল। এটা হলো তুরস্কের জাতীয় ফুল। আর তুরস্কের জাতীয় ফুল হলেও এর চাষ বেশি হয় নেদারল্যান্ডসে। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। দেশটি প্রতিবছর উদ্যাপন করে টিউলিপ উৎসব। শীতপ্রধান দেশ ছাড়া এশিয়া মহাদেশের ভারত, আফগানিস্তান ছাড়া এমন দৃষ্টিনন্দন টিউলিপ ফুলের দেখা মেলে না। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে একসময় এই ফুল চাষের কথা কল্পনাও করা যেত না। তবে এখন এর দুয়ার খুলে দিয়েছেন গাজীপুরের ফুলচাষি দেলোয়ার।

গত বছর প্রথমবারের মতো দেশে টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। এবারের শীতে বৃহৎ পরিসরে টিউলিপ ফুটতে শুরু করেছে তার বাগানে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেনের বাগানে এখন দারুণ পরিবেশ বিরাজ করছে। গতবারের মতো এবারও দৃষ্টিনন্দন টিউলিপ ফুল দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকেই আসছেন পুষ্পপ্রেমীরা।

টিউলিপ ফোটার খবরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বাগান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। দেলোয়ারের বাগানের এই টিউলিপ উপহার হিসাবে পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেও। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই টিউলিপ ফুলের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

দেলোয়ার হোসেন তার টিউলিপ বাগানের নাম দিয়েছেন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ারস’। সঙ্গে সার্বক্ষণিক এ বাগানে শ্রম দিয়ে থাকেন তার স্ত্রী শেলি। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সফল ফুলচাষি হিসাবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান দেলোয়ার। দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন এই গাজীপুর থেকেই তিনি।

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে যুক্ত আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরইমধ্যে পেয়ে যাই একটির পর একটি সফলতা।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ থাকলেও গত বছরের মতো এবারও নেদারল্যান্ডস থেকে এক প্রজাতির চার রঙের বিশ হাজার টিউলিপ বাল্ব এনে ৩টি বাগানে রোপণ করি গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। গাজীপুরে সফল হওয়ার পর দেশের অন্যান্য স্থানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চুয়াডাঙ্গায় তিন হাজার ও ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়ে তিন হাজার বাল্ব রোপণ করা হয়। বাকি সাড়ে তেরো হাজার বাল্ব তার গাজীপুরের মৌমিতা ফ্লাওয়ার বাগানে রোপণ করা হয়। জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকেই শুরু হয় এই টিউলিপ ফুল ফোটা। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ২০-২২ দিনেই ফোটে এ ফুল।

তিনি আরও বলেন, এ ফুল ফুটতে সাধারণত ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় বিধায় শীত পড়ে এমন এলাকাগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ঠাকুরগাঁও ও চুয়াডাঙ্গায় তিনি পরীক্ষামূূলক বাগান করেছেন। গত বছর এ ফুল ফুটিয়ে সফল হওয়ার পর এবারের মৌসুমে তার ব্যাপকভাবে ফুলটির বাগান করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবে তার আশা, এক সময় টিউলিপময় ভালোবাসার ছোঁয়া তিনি সারা দেশেই ছড়িয়ে দেবেন।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে টিউলিপ আমদানি করে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। সফল ফুল চাষি দেলোয়ারের বাগানে গত বছরের মতো এবারও টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ফুল চাষ সম্প্রসারিত হলে কৃষি অর্থনীতিতে দারুণ ছোঁয়া লাগবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ফুল গবেষক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন খান বলেন, টিউলিপ সাধারণত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফুল। আমাদের দেশে শীত মৌসুমে অনেকেই বাসাবাড়ির টবে বা শখের বশে টিউলিপ ফুলের চাষ করেন। তবে ফুল পাওয়া খুবই অস্বাভাবিক।

তবে দেলোয়ার হোসেনের বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটায় নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনো এই ফুল চাষ শুরু হয়নি। তবে শীত মৌসুমে আবহাওয়া ফুলের অনুকূলে থাকলে এ ফুলের চাষ করা যায়। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোয় এই ফুল চাষ উপযোগী। দেশের কৃষকদের মনে নতুন করে টিউলিপ ফুল চাষের স্বপ্ন বুনে দিয়েছেন দেলোয়ার।

শেয়ার করুন

ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop