গাইবান্ধার প্রান্তিক খামারিরা পাচ্ছে না সঠিক কোন সেবা!
প্রাণিসম্পদ
দীর্ঘদিন থেকে গাইবান্ধায় প্রাণিসম্পদ দফতরের (পশু হাসপাতাল) সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রান্তিক খামারিরা। আর এতে করে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে তাদের। অনেক পুরাতন খামার বন্ধ হয়ে গিয়েছে আবার সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতার অভাবে অনেক নতুন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এ অবস্থায় সাধারণ খামারি ও পশু পালনকারীরা গবাদিপশুকে বাঁচাতে অর্থের বিনিময়ে ব্র্যাক কিংবা যুব উন্নয়ন থেকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাধারণ পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এতে একদিকে খামারিরা আর্থিকভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত, অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ দফতরের অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তবে প্রাণিসম্পদ দফতর বলছে, নিয়ম মেনে পর্যায়ক্রমে খামারিদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা শহরসহ ও বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে সরেজমিনে গেলে প্রাণিসম্পদ দফতরের অসহযোগিতার কথা জানিয়েছেন প্রান্তিক খামারিরা। অনেকে সরকারি দফতরের নাম শুনলেও বাস্তবে কোনো ভেটেরিনারি সার্জনের সেবা তো দূরের কথা, চোখেও দেখেনি বলে জানিয়েছেন। এমন চিত্র জেলার সাত উপজেলাজুড়েই।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার চক মোমরোজপুর গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে গরুর খামারের সঙ্গে যুক্ত আমি। আমার খামারে বর্তমানে ৭টি গরু আছে। প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে কোনো পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা পাইনি। বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতেও তাদের দেখা পাইনি আমরা। বাধ্য হয়ে টাকার বিনিময়ে বেসরকারি পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিই আমি।
রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হরিণসিংহা গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি মতিয়ার রহমান বলেন, পশু হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাধারণত গ্রামে আসেন না। গবাদিপশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে তাদের অফিসে নিয়ে যেতে বলা হয়। অফিসে গরু নিতে গেলে কমপক্ষে ভাড়া বাবদ এক হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের মতো ছোট খামারির পক্ষে এত টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। কয়েকবার ফোন করার পর যদি কোনো চিকিৎসক আসেন, চিকিৎসা শেষে তাদের আবার তেল খরচ বাবদ টাকা দিতে হয়।
একই গ্রামের ইসলাম আকন্দ বলেন, পশু হাসপাতালের নাম শুনি। অনেকে সেবা পায়। কিন্তু ৩০ বছর থেকে গরু পালন করি, তাদের কোনো সেবা পাইনি আমি। গত বছর সঠিক চিকিৎসার অভাবে আমার একটা বড় গরু মারা গেছে। গ্রাম্য পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আমরা গরু বাছুর লালন-পালন করি।
আরিফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, প্রাণিসম্পদ দফতর জেলার বড় খামারগুলোয় সেবা দেয় শুনেছি। গ্রাম পর্যায়ে তারা কোনো সেবা দেয় না। গ্রামের ছোট খামারিরা তো টাকা দিতে পারেন না। তাই তাদের ভাগ্যে সেবাও জোটে না।
দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের পারুল বেগম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন করি। কোনো দিনও পশু হাসপাতালের কেউ আসেনি। হাঁস-মুরগি ছাগলের অসুখ হলে টাকা দিয়ে ব্র্যাক থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেই।
সেবা না পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাঠপর্যায়ে আমাদের সঙ্গে এখন অনেক মানুষ করে। প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে কৃত্রিম প্রজননকারী ও একজন করে ভ্যাকসিনেটর ও লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার গ্রামে গ্রামে ঘুরে খামারিদের সেবা দিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, এ ছাড়া উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাও বিভিন্ন খামার ও গ্রাম পর্যায়ের খামারিদের সেবা দেন। ভেটেরিনারি সার্জনরা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কল এলে সেখানে গিয়ে সেবা দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় একজন ভেটেরিনারি সার্জন দিয়ে সবার কাছে সেবাটা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তবু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।সূত্র: ঢাকা পোস্ট