গো খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর খাবার কমাতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা
প্রাণিসম্পদ
‘যেভাবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে আর গরু পালন করা সম্ভব হবে না হয়ত। খামারের গরুগুলোকে এক মাস আগে যে খাবার দিয়েছি এখন তার অর্ধেক পরিমাণে দিচ্ছি। এতে গরু কাহিল হলেও আমার আর কিছুই করার নেই।’ কথাগুলো আক্ষেপ করে বলছিলেন পাবনার ফরিদুপর উপজেলার রতনপুর গ্রামের খামারি হযরত আলী।
তিনি বলেন, ১৫ দিন আগে ৩৫ কেজি ওজনের গমের ছালের দাম ছিল এক হাজার ১১শ’ টাকা সে ছালের দাম হয়েছে ১৯শ’ টাকা।
গো-খাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলায় তার মতো উদ্বিগ্ন বহু খামারি বা ছোট কৃষক পরিবার। গরু-মহিষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে পানিতে ভাসমান কচুরিপানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন অনেকেই। তারা আসন্ন বাজেটে গো-খাদ্যের দাম কম রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
চাষিরা জানান, ছয়মাস আগে একবস্তা ভালোমানের গমের ছাল বিক্রি হয়েছে ১২০০-১২৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৯৫০-১০০০ টাকা। একইভাবে ছয় মাস আগে মাসকলাইয়ের ভুসির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৪৫০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ১১০০-১২০০ টাকা। এক বছর আগে এক বস্তা খৈল বিক্রি হয়েছে ২৫০০-২৬০০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৩৩শ’-৩৪শ’ টাকা। ছয়মাস আগে ডালের ভুসির বস্তা (৩৫ কেজি) ছিল ১২শ’ টাকা, অ্যাংকর ডালের ভুসি ৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এরপরও ধীরে ধীরে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছিল। কিন্তু গত ১৫ দিনে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
খামারি হযরত আলী জানান, খামারের পাশাপাশি গো-খাদ্যের ব্যবসা করি। মিল মালিকদের কাছ থেকে যে দরে খাবার কিনে আনি সে দর চাইতেই ভয় বা লজ্জা লাগে।
তিনি জানান, ছোট চাষিরা গো-খাদ্য কিনতেই পারছেন না। অনেক গো-খাদ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মতো অনেকেই গরুকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কচুরিপানা অথবা খুদের (ভাঙা চাল) ভাত খাওয়াচ্ছেন।
হযরত আলী জানান, ধানের খড়ের দামও বেশি। ছয়শ টাকা মণ দরে খড় কিনতে হচ্ছে। খড়ের মণ হয় ৩০ কেজিতে। প্রতি শতাংশ জমির জাম্বু ঘাস কিনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে, প্রতি শতাংশ জমির নেপিয়ার ঘাস ৪০০শ’ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। গো-খাদ্যের দাম কমানো না হলে কিংবা খামারিদের ভর্তুকি মূল্যে গো-খাদ্য না দিলে খামার রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে বলে জানান।
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের (মিল্কভিটা) সাবেক সভাপতি হাসিব খাঁন তরুণ জানান, বৃহত্তর পাবনা জেলায় সমিতিভুক্ত মোট সদস্যের সংখ্যা ৫০ হাজার। তারা গাভী পালন করেন। গো খাদ্যের দাম বাড়ায় তারাসহ অন্য খামারি ও চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অনেক খামারি বলছেন, এখন একটু নিচুমানের বা মোটা চালের চেয়ে ভুসি ও খৈলের দাম বেশি। তাই খরচ বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে গরুকে ভাত খাওয়াতে হচ্ছে। এরকম গো-খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিতে হবে।
গো-খাদ্যের সংকটের কারণে স্থানীয় খড় ব্যবসায়ীরা বোরো ধানের খড় রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ দেশের উঁচু এলাকার জেলাগুলো থেকে কিনে সড়ক ও নৌ পথে এনে খড়ের আড়তদার, কৃষক ও খামারিদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রতি মণ বোরো ধানের খড় প্রায় ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে ভাটি এলাকার মহাজনরা এই এলাকা থেকে উচ্চ দামে গো-খাদ্য কিনে ভাটি এলাকায় নিয়ে গিয়ে আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামার ও গবাদি পশুর মালিকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাবনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল- মামুন হোসেন জানান, পাবনায় কাচা ঘাসের প্রাচুর্য রয়েছে। এজন্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে না। চাষিদের দানাদার খাদ্যের চেয়ে এখন কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।