৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার, ১৬ মে , ২০২৫
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : মার্চ ২৪, ২০২৫ ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
ভুট্টা চাষে চাঙ্গা লালমনিরহাটের তিস্তার চরের অর্থনীতি
কৃষি বিভাগ

ভুট্টা চাষে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে লালমনিরহাটের তিস্তার চরের অর্থনীতি। জেলার তিস্তা নদীর বাম তীরের ৬৭ কি.মি. জুড়ে শুষ্ক মৌসুমী জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে দামী সোনালী দানা ভুট্টা।

জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে  নদীবেষ্টিত চার উপজেলায় তিস্তা নদীর চরে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হচ্ছে এ ভুট্টা ।

এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে এ বছর ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নের কিছু অংশ তিস্তা নদী বিধ্বস্ত। এ ৩টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চাষীরা জমিতে বিভিন্ন প্রকার ভুট্টার চাষাবাদ করেছেন। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে একমাত্র অবলম্বন নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে ভুট্টার আবাদ। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।

ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষ বেশি লাভবান হওয়ায় চরের কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষ করছেন বেশি।

৩৩ শতাংশের চরের এক বিঘা জমিতে ভুট্টার ফলন হয় ৪০ থেকে ৪২ মণ, উৎপাদন খরচ ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা।  ভুট্টার বর্তমান বাজার দর ১২৫০-১৩৫০ টাকা। অন্য ফসলের থেকে ভুট্টায় দ্বিগুণের বেশি লাভ হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভুট্টার চাষ করছেন চরের কৃষকেরা।

দামি সোনালী দানা ভুট্টা চাষ করে অবহেলিত বঞ্চিত চরের মানুষেরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছেন।

সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত কাকিনা ইউনিয়নের চর রুদ্রেশ্বর, ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারী ও তুষভান্ডার ইউনিয়নের মুন্সির বাজার চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ বছর বন্যার কারনে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হলেও ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। বন্যার পানিতে পলি জমে চরাঞ্চলের জমি বেশি উর্বর হওয়ায় ভুট্টার ফলন ভালো হয় বলে জানান চাষীরা। ভুট্টাকে  ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি।

উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন শৌলমারী এলাকার ভুুূট্টাচাষী আব্দুল খালেক জানায়, এবারে তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ভুট্টা উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে প্রায় ২ লক্ষ টাকা। ভুট্টার ফলন যেভাবে হয়েছে তাতে তিনি প্রায় ২৫০’ থেকে ৩’শ মণ ভুট্টার আশা করছেন। বাজারদর ভালো থাকলে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন এ চাষী। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, বীজ, সার ও কীটনাশকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম হাতের লাগালে থাকলে দ্বিগুণ লাভ হতো বলে জানান তিনি।

চর ভোটমারী এলাকার ভুট্টা চাষী শরিফুল ইসলাম ৩ একর জমিতে ভূট্টা চাষাবাদ করেছেন তিনি বলেন, ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ভুট্টার ভালো ফলনে তার মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। ভুট্টার বাজারদর ভালো থাকলে অনেক লাভের আশা করছেন এ চাষী।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ভোটমারী ব্লক) মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চরাঞ্চলের ভুূট্টা চাষীদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবার ভোটমারী ইউনিয়নে ১৯৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ প্রণোদনার ভুট্টার বীজ ও সার দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছে এবং পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলায় ৪১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। লাভজনক ফসল হওয়ায় চরাঞ্চলে ভুূট্টার আবাদ বেশি হচ্ছে। কৃষকরা অধিক লাভ করতে পারে, সে বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’

চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাজারদর ভালো থাকলে ভুট্টা চাষীরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি। ভুূট্টা চাষে চরের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। অনেকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও কৃষকরা এর সঠিক বাজার মূল্যে পেলে চরের অর্থনীতি আরও সচল হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ১৮, ২০২৫ ৯:৪০ পূর্বাহ্ন
লিচুর সাথী ফসল মিষ্টি কুমড়া চাষে সাফল্য, কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে
কৃষি বিভাগ

লিচু বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন শিক্ষক হুমায়ুন কবির জনি। তিনি প্রথমবারের মত প্রায় এক একর লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে সফল হয়েছেন। তার উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও সাফল্য দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য চাষিরাও।

বোচাগঞ্জ উপজেলার নেহালগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক শিক্ষক হুমায়ুন কবির জনি (৪০) একই উপজেলার আটগাঁও গ্রামের জয়নাল আবেদীনের পুত্র। তিনি নিজে নিজেই পরীক্ষামূলকভাবে লিচু বাগানের নিচের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমবারেই সফল হন।

হুমায়ুন কবির জানান, তিনি প্রথম দিনাজপুর থেকে এক হাজার দু’শতটি উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিনে এনে বাসায় চারা তৈরি করেন। নিজের তৈরি করা চারা এক একর ২০ শতক জমির লিচু বাগানে রোপণ করেন।

জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন জাতের মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপণ করে প্রতিটি মিষ্টি কুমড়া গাছে ১০টির বেশি কুমড়ার অংকুর দেখতে পান। কিন্তু তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ৫ থেকে ৬টি কুমড়া সংগ্রহ করছেন। এতে অর্জিত ফসলের আকার বড় হয়েছে এবং মিষ্টি কুমড়ার গাছ বালাই মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

