দিনাজপুরে লোকসানে ব্যবসা গোটাচ্ছেন পোলট্রি খামারিরা
পোলট্রি
দফায় দফায় খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, ডিম ও পোলট্রি মুরগি কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় লোকসানে ব্যবসা গোটাচ্ছেন দিনাজপুরের অনেক পোলট্রি খামারি। পুঁজি হারানোর ভয়ে ইতোমধ্যেই লোকসানে একেবারেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন কয়েকশো পোলট্রি খামারি। করোনার ধাক্কা সামাল দিতে অনেকেই লোন করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আরো বিপাকে পড়েছেন। বছর দুয়েক আগেও যেসকল পোল্ট্রি খামার বড় ছিলো সেগুলো ছোট করে ফেলেছেন খামারিরা।
ডিম এবং পোলট্রি মুরগির কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় এরইমধ্যে লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার শতাধিক পোলট্রি খামার। ফলে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন খামার সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক।
দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় লেয়ার মুরগির খামার ১৯৭টি, ব্রয়লার মুরগির ৮৯৩টি, সোনালি মুরগির খামার ৭৮৬টি। সব মিলিয়ে জেলায় পোলট্রি খামার রয়েছে ১ হাজার ৮৭৬টি। তবে খামারিদের হিসাবে, এ সংখ্যা ৫ হাজারের বেশি। এসব খামারে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১ লাখ পর্যন্ত মুরগি রয়েছে।
সম্প্রতি পোলট্রি খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি একদিনের বাচ্চা, ভ্যাক্সিন,ভিটামিন, শ্রমিক ও বিদ্যুৎ খরচসহ অন্যান্য ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও সে হারে বৃদ্ধি পায়নি পোলট্রি পণ্যের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় একটি ডিমের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে সাড়ে আট টাকা। খামারিদের কাছ থেকে আড়তদারেরা প্রতিটি ডিম কিনছেন সাড়ে ছয় টাকায়। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ডিমে তাঁদের লোকসান হচ্ছে দুই টাকা। এ কারণে মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারের মালিকেরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় লেয়ার খামারি আবদুল আজীজ। তিন মাস আগে তাঁর খামারে মুরগি ছিল ৪২ হাজার। বর্তমানে আছে ২৭ হাজার। তাঁর খামারে কাজ করেন ১৪ জন শ্রমিক। কাঁচামাল কিনে নিজেরাই খাবার (ফিড) তৈরি করেন। দৈনিক ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ কেজি ফিড ছাড়াও ভ্যাকসিন, শ্রমিকের মজুরি, বিদ্যুৎ বিলসহ খামারে খরচ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। বিপরীতে প্রতিদিন ডিম পাচ্ছেন ২৪ হাজার থেকে ২৪ হাজার ৫০০টি। বুধবার প্রতিটি ডিম ৭ টাকা দরে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী, লোকসান গুনেছেন ১৭ হাজার টাকা।
মুস্তাহিদ আলী বলেন, তিন মাস আগে ভুট্টা কিনেছি প্রতি কেজি ২৩ টাকায়। সেই ভুট্টা বর্তমানে ৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ২ হাজার ২০০ টাকার সয়াবিনের বস্তা (৫০ কেজি) ৩ হাজার ২০০ টাকা, রাইস ব্র্যান ১ হাজার ২০০ টাকার জায়গায় ২ হাজার ৫০০ টাকা, লাইমস্টোন ৪০০ টাকার বস্তা এখন ৬০০ টাকা। ওষুধ ও ভ্যাকসিনের দামও বেড়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি জেলায় পোলট্রি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজে থেকে তাঁদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সরকার পোলট্রি শিল্প নিয়ে ভাবছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি নীতিমালা হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো