তীব্র দাবদাহ. বাগেরহাটে মারা যাচ্ছে ঘেরের মাছ!
মৎস্য
সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। আর এই তীব্র দাবদাহে শুকিয়ে গেছে বাগেরহাটে অনেক ঘেরের পানি। আর যেগুলোতে সামান্য পানি আছে তাতে টিকে থাকতে পারছেনা মাছ। মরে ভেসে উঠছে সেখানকার চিংড়ি। সেখানে গলদা পোনা সংকটও মারত্মক আকার ধারণ করেছে।
মৎস্য বিভাগ জানায়, দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয় বাগেরহাট জেলায়। বর্তমানে সরকারি হিসেবে বাগেরহাট জেলায় ৬৬ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে ৭৮ হাজার ৬৮৫টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে।
এসব ঘেরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন বাগদা ও ১৮ হাজার ৮৪২ মেট্রিক টন গলদা উৎপাদন হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এর পরিমাণ আরও বেশি। এই উৎপাদনের ধারা বজায় রাখতে ২ কোটি গলদা চিংড়ির রেনুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সংকটের কারনে অতিরিক্ত দাম দিয়েও চাষিরা চাহিদা অনুযায়ী পোনা পাচ্ছেন না।
বাগেরহাট সদর, মোংলা, রামপাল, কচুয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার চিংড়ি চাষিরা জানায়, এবার বৃষ্টির দেখা নেই। ঘেরের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ইচ্ছে থাকলেও পোনা ছাড়তে পারছেন না তারা।
আরো পড়ুন: পোরশায় পুকুরে গ্যাসবড়ি দিয়ে দুর্বৃত্তের মাছ নিধন
অন্যদিকে পুকুর বা ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে মৌসুমের শুরুতে পোনা ছাড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন অনেক চাষি। কারণ লকডাউনের ফলে জেলার বাইরে থেকে সহজে পোনা আসতে পারছে না। আবার নদী থেকে আহরিত পোনা চাষিদের হাতে পৌঁছানোর আগে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আবারও নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হাটে ঘুরেও পোনার ব্যবস্থা করতে পারছেন না চাষিরা।
বাগেরহাটের সব থেকে বড় গলদা চিংড়ি পোনার হাট ফকিরহাটের ফলতিতা। ভোর বেলা ফলতিতা হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা আসছেন পোনা কিনতে। কিন্তু বিক্রির জন্য পোনা এসেছে চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলতিতা বাজারে প্রায় ৫০টির মত গলদা চিংড়ি পোনার আড়ত রয়েছে। যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি পোনা বিক্রি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, অতিরিক্ত খরার কারনে অধিকাংশ ঘের ও পুকুরের মাছ মরে যাচ্ছে। ঘের-পুকুর শুকিয়ে গেছে।
এদিকে আবার পোনাও পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের সব থেকে বেশি গলদা চিংড়ি উৎপাদিত হয় বাগেরহাটে। এখানে ১৭টি বাণিজ্যিক হ্যাচারি ছিল, সেই হ্যাচারিগুলো এখন বন্ধ।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল জানান, তীব্র দাবদাহ ও পোনা সংকটে চিংড়ি চাষে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। চিংড়ি চাষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সুষ্ঠু-সবল পোনা। কিন্তু এ জেলার বাণিজ্যিক হ্যাচারিগুলো নানা কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি কারিগরি পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে কিছু হ্যাচারিকে আবারও সচল করতে। এছাড়া পোনা সংকট সমাধানে সরকারি মৎস্য খামারে কিছু গলদার পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। নদী থেকে আহরিত পোনা যাতে চাষিদের হাতে পৌঁছাতে পারে সে জন্য বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করছি। বৃষ্টি হলে এবং ‘কঠোর লকডাউন’ শিথিল হলে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আশাবাদী তিনি।
One thought on “তীব্র দাবদাহ. বাগেরহাটে মারা যাচ্ছে ঘেরের মাছ!”