দিনাজপুর জেলায় আম ও লিচু বাগানের সংখ্যা অনেক। প্রতিটি বাগানে গাছের নিচে হাজার হাজার একর জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। সেই বাগানে গাছের নিচের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ শুরু করলে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষিবিদরা।

বাসসের সাথে আলাপকালে জনি বলেন, ‘আমি লিচু বাগানে তিন জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। এই কুমড়া আবাদ করতে আমার প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকার মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত থেকেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছি। এখন আরো অনেক মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ আশা করছি, এ মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে ৫ লক্ষ টাকা আয় হবে।’
লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষের এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জনি বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগের স্কুল শিক্ষক। এই পদ্ধতি নিজেই চিন্তা করে প্রয়োগ করেছি। কারণ লিচু বাগানের নিচের পতিত জমিটি সাধারণত পড়ে থাকে। তাই আমি প্রথমবার সেই পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি।’

সরেজমিনে হুমায়ুন কবিরের মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে গিয়ে দেখা হয় একই এলাকার কৃষক আব্দুর রহিমের সাথে। আব্দুর রহিম বাসসকে বলেন, ‘আমি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা যায়।

তাই পদ্ধতি দেখতে এসেছি। লিচু বাগানের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া চাষ দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি আগামী বছর আমার আম বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করব।’

বোচাগঞ্জ উপজেলার কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বাসসকে বলেন, হুমায়ুন কবীরের সাফল্য দেখে জেলার অনেক লিচু ও আম বাগানের মালিক কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন। ওই সব বাগান মালিকদের লিচু গাছের নিচের জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব বাগানে উন্নত জাতের মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করলে সাফল্যের হার বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, জেলার হাজার হাজার একর লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদিত হলে জেলার চাহিদা পূরণ করে তা দেশের অন্যান্য জেলাতেও সবজির চাহিদা পূরণ করতে পারবে।’

বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন কুমার শাহা বলেন, ‘ কৃষি শিক্ষক হুমায়ুন কবির জনি নিজ উদ্যোগে এক একর জমিতে প্রথমবারের মতো লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে সফল হয়েছেন । আশা করছি, এ পদ্ধতিতে চাষ করে ভালো ফলনে কৃষক লাভবান হবেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা তাকে কারিগরি পরামর্শ প্রদান করছি। আমি হুমায়ুন কবির জনির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, সম্প্রতি জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় লিচু বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ পরিদর্শন করেছি। এটি একটি সফল উদ্যোগ। এই জেলার ১৩ টি উপজেলার লিচু ও আম বাগানে গাছের মাঝখানের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়াসহ সাথী ফসল চাষে বাগান মালিকদের উৎসাহ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘লিচু ও আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষে সাফল্য অর্জিত হলে তা জেলার কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।’

 

(বাসস)

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ১৬, ২০২৫ ১:১৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্বভার গ্রহণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
কৃষি বিভাগ

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে প্রাচীন অন্যতম পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি (সয়েল সায়েন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এসএসএসবি) এর ২০২৫-২০২৬ সেশনের কমিটির দায়িত্বভার গ্রহণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পূর্ববর্তী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুন নেতৃবৃন্দের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

১৫ মার্চ/২০২৫ ফার্মগেটের BARC তে বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতির নবনির্বাচিত ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি হিসেবে ড. মো: মনোয়ার করিম খান এবং জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে SRDI এর মহাপরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও লেখক জনাব ড. মো: নুরুল হুদা আল মামুনসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি -১ প্রফেসর ড. মো: জহির উদ্দিন, সহ-সভাপতি -২ প্রফেসর ড. আক্তার হোসেন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক -১ ড. মো: বখতিয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক -২ প্রফেসর ড. এমএমআর জাহাঙ্গীর, কোষাধ্যক্ষ ড. ফরিদুল আলম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রফেসর ড. মো: মিজানুর রহমান, নির্বাহী সদস্য হিসেবে ড. মো: শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. মো: জসিম উদ্দিন, প্রফেসর ড.মো: দেলোয়ার হোসেন, ড. মো: রফিকুল ইসলাম, ড. হাবিব মোহাম্মদ নাসের,প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, ড. মো: মাহবুবুল আলম তরফদার, ড. মো: তারেক বিন সালাম ও ড. ফাতেমা নাসরিন জাহান নির্বাচিত হয়েছেন।

নবনির্বাচিত পেশাজীবি নেতৃবৃন্দ তাদের উপর বিশ্বাস আস্থা ও গুরু দায়িত্ব প্রদানের জন্য সকল মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবীদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আগামী দিনে দেশ ও জাতির কল্যাণে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও পেশাজীবীদের কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ১৬, ২০২৫ ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
সয়াল্যান্ডে ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা
কৃষি বিভাগ

লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সয়াবিন আর সয়াবিন। এক থেকে দেড় মাস বয়সী সয়াবিনের চারার কচিপাতায় দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। দেড় থেকে দুই মাস পর কৃষকের ঘরে উঠবে সয়াবিন।

উপকূলীয় এই জেলার আবহাওয়া এবং মাটি সয়াবিন চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় রবি মৌসুমে কৃষকেরা সয়াবিন চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিশেষ করে যে সব জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্ভব হয় না, সেসব জমিতেই সয়াবিন চাষ করা হয়।

