মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাষ পদ্ধতি
মৎস্য
মনোসেক্স তেলাপিয়া হলো পুরুষ তেলাপিয়া মাছের চাষ। তেলাপিয়া চাষের বড় সমস্যা হলো এর অনিয়ন্ত্রিত বংশবিস্তার। এই ধরণের অনিয়ন্ত্রিত বংশবিস্তারের কারণে পুকুরে বিভিন্ন সাইজের তেলাপিয়া মাছ দেখা যায়। যার কারণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিকভাবেই পুরুষ তেলাপিয়া মাছের দৈহিক বৃদ্ধি বেশি। এই ধারনাকেই কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র পুরুষ তেলাপিয়া চাষকেই মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ বলা হয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতি মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সমপূরক খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ততা, চাষে কম সময়, দ্রুত বেড়ে ওঠার ক্ষমতা এবং বাজার মূল্য বেশি থাকায় বর্তমানে অধিকাংশ মৎস্য চাষি মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
মনোসেক্স তেলাপিয়ার বৈশিষ্ট্যঃ
এই মাছ দ্রুত বর্ধনশীল ও অধিক ফলনশীল।
এ মাছ ৩-৪ মাসে বয়সেই বিক্রয়যোগ্য হয়ে ওঠে।
এটি ৫-৮ মাসে ৫০০-৮০০ গ্রাম হয়ে থাকে।
পাখনার বর্ণ কিছুটা লালচে, আকার অনেকটা গোলাকার, ও পুরুত্ব বেশি হওয়ায় বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়।
সাধারণত পুরুষ তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার স্ত্রী তেলাপিয়ার চেয়ে ৩০ ভাগ বেশি।
অগভীর জলাশয়, স্বচ্ছ এবং লবনাক্ত পানিতেও এই মাছ চাষ করা যায়।
এটি অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মাছ।
চাষ ব্যবস্থাপনা সহজ ও লাভের পরিমান বেশি।
পুকুর প্রস্তুতিঃ
পুকুরের আয়তন সাধারণত ৩০-৪০ শতাংশ হতে হবে।
পুকুর শুকিয়ে রাক্ষুসে মাছ ও মাংসাশী প্রাণি ধ্বংস করতে হবে। অথবা, প্রতি শতাংশে ৪০-৫০ গ্রাম ‘রোটেনন’ প্রয়োগ করে অবাঞ্ছিত প্রাণী দূর করতে হবে।
পুকুরের পানির গুনাগুণ পোনা চাষের উপযোগী করার জন্য প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
চুন প্রয়োগের ৩-৪ দিন পরে প্রতি শতাংশে ৮-১০ কেজি গোবর সার অথবা ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে।
পোনা মজুদের পূর্বে নার্সারি পুকুরের চারপাশে নাইলন/ফিল্টার নেটের বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগের ১ সপ্তাহের মধ্যে পুকুরে মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা মজুদের ব্যবস্থা করতে হবে।
পোনা মজুদ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
পুকুর প্রস্তুতির পর প্রতি শতাংশে ১৫-২০ গ্রাম ওজনের সুস্থ সবল ২০০-২৫০ টি পোনা মজুদ করতে হবে।
পোনা মজুদের পর, প্রতিদিন ২৫-৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য পুকুরে মজুদ করতে হবে। এটি মাছের মোট দেহ ওজনের ৩-১০% হারে প্রয়োগ করতে হবে।