দিনাজপুরে আলুর বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের
কৃষি বিভাগ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ ৭ উপজেলায় হয়েছে এবার আলুর বাম্পার ফলন। তবে সংরক্ষণের জন্য মাত্র একটি হিমাগার থাকায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন সেখানকার আলু চাষিরা।
জানা যায়, দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চলের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর উপজেলার ১০ হাজারেরও বেশি আলু চাষি প্রতিবছর তাদের উৎপাদিত আলু এবং আলুর বীজ, সংরক্ষণের জন্য নির্ভর করে হিমাগার ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের উপর। এই হিমাগারে নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু ও আলু বীজ সংরক্ষণ করতে পারলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন চাষিরা। সংরক্ষণ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে চাষিরা কম দামে আলু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে তাদের লোকশান গুণতে হচ্ছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা গোপালপুর গ্রামের আলু চাষি সুবাস চন্দ্র ও লালপুর পাঠকপাড়া গ্রামের প্রদীপ কুমার জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না আসায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে বাজারে আলুর একটু আশানুরূপ দাম পাওয়া গেলে এখন দাম পড়ে গেছে। তবে আলু এবং আলু বীজ হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারলে আগামীতে ভালো দাম পাওয়া যেতো। কিন্তু হিমাগারে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা তাদের আলু বিক্রি করে দিয়েছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ৭ উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষিরা চাষ করেছেন ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার অধিক। উপজেলা ভিত্তিক আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ফুলবাড়ীতে ১ হাজার ৮২০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। চিরিরবন্দরে ২ হাজার ৭৯০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। বিরামপুরে ১ হাজার ৮৬৯ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। নবাবগঞ্জে ১ হাজার ৪৪৯ হেক্টর কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। হাকিমপুরে ৮৯০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ৯০৫ হেক্টর জমিতে। ঘোড়াঘাটে ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। পার্বতীপুরে ৩ হাজার ৯৭৬ হেক্টর, কিন্তু চাষ হয়েছে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। উল্লেখিত ৭ উপজেলার মধ্যে ১টি মাত্র হিমাগার আলু সংরক্ষণের জন্য রয়েছে। যা আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা ৬০ কেজি ওজনের ১ লাখ ৫৬ হাজার বস্তা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন। আলু বীজের দাম বেশি থাকায় আলুর উৎপাদন খরচও বেড়েছে। গত বছর আলুতে আশানুরূপ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ বছর বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন।
ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক জানান, হিমাগারে ১ লাখ ৫৬ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতার পুরোটাই ভরে গেছে। হিমাগারে প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও চাষিরা আলু নিয়ে এসে ভিড় করছেন। কিন্তু হিমাগারে তো আর জায়গা নেই, নিরুপায় হয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। তবে এ বছর ব্যবসায়ীদের চেয়ে কৃষকদের আলু বেশি সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।