অন্যান্য ফসল উৎপাদনের তুলনায় সয়াবিন চাষে খরচ কম লাভ বেশি। বিভিন্ন পশুখাদ্য তৈরির কারখানায় সয়াবিনের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে দাম। সয়াবিন এখন অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। দেশের ৮০ ভাগ সয়াবিন উৎপাদন হয় এই জেলায়। এ জন্য লক্ষ্মীপুরকে ‘সয়াল্যান্ড’ বলা হয়।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে যে খরচ হয়, তার চেয়ে সয়াবিন চাষে খরচ কম। অন্যান্য ফসল চাষে যেখানে মাটির শক্তি হ্রাস পায়, সেখানে সয়াবিন চাষের ফলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। ফলে সয়াবিনের জমিতে অন্যান্য ফসলও বেশ ভালো হয়। সয়াবিন চাষে সর্বোচ্চ দুবার করে সার-ওষুধ দিতে হয়। এছাড়া আগাছা পরিষ্কারের জন্য গাছের চারা ছোট অবস্থায় একবার নিড়ানি দিলেই যথেষ্ট।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাঝে মধ্যে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় সয়াবিন চাষিদের। এক্ষেত্রে জলবায়ু ও লবণাক্ততা সহনশীল এবং স্বল্প জীবনকালের সয়াবিনের জাত চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষি বিভাগ ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরে চলতি মৌসুমে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় দুই মেট্রিক টন সয়াবিন পাওয়া যায়। সে হিসেবে এবার সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। জেলার সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের আবাদ হয় মেঘনার উপকূলীয় উপজেলা রামগতিতে। এখানে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। কমলনগর উপজেলাতে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর, সদর উপজেলাতে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ও রায়পুর উপজেলাতে ৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ হয়েছে।

সদর উপজেলার চর রমনী এলাকার কৃষক মোস্তফা কামাল বাসসকে বলেন, ৪০শতাংশ জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। আশা করি, ৩০ মণ সয়াবিন পাব। প্রতি মণ সয়াবিনের বাজার দর দুই হাজার টাকার মধ্যে থাকে। প্রতি বছর সয়াবিন চাষ করি। ধানের চেয়ে লাভ বেশি হয়। গেল বছর ২২০০ টাকা মণ দরে ৪৯ হাজার টাকার সয়াবিন বিক্রি করেছি। এবারও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার সয়াবিন বিক্রির আশা করছি। সয়াবিন চাষে ধান আবাদের চেয়েও খরচ এবং পরিশ্রম কম হয়।

কমলনগর উপজেলার মতির হাটের সয়াবিন চাষি মিজান মুন্সী বলেন, বোরো ধান বা বিভিন্ন সবজি আবাদে প্রচুর সার এবং কীটনাশক প্রয়োজন। এতে খরচও বেশি পড়ে। কিন্তু সয়াবিনে সার-কীটনাশক কম লাগে। জমিতে বীজ বপনের আগে একবার এবং গাছে ফুল আসার সময় একবার সার দিতে হয়। কীটনাশকও দুই বার দিলেই চলে। এ কারণে সয়াবিন চাষে খরচ কম। এতে সেচের ও প্রয়োজন হয় না। এজন্য যেসব জমিতে পানি সেচের উৎস থাকে না, ওই সব জমিতেই সয়াবিনের আবাদ করা হয়।

কৃষক রহিম উল্যাহ,স্বপন ও গাজী শহীদসহ অনেকেই বলেন, সয়াবিন লাভবান শস্য। কিন্তু ঝুঁকিও আছে। পাকা সয়াবিন ঘরে তোলার আগে যদি অতিবৃষ্টি হয় এবং ক্ষেতে পানি জমে যায়, তাহলে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যায়। এতে লাভের বদলে লোকসান হয়। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে এবছর সয়াবিনে গত বছরের চেয়ে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, সয়াবিন চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। গত মৌসুমে জেলায় ৩৫০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৪০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সয়াবিন চাষে পানি কম লাগে। এছাড়া উপকূলীয় জমিতে কিছুটা লবণ রয়েছে, অন্য ফসল লবণাক্ততা সহ্য করতে না পারলেও সয়াবিন পারে। আমরা কৃষকদের উন্নত জাত সরবরাহ করি। বীনা ৫, বীনা ৬, বারি ৪, বারি ৬, বিইউ ৩, বিইউ ৪, বিইউ ৫- এসব জাতের সয়াবিনের দানা বড়, ওজন বেশি। তাই ফলনও বেশি। এগুলো পানি ও জলবায়ু সহনশীল। আগাম ঝড় থেকে রক্ষা পায়। বর্তমানে সয়াবিনের জীবনকাল কম। কৃষকরা আগেভাগেই বীজ বপন করলে দ্রুত সয়াবিন কাটতে পারেন।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ১২, ২০২৫ ৯:১৫ পূর্বাহ্ন
মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভবান উল্লাপাড়ার কৃষকরা
কৃষি বিভাগ

