এক বিঘা জমির ধানের মূল্য ৫ লাখ
কৃষি বিভাগ
উচ্চ ফলনশীল। সাধারণ ধানের তুলনায় ফলন হয় ৬ গুণ। দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে। মাত্র এক মন ধানের দাম ১২ হাজার টাকা। এমন এক জাতের ধান আবাদ করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার এক মুদি দোকানদার মিলন হোসেন।
মাত্র এক বিঘা জমিতে এই ধানের আবাদ করে তিনি তা ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এই খবর এখন মিরপুর উপজেলার কৃষকদের মুখে মুখে। সর্বত্র চলছে আলোচনা। এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেকেই আসছেন বীজ সংগ্রহ করতে। মূলত বীজ হিসেবেই প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন মিলন হোসেন। স্থানীয় কৃষি-বিভাগও এই ধান সংগ্রহ করেছেন। তারা এ ধান নিয়ে গবেষণা করবেন বলে জানা গেছে।
কৃষক মিলন হোসেন মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় মুদি দোকানি হলেও দীর্ঘদিন ধরেই আধুনিক চাষাবাদে তার আগ্রহ।
মিলন হোসেন আরটিভি নিউজকে জানান, প্রায় ৩ বছর আগে ব্রি-৫১ জাতের ধান চাষ করেন। সে সময় ওই ধানের জমিতে মাত্র এক গোছা ধান ছিল অন্যরকম তার ভাষায় অস্বাভাবিক। অন্য গাছের তুলনায় ওই গোছা ধানের গাছগুলো বেশ শক্ত, লম্বা এবং মোটা।
তিনি আরও জানান, আলাদা করে গাছগুলোর দিকে নজর রাখা হয়েছিল। পরে ওই ধান গাছের শীষে অস্বাভাবিক পরিমাণে ধান আসে। ধানগুলো ছিল সরু। ধান কাটার সময় ওই গোছার ধান আলাদা করে কেটে বাড়িতে নেন এবং সংগ্রহ করে রাখেন। পরে ওই ধান আলাদা স্থানে চারা দেন তিনি। অল্প জমিতে আলাদা করে ওই ধানের চাষ করেন। সেই ধানও বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। পরের বছরে ওই ধানের চারা এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে এই ধানে ব্যাপক লাভ হয়েছে তার।
মিলন বলেন, যেহেতু এই জাতের কোন নাম তার জানা নেই। তাই নিজের মেয়ের নামের সাথে মিল রেখে এই ধানের নাম দিয়েছেন ফাতেমা ধান। এই ধান অন্য ধানের মতেই চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা অন্য ধানের তুলনায় বড়। গাছের বয়স ১০০-১১০ দিন। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ ধান হয়। যা সাধারণ ধানের তুলনায় ৬ গুণ। যার ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। শক্ত ও লম্বা হওয়ায় রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম। এছাড়া চিকন চাল হয় এবং ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।
তিনি আরও বলেন, এই বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান পেয়েছেন তিনি। যেহেতু এই ধান ইতোপূর্বে কেউ চাষ করেনি। তাই আশপাশের এলাকার চাষিরা এসে বীজ হিসেবে এই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমি ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে ধান বিক্রি করেছি। যা ৫ লাখ টাকার উপরে হবে। মিলন বলেন, আমি এখন চাই এ ধান ছড়িয়ে পড়ুক। দেশের কৃষকের ধান চাষ সফল হোক। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হোক দেশ। আমার মেয়ের নামের ধান সবাই চাষ করবে এতেই আমার আনন্দ।
মিরপুরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম হোসেন বলেন, মিলনের ধানের খড়ও গবাদিপশুর জন্য উন্নতমানের খাবার হচ্ছে। সাধারণত প্রতিটি ধানের শীষে দেড়শ’ ধান থাকে। কিন্তু মিলনের ধানের প্রতিটি শীষে ৭শ উপরে ধান হয়েছে। বিঘা প্রতি ৪০-৫০ মণ ফলন হতে পারে।
স্থানীয় কৃষি অফিসের মতে, চলতি বছর বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে হাইব্রিড ৭ দশমিক ৮ মেট্রিকটন এবং উফশী হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৮ মেট্রিকটন।
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ আরটিভি নিউজকে বলেন, কৃষক মিলন হোসেন বুদ্ধি করে ব্রিধান-৫১ জাতের মধ্য থেকে একটা ধানের গোছা সংগ্রহ করে নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের আধুনিক ধান চাষে উদ্বুদ্ধ এবং প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আমরা এ ধান সংগ্রহ করেছি। যা উন্নত গবেষণার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সূত্র: আরটিভি