বগুড়ায় অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে অর্ধশতাধিক গরু
প্রাণিসম্পদ
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় সপ্তাহের ব্যবধানে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে অর্ধশতাধিক গরু। আতঙ্কে নামমাত্র দামে আয়ের একমাত্র উৎস গবাদি পশু বিক্রি করে দিশেহারা ক্ষুদ্র খামারি ও নিম্নবিত্ত কৃষিজীবী পরিবার।
তবে এ নিয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে নেই সুস্পষ্ট কোনো তথ্য। আক্রান্ত গরুর রক্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
উপার্জনের একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশেহারা নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। সংসারের খরচ আর সমিতির কিস্তির টাকা শোধ কীভাবে হবে জানে না নিম্ন আয়ের এ পরিবারগুলো। আলাইপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহিনী দাস দুটি গাভি হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘গরুর দুধ বেচেই ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতাম। মানুষের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আসে। কিন্তু আমার তো একমাত্র সম্বল ছিল এইটা। গরু দুইটা মারা যাওয়ার পর থেকে কী করব, কিছুই বুঝতেছি না।’
গ্রামের আরেক ক্ষুদ্র খামারি সন্তোষ চন্দ্র জানান, এ গ্রামেই প্রায় ১০-১২টি গরু মারা গেছে। এ ছাড়াও আশপাশের গ্রামেও গরু মারা গেছে। কম করে হলেও ৫০-৬০টি গরু মারা গেছে এলাকায়।
স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত লালা ঝরা, এরপর খাওয়া বন্ধ। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে প্রাণ হারানো। পশু চিকিৎসক ডেকে কেবল খরচই বেড়েছে। বাঁচানো যায়নি সন্তানের মতোই প্রিয় গবাদি পশুকে। আতঙ্কিত হয়ে লোকসান সত্ত্বেও পানির দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক ক্ষুদ্র খামারি। গরু মারা না গেলেও কান্নায় ভেঙে পড়েন হাটুয়া গ্রামের এক খামারি। ভাগ্যবদলের আশায় ঋণ করে চারটি গরু কিনেছিলেন। তবে রোগের আতঙ্কে বিক্রি করেছেন লোকসান গুনে। তিনি বলেন, ‘২ লাখ টাকার গরু ৭০ হাজার টাকায় বেচে দিছি। এখন লোনের টাকা কেমনে শোধ হবি বুঝতিছি না।’
দরিদ্র এসব পরিবারকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস স্থানীয় জনপ্রতিনিধির। নন্দীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হরিসচন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘এ ব্যাপারে ইউএনওর সঙ্গে আমরা আলাপ করব। তাদের কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রোগ নির্ণয়ের জন্য আক্রান্ত গরুর রক্ত ও মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে সেখান থেকে এখনও রিপোর্ট আসেনি। তবে কিছু ওষুধ ও টিকা দেয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরে উপজেলায় গরুর ‘ল্যাম্পি স্কিন’ রোগের প্রাদুর্ভাবে আর্থিকভাবে অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হন।