পুষ্টিগুণে ভরপুর টমেটো। কাঁচা বা রান্না করা, জুস বা কেচাপ, মিষ্টি, টক বা নোনতা যে কোনো উপায়েই এটি খাওয়া যায়। অনেকে আবার সালাদ বানিয়ে টমেটো খান। রান্নায় স্বাদ এবং রং আনতেও টমেটোর জুড়ি মেলা ভার। টমেটো পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপিন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণসহ নানা রোগ ব্যাধি থেকে দূরে রাখে। এ কারণে টমেটোর চাহিদা দিন-দিন বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলিয়ারপুর গ্রামের মৃত মজিবর আকন্দ ও মোছাঃ জাহানারা খাতুন দম্পতির পুত্র কৃষক নেজাব আলি (৪০) মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। মালচিং হলো এক ধরনের পলিথিন। তাকে অনুসরণ করে মালচিং পদ্ধতিতে এখন অনেকেই টমেটো চাষের স্বপ্ন দেখছেন।

বাসসের সাথে আলাপকালে নেজাব আলী বলেন, মানব মুক্তি সংস্থা (এমএমএস) থেকে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে নিজ বাড়ির সাথে মাত্র  ২৫ শতাংশ  জমিতে বেড প্রস্তুত করে ২০২৪ সালের অক্টোবর এর শেষে চারা রোপণ করে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার তৈরি করা বাগানে প্রতিটা গাছে বিপুল পরিমাণ টমেটো ধরে আছে। যা অনেকেই দেখতে আসছেন। আমি ইতোমধ্যে প্রায় ৮ মন টমেটো বাজারে বিক্রি করেছি।

তিনি জানান, ২৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ করে তার মোট খরচ  ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। তবে এবার বাজারে টমেটোর দাম কম থাকায় লাভের পরিমাণ একটু কম। তা সত্ত্বেও এবছর ২৫/৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এমএমএস-এর কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল  জানান, মালচিং হলো এক ধরনের পলিথিন। যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রোগজীবাণু থেকেও গাছকে রক্ষা করে। অতিরিক্ত পানি রোধ করে। গাছের গোড়ায় আগাছা হয় না। এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমে জমি তৈরি করে মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো সার মিশিয়ে নিয়ে বেড তৈরি করতে হয়।

তিনি জানান, বেডের প্রস্থ হবে এক মিটার। এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। এরপর জমিতে তৈরি করা সবকটি বেড মালচিং পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পলিথিনের নিচে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে তাই বেডের চারপাশে পলিথিনের উপরে ভালোভাবে মাটিচাপা দিতে হবে। বেডে চারা রোপণের জন্য ১৮ ইঞ্চি দূরত্ব রাখতে হবে। এরপর চার ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে ছিদ্র করে ওই ছিদ্রে টমেটোর চারা রোপণ করতে হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, এ উপজেলায় কৃষির বৈচিত্র্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এখানে বিভিন্ন বিলসহ নিচু ও সমতল এলাকার  কৃষিতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে এখানে যে সব ফসল উৎপাদিত হচ্ছে তার মধ্যে টমেটো চাষ করে আলিয়ারপুরের নেজাব আলী-সহ বেশ কয়েকজন কৃষক ব্যাপক হারে সফলতা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, টমেটো চাষ লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। টমেটোর ফলন এবং দাম দুটিই ভালো হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। তাদের এ সাফল্য দেখে এখন অন্য চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। মানব মুক্তি সংস্থার এহেন উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি।

সুবর্ণা ইয়াসমিন জানান, এবছর উল্লাপাড়ায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। তার মধ্যে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে।

কৃষি অফিসারের মতে, মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আদ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ পদ্ধতি খুবই সুন্দর একটা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে জমিতে আগাছা হয়না বললেই চলে। মালচিং পেপারে কার্বন থাকার কারণে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সারের গুণাগুণ ঠিক থাকে ফলে ফলনও বৃদ্ধি পায়।

 

(বাসস)

শেয়ার করুন

প্রকাশ : মার্চ ৫, ২০২৫ ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
নড়াইলে ২,৯০৩ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
Uncategorized

নড়াইল জেলার তিন উপজেলায় ২ হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির চাষাবাদ শুরু হবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি নিপু মজুমদার। উচ্ছে, করলা, বরবটি, ধুন্দল, ওলকচু, বেগুন, সবুজ শাক, চিচিংগা, শসা, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি আবাদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি খরিপ-১ মওসুমে জেলার ৩ উপজেলায় মোট ২ হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

এর মধ্যে জেলা সদর উপজেলায় ১ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে, লোহাগড়া উপজেলায় ৭৫৫ হেক্টর জমিতে এবং কালিয়া উপজেলায় ৭৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে  ৫৮ হাজার ৬৬৯ মেট্রিক টন।

 

এর মধ্যে জেলা সদর উপজেলায় ১ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে, লোহাগড়া উপজেলায় ৭৫৫ হেক্টর জমিতে এবং কালিয়া উপজেলায় ৭৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে  ৫৮ হাজার ৬৬৯ মেট্রিক টন।

নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জসীম উদ্দীন জানান, জেলার ৩ উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির চাহিদা মেটাতে চাষ উপযোগী জমিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের সাথে যোগাযোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। অল্প জমিতে অধিক সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা।আশা করা যাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ভালোমানের বীজ সরবরাহ, সেচ, সার ও কীটনাশকের কোনো ঘাটতি পড়বে না।

কৃষকরা গ্রীস্মকালীন সবজি চাষে অধিক মনোযোগী হবেন বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৫ ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
নাটোরে মটরশুটির অধিক ফলন
কৃষি বিভাগ

