সুন্দরবনে বিষ দিয়ে চলছে অবাধে মাছ নিধন
প্রাণ ও প্রকৃতি
সুন্দরবন এলাকায় বিষ প্রয়োগে অবাধে মৎস্য নিধন করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের উৎকোচের বিনিময়ে বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা এ কাজে সহায়তা করছে। অপরদিকে প্রকৃত জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের কালাবগী স্টেশন, পূর্ব বিভাগের ঝাপসি, ঢাংমারি এবং ভদ্রা টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন খালগুলোয় মৎস্য শিকার করে দাকোপের আইউব মোল্যা ও ঢাংমারি এলাকার মুন্না। ওই স্টেশনগুলোর মধ্যে ভদ্রা নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। গরমের এ মৌসুমে এই নদী মাছে পরিপূর্ণ থাকে। জেলেদেরও নজর থাকে ওই এলাকায়। ফলে এ নদীকে ঘিরে যতগুলো স্টেশন রয়েছে, সেগুলো ‘ম্যানেজ’ করেই মাছ ধরেন ওই দুই ব্যবসায়ী। তাদের নিয়োজিত জেলেরা চালের ড্রামে করে ইন্ডিয়ান রিপকর্ড বিষ নিয়ে যায়। সেটি সুন্দরবনের নির্ধারিত স্থানে লুকিয়ে রাখে। সুবিধামতো সময়ে এ বিষ ব্যবহার করে তারা।
কালাবগী স্টেশনে এক বছর আগে যোগদান করেন স্টেশন কর্মকর্তা মনিরুল হোসেন। এ সময় ধরেই আইউব মোল্যা ও মুন্না ভদ্রাসহ আশপাশের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করছে। তারা কালাবগী এলাকার কাওসার সানা নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে স্টেশনগুলোয় নৌকাপ্রতি ৩ হাজার টাকা দেয়। এরপর ওই টাকা কালাবগী স্টেশনের বোটম্যান তারেকের মাধ্যমে কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। অর্থ পরিশোধ হলেই তারা এসব এলাকার খালে মাছ ধরে। নিষিদ্ধ এলাকা, বিষ দিয়ে মাছ ধরা, নিষিদ্ধ ডুবোজাল দিয়ে মৎস্য শিকার করে তারা।
অপরদিকে যেসব জেলে স্টেশনগুলোর চাহিদামতো অর্থ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, তারা মাছ ধরতে পারছে না। পশ্চিম বিভাগের পাশ নিয়ে আইয়ুব, মুন্নাসহ আরও কয়েক ব্যবসায়ী কখনো পূর্ব বিভাগ, কখনো পশ্চিম বিভাগে মাছ শিকার করছে। সিন্ডিকেট করে তারা সাধারণ জেলেদেরও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বৈধ খালগুলোয়ও। চলতি বছরের প্রথমদিকে আইউব মোল্যা ও মুন্নার জেলেরা নিষিদ্ধ ডুবোজাল নিয়ে ধরা পড়ে ঢাংমারি ও ঝাপসি এলাকায়।
তবে অদৃশ্য হস্তক্ষেপে তাদের আবার ছেড়েও দেন স্টেশনের কর্মকর্তারা। অভিযোগ ওঠে, অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওই জেলেদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এরপর ডিবি ও বন বিভাগের যৌথ অভিযানে তাদের ৭টি নৌকাসহ ৮ জন আটক হয়। তাদেরকে আদালতেও পাঠানো হয়। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তারা ঢাংমারি স্টেশন কর্মকর্তা, কালাবগি ও ঝাপসি টহল ফাঁড়ি ম্যানেজ করে দেদার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য ঢাংমারি স্টেশনে (গোনে) ৩০ হাজার টাকা, স্টাফদের পৃথক ১০ হাজার টাকা ও জোংড়া টহল ফাঁড়িকে ১০ হাজার টাকা হারে পরিশোধ করেন। খুলনা-রূপসা ফিশের মহুরি মো. সাহেব আলী বন বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় অর্থের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী আইয়ুব হোসেন বলেন, আমার কোনো জেলে বিষ দিয়ে মাছ ধরে না। মুন্নার জেলে একাধিকবার ধরা খেয়েছে প্রশাসনের হাতে। কিছু জেলে আছে যারা কালাবগি এলাকার খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরে।
এ ব্যাপারে ঢাংমারি স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষ দিয়ে মাছ ধরা আগের তুলনায় কমেছে। তবে অনেকেই অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে। আইয়ুব ও মুন্নাসহ কয়েক ব্যবসায়ী কালাবগি থেকে পাশ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরে। অর্থ লেনদেনের কোনো সম্ভাবনাই নেই। আমরা টহলও জোরদার করেছি।’
জেলের সূত্রটি দাবি করেছে, সরকারি পাশ-পারমিটের রাজস্ব ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। সেখানে কালাবগি স্টেশনে জনপ্রতি নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নৌকায় তিনজন হলে থোক ২ হাজার টাকা দিতে হয়। চারপাটা ও খেপলা জালে ২ জনে ১ হাজার ও বেন্দি জালের জন্য জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে দিতে হয়। বিএলসি নবায়নে ৭৫ থেকে ১১০ টাকা রাজস্ব প্রদানের নিয়ম হলেও ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
কালাবগি স্টেশন কর্মকর্তা মনিরুল হোসেন বলেন, ঢাংমারি ও ঝাপসি পূর্ব বিভাগের মধ্যে। কালাবগি স্টেশন থেকে পাশ নেয় অনেকেই। তারা বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরে। জেলেদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ নেওয়া হয় না। এছাড়া বিষ দিয়ে মাছ ধরার বিষয়ে বন বিভাগ এখন খুবই কঠোর। অতিরিক্ত কোনো অর্থ আদায় করা হয় না বলে তিনি দাবি করেন। সূত্র: যুগান্তর