নানাকে দেখে খামার শুরু, এন্টিবায়োটিক মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদন করছে দশম শ্রেণির ছাত্র
পোলট্রি
এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার নিয়ে আমাদের আগের প্রতিবেদন দেখে অনেক খামারি বলেছেন যে এন্টিবায়োটিক ছাড়া মুরগি পালন সম্ভব নয়, অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার এখন দেশের অনেক সচেতন খামারি গড়ে তোলেছেন এবং উৎপাদন আগের চেয়েও ভালো পাচ্ছেন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ খামারি অন্যকে দেখে খামার করে থাকেন, খুব বেশি প্রশিক্ষনের সুযোগ হয় না। বিভিন্ন খামারে গেলে দেখা যায় যে ১ম দিন থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিদিনের ঔষুধের একটা চার্ট থাকে খামারে। ব্রুডিং এ কোন এন্টিবায়োটিক দিতে হবে, মুরগি ঝিমালে কিংবা একটু সাদা পায়খানা করলে কি এন্টিবায়োটিক দিতে হবে এগুলা প্রায় সব খামারির মুখস্ত থাকে। তবে এসব থেকে বের হয়ে সাহস নিয়ে এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার গড়ে তোলেছেন অনেকেই, সফলতাও পাচ্ছেন হাতে নাতে।
ঠিক তেমনি একজন খামারী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ১০ম শ্রেণী পড়ুয়া মো. মাসুদ। তিনি ২০১৮ সাল থেকে খামার শুরু করলেও এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার শুরু করেন ২০২০ সাল থেকে। আর ২০২০ সালের পূর্বে প্রতি ব্যাচে এন্টিবায়োটিকযুক্ত খামার দিয়ে যা লাভ করেছেন বর্তমানে তার চেয়ে বেশি লাভ করছেন তিনি। মো. মাসুদ তার সাহসিকতার গল্প শুনিয়েছেন এগ্রিভিউ২৪.কম কে, সাক্ষাতকার গ্রহনে ছিলেন উপ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ আরিফ। নিম্নে পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
এগ্রিভিউ২৪: এত কম বয়সে পোল্ট্রি ব্যবসায় কেন আসলেন?
মো. মাসুদ: ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমার নানা পোল্ট্রি খামারের সাথে জড়িত। আর সেখান থেকে নানার দেখাদেখি আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি খামার করবো। নানাকে কখনও লস করতে দেখি নাই, খামারে তিনি প্রচুর সময় দিতেন। সঠিক পরিচর্যা করলে এই ব্যবসায় লস হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।সেখান থেকে নিজেকে স্বাবলম্বী দেখাএবং পরিবারকে সাপোর্ট দেবার জন্য খামার করা।
এগ্রিভিউ২৪: এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি পালন কবে থেকে শুরু করলেন এবং কেন করলেন ?
মো.মাসুদ: আমি ২০১৮ সাল থেকে খামার করা শুরু করেন। তবে তখন নিয়ম করেই খামারের ব্রয়লার মুরগিকে এন্টিবায়োটিক দিতাম। তারপর ২০২০ সালে এসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার করার। আর সেই সিদ্ধান্ত থেকেই শুরু করি এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার পাশাপাশি ভালো জাতের বাচ্চা তোলার চেষ্টা করি। এতে করে আগের চেয়ে খরচ কমেছে এবং লাভ বেড়েছে। তাই এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামারই করে যাচ্ছি।
এগ্রিভিউ২৪: এন্টিবায়োটিক মুক্ত মুরগি পালনে কি কি সুবিধা পেয়েছেন?
মো.মাসুদ: আমার পাশে আরো ৭-৮ টা খামার আছে। সেখানে অনেকেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। আমরা মাত্র দুইজন খামারী আছি যারা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করি না। যারা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে তাদের তুলনায় আমাদের দু‘জনের খামারে লাভ হয় বেশি। বিশেষ করে আমি এখন ৩০ দিন পরপর মুরগি বিক্রি করতে পারি, মাসে গড়ে মুরগির ওজন ২কেজির মত হয় ।
এগ্রিভিউ২৪: খামারে মুরগির মারা যায় কেমন?
মো.মাসুদ: প্রতিটা খামারেই কম-বেশি মুরগি মারা যায়। তবে এন্টিবায়োটিক যখন ব্যবহার করতাম তখনকার চেয়ে এখন খুব কম মারা যায়। আমার নতুন সেডের আজ ১৩দিন বয়স। এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ টা মারা গেছে। এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার করার পর থেকে হাজারে সর্বোচ্চ ২০টার মত মারা যায়। ভালো জাতের এ গ্রেডের বাচ্চা নেই সবসময়। বিশেষ প্রয়োজনে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হই।
এগ্রিভিউ২৪: খামার শুরু করার আগে আপনি কি কোন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন?
মো.মাসুদ: না, ওভাবে আমি কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি নাই। যা শিখেছি আমার নানার কাছ থেকেই শিখেছি। এবং বিভিন্ন ডিলারদের থেকে আমি পরামর্শ নিয়েছি। তবে প্রশিক্ষণ নেয়া দরকার। একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লোক যা পারে একজন প্রশিক্ষণহীন খামারি তা পারার কথা নয়।
এগ্রিভিউ২৪: এন্টিবায়োটিকের পরিবর্তে আপনি খামারে কি ব্যবহার করেন?
মো. মাসুদ: আমি সবসময় ভালো কোম্পানির ফিড খাওয়াই। মুরগির বয়স যখন ২০-২৫ দিন হয় তখন আমি মাল্টিভিটামিন খাওয়াই এবং ২৫-৩০ দিন বয়স হলে এমাইনো এসিড দেই। তবে মুুুরগিকে প্রচুর পানি খাওয়াই, মাঝে মধ্যে পানির সাথে লেবু চিনি মিশিয়ে খাওয়াই।
এগ্রিভিউ২৪: এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা অবস্থায় কেমন ওজন পেতেন আর এন্টিবায়োটিক ছাড়া কেমন ওজন পাচ্ছেন?
মো. মাসুদ: আমি যখন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতাম তখন আমার খাদ্য অনেক বেশি লাগতো। তবে মুরগির ওজন হতো খুব কম। সর্বোচ্চ ১৮‘শ গ্রাম হতো মুরগির ওজন। আর এন্টিবায়োটিক মুক্ত খামার করার পর থেকে আমার খাদ্য লাগে নিয়ম মাফিক আবার ওজনও হয় বেশি। প্রায় ২ কেজির মত ওজন পাচ্ছি মুরগির।
এগ্রিভিউ২৪: নতুন খামারিদের জন্য আপনার কোন পরমর্শ আছে?
মো. মাসুদ: বয়সে আমি অনেক ছোট আর খামার করছি খুব বেশি দিন হয়নি। আমি এখনো শিখছি, তবে আমার মনে হয় যে, খামারে সময় দেওয়া এবং ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে করতে পারলে এই ব্যবসায় লাভ করা সম্ভব। এ জন্য দরকার নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ। এবং হাল ছেড়ে না দেয়া। এই ব্যবসায় হাল ধরে রাখলে লসের মুখ দেখতে হবেনা।
এগ্রিভিউ২৪: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
মো. মাসুদঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।