আর্থিক মূল্য এবং জমির উর্বরতা শক্তির সুফল প্রাপ্তির কারণে জেলার কৃষকরা মটরশুটি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিগত বছরগুলোতে জেলায় আবাদী জমি ও উৎপাদন-উভয়ই বেড়েছে। চলতি বছর জেলায় প্রায় শত কোটি টাকার মটরশুটি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে মটরশুটি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বাগাতিপাড়া উপজেলায় সর্বোচ্চ ৩৭৯ হেক্টর, সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর, লালপুরে ২১০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ১১৬ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ১১২ হেক্টর এবং গুরুদাসপুর উপজেলায় ১০ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ আশা করছে, ১০৭৭ হেক্টর জমি থেকে ১৩ হাজার টন মটরশুটি উৎপাদন হবে- মণ প্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা গড় হিসাবে যার আর্থিক মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। বিগত বছরে জেলায় এক হাজার ২২ হেক্টর জমি থেকে ১২ হাজার  টন মটরশুটি উৎপাদন হয়েছিল। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় আবাদী জমি ও উৎপাদন ক্রমশ বেড়েছে।

মূলত অক্টোবর মাসে জমি চাষ করে মটরশুটির বীজ বপন করা হয়। বিঘা প্রতি ১২ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। জমিতে শুধুমাত্র টিএসপি ও পটাশ সারের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্রবিশেষ অনুখাদ্য এবং গোড়াপঁচা ও পোকারোধী কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তবে সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। তিন দফায় গাছ থেকে মটরশুটি সংগ্রহ করা হয়। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে খরচ পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার নওদাপাড়া এলাকার কৃষক চাঁন মিয়া তার আড়াই বিঘা জমিতে মটরশুটি আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দু’দফায় গাছ থেকে মটরশুটি পেয়েছেন প্রায় ৫০ মণ। তৃতীয় দফায় আরও ১৫ মণ মটরশুটি পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

দেড় বিঘা জমিতে মটরশুটি চাষকারী ফতেঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, মটরশুটি উঠলে ঐ জমিতে পাট চাষ করবো। মটরশুটি গাছের ডালপালা ও শেঁকর মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তাই পরের ফসলে সার কম লাগে।

নাটোরের হয়বতপুর, দত্তপাড়া এবং ছাতনী বটতলা হাটে মৌসুমী সবজির সাথে প্রতিদিন শত শত মন মটরশুটি বিপণন হয়। নাটোর ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা নাটোরের মটরশুটির ক্রেতা। দত্তপাড়া হাটে মটরশুটি বিক্রী করতে আসা বড়হরিশপুর এলাকার কৃষক হযরত আলী জানান, ১২ মণ মটরশুটি বিক্রী করেছেন ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে। মৌসুমের শুরুতে এই দর দ্বিগুণেরও বেশী ছিল বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান বলেন, মটরশুটির শেঁকর ইউরিয়ার ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। তাই মটরশুটির জমি ইউরিয়া সার তো প্রয়োজন হয় না, পরবর্তী ফসল চাষাবাদে ঐ জমিতে ২০ ভাগ ইউরিয়া কম ব্যবহার করলেই চলে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ বাসস’কে বলেন, মটরশুটির শেঁকড় ইউরিয়া সারের উৎস হিসেবে কাজ করে। ফলে মটরশুটির আবাদী জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার করতে হয়না। এছাড়া মটরশুটির জমিতে পরবর্ত্তী ফসলেও ইউরিয়ার ব্যবহার করতে হয়না বললেই চলে। উৎপাদন খরচ কম, অধিক মূল্য প্রাপ্তি ছাড়াও জমির উর্ব্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে মটরশুটি চাষের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হন। তাই কৃষকরা মটরশুটি চাষে ঝুঁকেছেন। মাটির গুনাগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের উচ্চমূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা মটরশুটি চাষে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে মটরশুটি এই এলাকার অন্যতম অর্থকরি ফসলে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২৫ ১২:০৬ অপরাহ্ন
মাশরুম চাষে সফল তরুণ উদ্যোক্তা সাদ্দাম
কৃষি বিভাগ

মাশরুম চাষে সফল সাতক্ষীরার তরুণ উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন। ২০১৮ সালে যখন স্বল্প পরিসরে মাত্র ৪ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে যখন তিনি মাশরুম চাষ শুরু করনে তখন তার প্রতিবেশীরা তাকে বলতেন পাগল। টাকা পয়সা খরচ করে ব্যাঙের ছাতা চাষ করছে। মাত্র ৬ বছর পার হতে না হতেই তিনি এখন একজন সফল মাশরুম ব্যবসায়ী।

তার মাশরুম ফার্মে বর্তমানে তিনি প্রায় ৭ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। সেখানে সব সময় কাজ করছেন ৬-৭ জন শ্রমিক। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় অনেকেই এটি চাষ করারও উদ্যোগও নিয়েছেন। তার এই মাশরুম দিয়ে তৈরি হচ্ছে মজাদার চপ, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের খাবার। ব্যতিক্রমী এ খাবার খেতে দুরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টিবিদরা নিয়মিত চাষের এই মাশরুম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

কৃষি বিভাগ বলছে সবজির বিকল্প হিসাবে মাশরুম ব্যবহার করতে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ এই মাশরুমের পরিচিতি বাড়াতে পারলে এটি সাদা সোনা হিসেবে গণ্যহবে বলে মনে করেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।

