পদ্মায় পানি বাড়াতে বিপাকে কৃষক
কৃষি বিভাগ
পদ্মা নদীর পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে কৃষক। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের পাকা আউশ ধানসহ বহু কৃষি ফসল ডুবে গেছে। ধান ও ফসল নষ্ট হয়ে মাথায় হাত তাদের। ট্রলার ভাড়া ও শ্রমিকের চড়া মজুরি জোগার করতে না পেরে অনেক কৃষকই উত্তাল পদ্মার ওপার গিয়ে ডুবে যাওয়া ফসল সংগ্রহ করতে পারছেন না।
কৃষকরা জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চর বিশ্বনাথপুর, বেথুরী, ধোপাগাথী, উত্তর দৌলতদিয়া, রাখালগাছি, বনভাবৈল, কুশাহাটা, বেতকাসহ বিভিন্ন চরে শত শত বিঘা জমিতে কৃষকরা অনেক আশা নিয়ে বিভিন্ন আবাদ করেন। এসব কৃষক সবাই নদী ভাঙনের শিকার হয়ে এমনিতেই সর্বস্বান্ত।
দৌলতদিয়া নতুনপাড়া এলাকার কৃষক জিয়া মোল্লা (৫৫) জানান, তিনি পদ্মার ওপারে উত্তর ধোপাগাথী চরে ৩ বিঘা বাদাম, ১৫ বিঘা আউশ ধান এবং ২০ বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করেছিলেন। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর বেশিরভাগ টাকা সুদে নেয়া।
তিনি বলেন, বাদাম এবং কিছু তিল তোলা সম্ভব হয়েছে। আউশ ধানও পেকে গেছে। এর মধ্যেই হঠাৎ পানি বেড়ে গিয়ে ক্ষেতে কোমর সমান পানি হয়ে গেছে। কামলা নিয়ে গিয়ে যতটা সম্ভব কাটার চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতে মনে হয় শ্রমিকের বেতন ও ট্রলার ভাড়ার টাকাই উঠবে না।
মৃত মজিদ শেখেরপাড়ার বিধবা সাজেদা বেগম (৪৫) বলেন, আমার নিজের কোনো জমি নাই। বার্ষিক লিজ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে বাদাম ও আউশ ধানের আবাদ করেছিলাম। ৫ মণ বাদাম তুলতে পেরেছিলাম। কিন্তু ধানগুলো ডুবে গেছে। আমার দুই ছেলে চরে গিয়ে পানির মধ্য হতে যতটা সম্ভব কেটে আনছে।এতে তাদের অনেক লোকসান হবে।
ফকিরপাড়ার তালেব মণ্ডল (৬০) বলেন, চরে তার নিজের জমি নাই। বিঘাপ্রতি ২ হাজার টাকা করে বাৎসরিক লিজ নিয়ে ৬০ বিঘা জমিতে তিনি তিল ও আউশধানের চাষ করেছিলেন। ফসলও মোটামুটি ভালো হয়েছিল। আশা ছিল ধার-দেনা শোধ করেও সারা বছর ঘরের ধানের ভাত খাব। কিন্তু সেটা আর হলো না।
বরকত সরদারপাড়ার সম্ভ্রান্ত কৃষক শওকত মোল্লা জানান, বহু বছর পর চরে তাদের অনেক জমি জেগে উঠেছে। অনেক আশা করে ধান-দেনা নিয়ে এবার ৪৮ বিঘা আউশ ধান, ১২ বিঘা বাদাম ও ২৪ বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করেছিলেন। সঙ্গে ১০ বিঘা জমিতে বাঙি ও ঝিঙের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু এবার প্রচণ্ড খরা ও হঠাৎ পানি বেড়ে ফসল ডুবে যাওয়ায় তার অনেক লোকসান হবে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অভিযোগ করেন, চরে কোনো সময় কোনো ফসল করলে বা কীভাবে চাষাবাদ করলে তারা লাভবান হবেন সে বিষয়ে তারা কৃষি বিভাগের কোনো সহায়তাই পায় না।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে ৩ জন করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার জায়গায় আছেন মাত্র ১ জন করে। অফিসেও লোকবলের সংকট রয়েছে। ফলে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। চরের ডুবে যাওয়া ফসলের বিষয়ে তারা এখনো কোনো খোঁজখবর নিতে পারেননি। তবে দ্রুতই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রণোদনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।সূত্র: যুগান্তর