ঝালকাঠিতে গরুর ক্ষুরা রোগের সয়লাভ, দিশেহারা কৃষক
প্রাণিসম্পদ
হঠাৎ করে ব্যাপক হারে ঝালকাঠি জেলার চার উপজেলায় দেখা দিয়েছে গরুর ক্ষুরা রোগ। এই রোগে জেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারে ও কৃষকের কয়েক হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে বাছুর ও গর্ভবতী গাভী।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো গরু মারা যায়নি বলে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সংক্রামক ভাইরাস ক্ষুরা রোগ থেকে প্রতিকার পেতে প্রতি ছয় মাস পর পর টিকা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। আক্রান্ত হলে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সুস্থ করার নির্দেশনা দেয়া হয় বলেও জানায় সূত্রটি।
কৃষক ও খামারীরা জানান, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভেটেরেনারি সার্জন (ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা) ডা. মো. সরোয়ার হাসান বলেন,আবহাওয়াজনিত কারণে এই রোগ শুরু হয়েছে। আমরা আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসায় পরামর্শ সহায়তা দিচ্ছি। যেহেতু ক্ষুরা রোগ ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। তাই এর তাৎক্ষণিক সুস্থ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও সুস্থ গরুগুলোকে ক্ষুরা রোগে প্রতিরোধের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।
ডা. মো. সরোয়ার হাসান আরো জানান, ক্ষুরা রোগ অতি তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত পশুর মুখ ও পায়ে ঘা হবার ফলে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং খুঁড়িয়ে হাটে। ক্ষুরা রোগ অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় কোনো এলাকায় এ রোগ দেখা দিলে একশত ভাগ পশুই তাতে আক্রান্ত হয়। বাতাসের সাহায্যে এ ভাইরাস ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় আক্রান্ত পশুকে দূর-দূরান্তের হাটবাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয়। তখন ভাইরাস বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। আক্রান্ত পশুর পরিচর্যাকারীর জামা-কাপড়, জুতা ইত্যাদির সাহায্যেও ভাইরাস বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
ঝালকাঠি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাহেব আলী বলেন, গরুর তড়কা, বাদলা, গলাফুলা ও ক্ষুরা রোগ সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ। এ ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে একপশু থেকে অন্য পশুতে ছড়িয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আমরা কৃষক ও খামারিদের সর্বাত্মক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি।
ঝালকাঠিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের চিকিৎসকসহ জনবল সংকট থাকায় গবাদি প্রাণীর চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে । দীর্ঘদিন ধরে এই প্রাণী সম্পদ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই জেলার কয়েক হাজার হাঁস মুরগি ও গবাদিপশু।
৫৮টি পদের মধ্যে ২১টি পদই রয়েছে শূন্য। ৩৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম। জেলার চার উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রয়েছেন তিনজন, ভেটেরেনারি সার্জন পাঁচজনের স্থানে রয়েছে দুইজন। ঘাটতি থাকায় কর্মকর্তাদের বেগ পেতে হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায়।
প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে এ জেলায় একটি জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, চার উপজেলায় চারটি প্রাণিসম্পদ অফিস, চারটি কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ও একটি ডাকরিয়ারিং সেন্টার আছে।
জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ জন বিভিন্ন সেবা যেমন কৃত্রিম প্রজনন, ছাগলের ঠান্ডা কাশিসহ ভ্যাকসিন দিতে আসতো। বর্তমানে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে খামারিদের।
অপরদিকে একসময় এই হাসপাতালটি হতে সপ্তাহে একদিন বিনা মূল্যে হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন দেয়া হতো। বর্তমানে সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। কারণ বর্তমানে বাজারে হাজারের নিচে ২০-২৫টির হাঁস মুরগির কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না।
এখানে অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় বিপুল জনগোষ্ঠির প্রাণিসম্পদ চিকিৎসায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবল সংকটের কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাহেব আলী।