জেলা শহরের পাকুখরালী কাঠালতলা গ্রামের মো. আব্দুল হাকিম ও নাছিমা খাতুন দম্পতির ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন (৩২)।

মাশরুম চাষী সাদ্দাম হোসেন জানান, ২০১৮ সালে তৎকালীন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরপর তার মাধ্যমে ঢাকার সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট থেকে মাত্র ৪ হাজার টাকা খরচ করে ২০০ পিস মাশরুমের বীজ এনে সেটি নিয়ে পরিচর্যা শুরু করি। দিনে দুই থেকে তিন বার পানি দেয়া ছাড়া বাড়তি তেমন কোন কাজ করা লাগেনা এটি চাষে। এক সপ্তাহ’র পর থেকে ওই বীজ থেকে মাশরুম উৎপাদন শুরু হয়। এরপর তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি নিজেই পরবর্তী বছর থেকে বীজও উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে তার এই মাশরুম ফার্মে তার নিজের উৎপাদিত ৪ হাজার ৫০০ পিস বীজ রয়েছে। তিনি সেখানে বর্তমানে ৭ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি এসময় বীজ উৎপাদন সম্পর্কে জানান, প্রথমে কাঠের গুড়া ও ধানের তুস ভালোভাবে মিশিয়ে জীবানু মুক্ত করে ৫’শ গ্রাম বা ১কেজি পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে চা চামচের এক চামচ পরিমান মাশরুমের গুড়ো প্রদান করা হয়। এরপর দিনে ২-৩বার পানি দেয়াসহ এটি ঠিকমত পরিচর্যা করার পর ৩০ দিন পর এ প্যাকেটটি সাদা আকার ধারন করে বীজ উৎপাদন শুরু হয়। আর এই বীজ তৈরি হওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে মাশরুম সংগ্রহ শুরু করা হয়।

তিনি বলেন, যখন মাশরুম চাষ শুরু করি তখন আমাকে আমার প্রতিবেশীরা পাগল বলতেন। আমি  টাকা পয়সা খরচ করে কেন ব্যাঙের ছাতা চাষ করছি। এমন নানা প্রশ্ন আর নানা কথা আমাকে শুনতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকে মাশরুম চাষ করে মাশরুম জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাধারন মানুষের মাঝে বিনা পয়সায় খাওয়ায়ে মার্কেট তৈরী করতে হয়েছে। বর্তমানে এই মাশরুম শহরের বড় বড় শপিং সেন্টার গুলোতে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি মাশরুম ৪ শ’ টাকায় বিক্রি করছি। সব খরচ বাদ দিয়ে এতে আমার লাভ হয় দেড় থেকে দু’শো টাকা। মাশরুম উৎপাদনের ফার্ম ছাড়াও আমার দুটি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

এতে কাজ করছেন ৬-৭ জন শ্রমিক। শহরের দুটি স্থানে আমার ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে মাশরুম ছাড়াও মাশরুমের তৈরী মজাদার চপ, ফুচকা, চটপটিসহ নানা ধরনের খাবারও বিক্রি হচ্ছে। ব্যতিক্রমী এ খাবার খেতে দুরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। এটি অত্যান্ত পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় পুষ্টিবিদরা নিয়মিত চাষের এই মাশরুম খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আমার দেখাদেখি কেউ কেউ এটি চাষ করছেন, আবার অনেকেই এটি চাষ করার উদ্যোগও নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মাশরুম ও মাশরুমের বীজ তৈরীতে আমার মাসে খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। আর এ থেকে সব খরচ বাদে মাসে আমার ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকে।

ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের কর্মচারী হাবিবুল্লাহ জানান, এখানে সারা দিন কাজ করে ৫০০ টাকা মজুরি পাই। তা দিয়ে আমি আমার বাবা ও মাকে নিয়ে ভালো ভাবেই জীবন যাপন করতে পারি। এখানে আমি মাশরুম দিয়ে চপ, পাকুড়া, নুডুলস, ফুসকা, ছোলা, চটপটিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করে থাকি। মাশরুমের এই চপ খেতে এখানে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। এটি খেতেও খুব সুস্বাদু। সুস্বাদু হওয়ায় অল্প দিনেই মাশরুমের চপ সাতক্ষীরা শহরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল ইসলাম মনির জানান, মাশরুম চাষ সম্প্রসারনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র হ্রাসকরন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পৌরসভায় একজন করে উদোক্তা তৈরী করা হচ্ছে।

তাদের ১০ দিনের প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষনের পাশাপশি কারিগরি সাপোর্টও দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মাশরুমে যে গুনাগুন সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। মাশরুম সম্পূর্ণ একটি অর্গানিক খাবার। মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সবজির বিকল্প হিসাবে এটি ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চাষাবাদ এবং বিক্রয় বাড়াতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, খুব অল্প দিনেই সাতক্ষীরা শহরের পারকুখরালী কাঠালতলা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন মাশরুম চাষাবাদে সফলতা অর্জন করেছেন। পরিচিতি লাভ করেছেন একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে।

 

(বাসস)

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ২৬, ২০২৫ ৯:২১ পূর্বাহ্ন
কচুয়ায় পানির নিচে সুপারির ব্যবসা
কৃষি বিভাগ

