পরিত্যক্ত জমিতে সবজি, ফুল ও ফলের চাষ জেলা প্রশাসকের
কৃষি বিভাগ
জেলা প্রশাসকের বাংলো লাগোয়া বিলুপ্ত কুমিল্লা উদ্ভিদ উদ্যানের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এখন সেই জমিতে সবুজের সমারোহ। পতিত জমিতে ৬২ রকমের সবজি, ফুল ও ফলের আবাদ হচ্ছে।
এসব সবজি ও ফুল-ফলের আবাদের নেপথ্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি প্রতিদিন সকালে নিজে গাছের পরিচর্যা করেন। এ ছাড়া ছুটির দিনে অবসর সময়ে তিনি মাঠে কাজ করেন। শীতকালীন ও বারোমাসি ফসল দোল খাচ্ছে একেকটি ব্লকে।
রোববার জেলা প্রশাসকের বাংলোর লাগোয়া কুমিল্লা উদ্ভিদ উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, টুকটুকে লালশাকের গাছ পরিচর্যা করছেন তিনি। উদ্ভিদ উদ্যানের পূর্ব পাশের সড়কের দুই ধারে ব্লক করে একেকটি সবজি লাগানো। ইতিমধ্যে অনেক ধরনের সবজি পুষ্ট হয়েছে। কর্মীদের কাঁচা মরিচ তুলতে দেখা গেছে। বাংলোর পুকুরের পশ্চিম পাড়ে ফুলকপি, কাঁচা মরিচ, বেগুন, লাউয়ের মাচা, দক্ষিণ পাড়ে বিভিন্ন ধরনের মরিচগাছ দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসকের দপ্তরের তালিকা থেকে জানা গেছে, তিনি ৩৯ ধরনের সবজি চাষ করেছেন। এগুলো হলো পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউশাক, পুঁইশাক, কাঁকরোল, পটোল, শজনে, কাঁচকলা, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, শর্ষে, গাজর, ধনেপাতা, বিলাতি ধনেপাতা, শালগম, বেগুন, ঝিঙে, বরবটি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, লেবু, শসা, ধুন্দুল, করলা, স্কোয়াশ, শিম, ফুলকপি, লেটুস, বাঁধাকপি, কলমি, ব্রকলি, টমেটো, ওল, মরিচ, স্ট্রবেরি ও ক্যাপসিকাম। ১৬ ধরনের ফুলের মধ্যে সিলভিয়া, অর্কিড, গন্ধরাজ, টগর, জবা, বেলি, কসমস, গাঁদা, সূর্যমুখী, রাধাচূড়া, বেলি, জুঁই, বকুল, রঙ্গন, কামিনী ও মালতি। সাত ধরনের ফল চিরতা, তোকমা, লটকন, ডালিম, সফেদা, আমড়া ও কলা চাষ হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এখানে যোগদান করেছেন আট মাস হলো। তিনি একজন কৃষিপ্রেমী। নেশা থেকে তিনি কৃষিকাজ করছেন পরিত্যক্ত জমিতে। এখানে জৈব সার ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমরা এখানে সহযোগিতা করে থাকি। তিনি (জেলা প্রশাসক) নিজে কাজ করেন। সবজির ফলন ভালো। মাটিও ভালো। তিনি পরিপক্ব সবজি মানুষের মধ্যে বিলি করেন। স্কুল ও কলেজের বাচ্চাদের বাগান দেখাবেন, উদ্বুদ্ধকরণের জন্য তাঁর এই প্রচেষ্টা। এটা দেখে যে কেউ পরিত্যক্ত জমি ও বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করতে পারেন।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগান পরিচর্যা করি। হঠাৎ মনে হলো, এত জায়গা পড়ে আছে, তাতে শীতকালীন সবজি চাষ করি। ওই ভাবনা থেকে সবজি লাগাই। কর্মী ও মালিদের সঙ্গে আমিও হাত লাগাই। বাংলোর পুকুরের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাড়ে সবজি চাষ। উত্তর ও পূর্ব পাড়ে ফুল ও ফলের চাষ। এ ছাড়া কুমিল্লা উদ্ভিদ উদ্যানের বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করি। সেগুলো এখন বেড়ে উঠছে। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। আর কয়েক দিন পর আরও সুন্দর লাগবে। জৈব সার দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে।’