গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে কেশবপুরের খামারিরা
প্রাণিসম্পদ
যশোরের কেশবপুরে উপজেলার খামার ও বিভিন্ন বাড়িতে ৮২ হাজার গৃহপালিত পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে পশুখাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকসহ খামার মালিকরা। গত বছর নদীর নাব্য হারিয়ে অধিকাংশ ঘেরে বোরো আবাদ না হওয়ায় বিচালির তীব্র সংকট দেখা দেয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, কেশবপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে ১৯২টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামার ও বিভিন্ন বাড়িতে ৮২ হাজার গৃহপালিত পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছর কেশবপুরে প্রায় ১৯ হাজার ৫৭৯টি গরু, ছাগল, ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। এ অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে এসব পশুর কিছু অংশ অন্যত্র বিক্রি করা হয়।
এছাড়া এখানে প্রতিদিন প্রায় ৬৫ হাজার লিটার গরুর দুধ উৎপাদন হয়। এ দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এসব পশু পালনে ও ভালো মানের দুধ উৎপাদনে বিচালিসহ প্রচুর দানাদার পশুখাদ্যের প্রয়োজন হয় বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ।
জানা গেছে, গত বছর সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও ধান সংগ্রহের শেষ মুহূর্তে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমির বিচালি পচে নষ্ট হয়। ফলে বিচালির তীব্র সংকট দেখা দেয় ও মূল্য বেড়ে যায়। বিচালির এ সংকটের সুযোগে যশোরের বারবাজার ও তার আশপাশের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভোরে কেশবপুর পাইলট স্কুলের পাশে বিক্রি করতে বিচালি নিয়ে আসেন।
বেতীখোলা গ্রামের কৃষক বিমল রায় জানান, গত বছর জলাবদ্ধতার কারণে তাদের বিলে কোনো ফসল উৎপাদন হয়নি। বিচালির উচ্চমূল্যের কারণে তার এলাকার শত শত কৃষক ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের বুড়িভদ্রা নদী থেকে শেওলা সংগ্রহ করে গরুকে খাওয়াতেন। কিন্তু এখন এ নদীতে পানি না থাকায় শেওলাও সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে করোনার প্রভাবে গরুর শুকনো খাবারের দামও বেড়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি খুদ ৪০, ভূষি ৩৫, ভূট্টার গুঁড়া ২৩, ক্যাটল ফিড ৩২ ও সরিষার খৈল ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঘন ঘন লকডাউনের কারণে গরুর দামও কমে গেছে। এতে কৃষকরা গরু বিক্রি করতে পারছেন না। আবার দাম বাড়ায় গরুর খাবারও কিনতে পারছেন না। ফলে তারা পড়েছেন বিপাকে। দোরমুটিয়া মোড়ের খামার মালিক ব্যবসায়ী বিষ্ণুপদ দাস জানান, তার খামারে ২২টি গরু রয়েছে। প্রতি কাউন বিচালি ৬ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিচালির সংকটের কারণে গরুকে দানাদার খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এতে গরুর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে খামার মালিকরা এ ব্যবসা থেকে সরে যাবেন বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অলকেশ সরকার জানান, এ উপজেলায় প্রতিদিন খড়ের (বিচালি) চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার কেজি। প্রতি মৌসুমে যে ধান উৎপাদন হয় তাতে চাহিদা মিটে যায়। ধান ওঠার আগে কিছু বিচালির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এখন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান উঠে গেলে বিচালির উচ্চ দাম ও সংকট কেটে যাবে বলে তিনি জানান।