বাগেরহাটের কচুয়ায় পানির নিচে রেখে কোটি টাকার সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পানির নিচে রেখে সুপারি বিক্রি সনাতন পদ্ধতি হলেও এ পদ্ধতি চলে আসছে বহুদিন ধরে। এ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাতকরণ সুপারি সাধারণত মজা সুপারি কোথাও ঢোপ সুপারি নামে পরিচিত।

কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কাঁচা পাকার মৌসুমে সুপারি মজুদ করে বিশেষ পদ্ধতিতে পানির ভিতর নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত রেখে এক সময় ভালো মূল্যে বিক্রি করা হয়। এ পদ্ধতিতে সুপারি বিক্রি করে লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী প্রতিবছর পানির নিচে রাখা কোটি টাকার সুপারি এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হয়।

তবে এ ধরনের পদ্ধতিতে সুপারি বিক্রি করা লাভজনক হলেও দূষিত হচ্ছে পানি। আর এ পানি দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য সুপারি প্রক্রিয়াকরণের জন্য সুপারিকে চৌবাচ্চা অথবা সংরক্ষিত ডোবায় রাখা জরুরি।

তবে মদা সুপারিকে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ কিংবা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে।

কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার আকাশ বৈরাগী বলেন, কচুয়া উপজেলায় মোট ১১৫৩ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। এ বছর ফলন হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৭১ মেট্রিকটন। সুপারিকে ভিজিয়ে বেশিক্ষণ কাঁচা রাখার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। যা স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক চাহিদা রয়েছে। মদা সুপারি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ভালো লাভবান হচ্ছেন।

পানি ও পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, প্রশাসনসহ সবার সহায়তা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের যদি এ ব্যাপারে সচেতন করা যায় তবে এ ধরনের সমস্যা সমাধান হবে এবং কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।

শেয়ার করুন

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৫, ২০২৫ ৩:১২ অপরাহ্ন
কৃষিতে নারীশ্রম, ফসলে চওড়া হাসি
কৃষি বিভাগ

অগ্রহায়ণ শেষে পৌষের আগমন। প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে শীতের দাপট। আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম শেষ। এখন চলছে নানা ধরনের শাক-সবজি আর শস্য চাষ ও ঘরে তোলার সময়। আর এসব কাজে চলনবিলসহ এর আশপাশের কৃষিপ্রধান জেলাগুলোয় চলছে নারী-পুরুষের ব্যস্ততা। কেউ মরিচ বা সবজি ক্ষেতে কাজ করছেন, অনেকেই আলু তোলায় ব্যস্ত। কেউ বা ব্যস্ত অন্যান্য শস্য ঘরে তোলা কিংবা গাছ পরিচর্চায়।

সম্প্রতি চলনবিল সমৃদ্ধ নাটোর, সিরাজগঞ্জ ছাড়াও বগুড়াসহ আশপাশের উত্তরের জেলাগুলো ঘুরে এমনটাই চোখে পড়েছে।  স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন ধান কাটা মৌসুমে কৃষিপ্রধান এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই কৃষি শ্রমিকদের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। ফলে অন্যান্য ফসল আবাদের জন্য শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে এই সংকট নিরসনে নারী কৃষি শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ে।

চলন বিল ছাড়াও বগুড়াসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় নারী কৃষি শ্রমিকরাও সমানভাবে কাজ করছেন। এই মৌসুমে যেমন এখন বগুড়ার আলু ক্ষেতগুলোতে গেলেই চোখে পড়ছে দলবেঁধে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা।

বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা মো. রতন মিয়া নামে কৃষক জানান, আলু ক্ষেতে গত কয়েক বছর ধরেই নারী কৃষি শ্রমিকদের উপস্থিতি বাড়ছে। এতে ধান কাটার মৌসুমে আলু ক্ষেতে শ্রমিক সংকট কেটে গেছে। অন্যদিকে আগে থেকেই ধান মাড়াই ও সংরক্ষণে নারীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। এখন ধান ক্ষেতে ধান আবাদের অন্যান ধাপেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সব মিলিয়ে কৃষিশ্রমের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠছেন উত্তরের নারী শ্রমিকরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়াসহ উত্তরের নারী শ্রমিকদের আগে শুধু ধান কাটার মৌসুমে মাড়াই বা সংরক্ষণের কাজে নিয়োজিত দেখা গেলেও এখন তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়বে ধান বা আলু ক্ষেত থেকে শুরু করে অন্যান্য শস্য ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদের নানা পর্যায়ে। ফসল আবাদের প্রায় সব প্রক্রিয়াতেই এখন নারী কৃষি শ্রমিকদের রয়েছে সরব উপস্থিতি। আলুর জমিতেও ক্ষেত পরিচর্যা থেকে শুরু করে বীজ বপন ও ফলন তোলার সময় নারী শ্রমিকদের দল বেঁধে কাজ করেন।

জানা যায়, পৃথিবীর ইতিহাসে খাদ্যশস্য আবাদের সূচনাই নারীদের হাত ধরে। কালক্রমে বিবর্তনের পথ ধরে সেই কৃষি পুরুষদের হাতে চলে যায়। তবে বিভিন্ন দেশে সবসময়ই কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন নারীরা। দেশেও কৃষি, বিশেষ করে খাদ্যশস্য আবাদে নারীদের অংশগ্রহণ ঐতিহ্যগতভাবেই দৃশ্যমান। তবে শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ধাপেই গত কয়েক দশকে নারী কৃষি শ্রমিকদের উপস্থিতি বেশি দৃশ্যমান ছিল। ধানের ক্ষেত্রে যেমন মাড়াই ও সংরক্ষণ ধাপে কাজ করতে দেখা যেত নারীদের।

