মাছ শিকারে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞা
মৎস্য
ইলিশসহ সকল প্রকার মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে সরকার দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে প্রতিবছরের মতো এ বছরও ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২ মাস সকল প্রকার মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ভোলার মেঘনার ইলিশা থেকে চর পিয়াল ও তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত ১শত ৯০ কিলোমিটার এলাকার দুইটি অভয়াশ্রমেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা মাছ শিকার করবে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করা হবে বিশেষ অভিযান।
অক্টোবরের প্রজনন মৌসূমে ডিম ছাড়ার পর বর্তমান সময়টি ইলিশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় ইলিশ জাটকা থেকে বেড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। ইলিশের বেড়ে ওঠার পাশা-পাশি অন্যান্য মাছ এসময় নদীতে ডিম ছাড়ে বিধায় ভোলার মেঘনা নদীর ইলিশা থেকে মনপুরার চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেতুঁলিয়ার ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তমের ১ শত কিলোমিটারসহ মোট ১ শত ৯০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ১ মার্চ থেকে ইলিশসহ সকল মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। জেলেদেরকে এসময় মাছ শিকার থেকে বিরত রাখতে মৎস্য বিভাগ ভোলা জেলার ১শত ৩২ টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছে বিশেষ প্রচার-প্রচারণা। জেলেরাও মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে প্রস্তুত। তবে তাদের দাবি প্রতি বছরই তারা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে কিন্তু প্রভাবশালীরা অবৈধ জাল দিয়ে ইলিশসহ অন্যান্য মাছগুলো নষ্ট করে ফেলে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেদিকে গুরুত্ব দেয় না। জেলেরা বলছেন,এ দু’মাস তাদেরকে খুব কষ্টে থাকতে হয়। ঠিকমতো ঋণের কিস্তি দিতে পারেন না। অনেকে বিকল্প কাজ যোগার করতে ব্যর্থ হন। তাদের জন্য প্রনোদনা হিসাবে জন প্রতি ৪০ কেজি করে ২ মাসের যে চাল বরাদ্দ করা হয় তাও তারা সময় মতো পান না। শুধু কোনদিন আর চাল নয় এর পাশাপাশি বিকল্পকর্মসংস্থান তৈরি করা ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার দাবিও করছেন জেলেরা।
ভোলার নাসির মাঝি ঘাটের জেলে মোহাম্মদ নুর উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক বছরই আমরা ছোট-খাটো যে সমস্ত জেলেরা রয়েছি তারা অভিযান মেনে চলি। এবারও মেনে চলবো। কিন্তু প্রভাবশালী কিছু জেলেরা রয়েছে, যাদেরকে বড় বড় গডফাদাররা নেতৃত্ব দেয় তারা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে অভিযানের সময় এবং অভিযানের বাইরেও মাছ শিকার করে। সেগুলো বন্ধ করতে না পারলে অভিযান সফল হবে না।
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানিয়েছেন, নিষিদ্ধকালীন সময় জেলেরা যাতে মাছ শিকার না করে সেজন্য প্রত্যেকটি ঘাটে, হাটবাজারে সচেতনতা মূলক প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। এছাড়া দু’মাস অভয়াশ্রমে জেলেদেরকে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখার জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনার চাল আগামী ১০ দিনের মধ্যেই তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। জেলেদের যে সমস্ত সমিতির ঋণের কিস্তি রয়েছে সেগুলো যাতে নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাস বন্ধ রাখা যায় সে বিষয়েও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তবে আইন অমান্যকারী জেলেদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানাসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে।
জেলায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮ শত ১৬ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। নিবন্ধনের বাইরেও রয়েছে আরো অন্তত ২ লাখ জেলে। জাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৮৯ হাজার ৪ শত ১০ জন জেলেকে ২ মাস ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হবে।