নারী শ্রমিকদের কৃষিতে সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে জাতিসংঘের খ্যাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএওর এক প্রতিবেদনেও। সংস্থাটির গত বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের কৃষি শ্রমে নারীদের অংশগ্রহণের হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে কৃষি ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

বগুড়া জেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসমত জাহান এই প্রতিবেদককে বলেন, বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে ধান ক্ষেতেও এখন পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়বে। আর আলুসহ অন্য সবজি আবাদে ক্ষেত্রেও জমি তৈরি থেকে শুরু করে পরিচর্যা, বীজ বপন, অঙ্কুরোদ্গম, ফসল উত্তোলন ও সংরক্ষণের প্রতিটি ধাপে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

তবে সমাজে নারী-পুরুষ বৈষম্যের মতো কৃষি শ্রমিকদের মধ্যেও নারীদের কম মজুরি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন মোছা. শরিফ নামে এক নারী।

তিনি বলেন, ক্ষেতে সারা দিন কাজ করার জন্য একজন পুরুষ শ্রমিক যেখানে ন্যূনতম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন, সেখানে আমরা পাই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

বগুড়ার শাখারিয়া এলাকার তিলের পাড়া গ্রামের শিফা বেগম কৃষি জমিতে কাজ করেন।  তিন সন্তানের জননী শিফার স্বামী সেলুনে কাজ করেন। সন্তানদের শিক্ষা ও সংসারের ব্যয় সামলাতে এখন তিনি আলুর ক্ষেতে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ৩০০ টাকা দিন হাজিরায় জমিতে আলু তুলছি।

শিফা বেগমের সঙ্গেই মাঠে কাজ করছিলেন আরও তিন নারী। তাদেরও অভিযোগ, তারা দিনে ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করলেও পুরুষ শ্রমিকরা মজুরি বেশি পান। অথচ নারী ও পুরুষ কৃষি শ্রমিকরা ক্ষেতে সমান কাজই করে থাকেন। বৈষম্য থাকলেও উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য তারা কাজ বন্ধ করছেন না।

নারী শ্রমিক সাথী বেগমের স্বামী আব্দুস সামদ নির্মাণ শ্রমিক। সাথী বেগম বলেন, ‘আমাদের পাঁচজনের সংসার। স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই মাঠে কাজ করি।

এখন দুজনের আয়ে মোটামুটি সংসার চলে যায়।’ সবজির মৌসুম শেষ হলে বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

নারী শ্রমিকরা জানালেন, তাদের আশপাশের গ্রামগুলোতে দুই শতাধিক নারী শ্রমিক রয়েছেন, যারা সরাসরি ক্ষেতে কাজ করেন। আগের তুলনায় নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ছে।

কেবল বগুড়া নয়, উত্তরের অন্য জেলাগুলোতেও আলুর জমিতে নারী শ্রমিকদের কাজ চোখে পড়ার মতো। দিনাজপুরের বীরগঞ্জের আলু বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. পারভেজ রশীদও জানালেন সে কথা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের আওতায় যেসব জমিতে আলু আবাদ হয়, সেখানে অনেক নারী শ্রমিক কাজ করেন। জমিতে যত ধরনের কাজ রয়েছে, সব কাজই নারী শ্রমিকরা করে থাকেন। ধান কাটার মৌসুমে আলুর ক্ষেতের জন্য শ্রমিক সংকট তৈরি হতো। নারী শ্রমিকরা এগিয়ে আসায় সেই সংকট এখন কেটে যাচ্ছে। নারী শ্রমিকরা না থাকলে আমাদের আবাদ অব্যাহত রাখা কষ্ট হয়ে যেত।’ তবে পারভেজের দাবি, তারা মজুরিতে নারী-পুরুষ বৈষম্য করেন না।

কৃষিশ্রমে নারীদের সম্পৃক্ততা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহাকরী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, ‘বগুড়ায় মরিচের ক্ষেতে ৮০ শতাংশ, আলুতে ৬০ শতাংশ এবং মূলা, গাজর ও ঢেড়স আবাদে ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক সম্পৃক্ত রয়েছেন। জমিতে কায়িক শ্রমেও এখন পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন নারীরা। তারা নিজেরা উপার্জন করছেন, পরিবারের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’

সূত্র জানায়, আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা বগুড়া। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার অভ্যন্তরীণ আলুর চাহিদা আড়াই লাখ মেট্রিক টন। সেখানে এ বছর সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার জেলায় বৃষ্টিজনিত কারণে দেরিতে বপন হওয়ায় আগাম জাতের আলুও একটু দেরিতে উঠছে। তবে মূল আলু আবাদের ভর মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। এভাবে শুধু উত্তরের জেলাগুলোই নয়, কৃষিতে নারীর শ্রমে সাফল্য আসছে ফসলে। আরও চওড়া হচ্ছে কৃষকের মুখের হাসি।

 

(বাসস)
শেয়ার করুন

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop