বিপন্ন হাঙর ও রে মাছ হচ্ছে সুরক্ষা আইনের আওতাভুক্ত
মৎস্য
সামুদ্রিক প্রতিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হাঙর ও রে মাছের অবদান অনস্বীকার্য। এদের বংশবিস্তার ও বেড়ে ওঠা ধীরগতিসম্পন্ন। ফলে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এদের টিকে থাকার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এজন্য হাঙর ও রে মাছকে সংরক্ষণ করতে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। হাঙর ও রে মাছসহ বিশ্বব্যাপী বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর বৈচিত্র্যময় আবাসস্থলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
জানা গেছে, হাঙর ও রে মাছের পাখনা, ফুলকা প্লেট ও চামড়ার উচ্চমূল্যের কারণে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার দরুন অবৈধভাবে শিকার ও রফতানির ফলে বিপন্ন প্রজাতিগুলো ভবিষ্যতে প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এ অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি ও প্রজাতিগোষ্ঠীর তালিকা হালনাগাদ করার মাধ্যমে বিপন্ন হাঙর ও রে মাছের অধিকতর সুরক্ষা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মৎস্য অধিদপ্তরসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এবং ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডব্লিউসিএস) কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রস্তুতকৃত এ হালনাগাদ তালিকায় বাংলাদেশে প্রাপ্ত হাঙর ও রে মাছ সম্পর্কিত নতুন তথ্য সংযোজন করা হয়েছে।
এ হালনাগাদ তালিকা বিপন্ন সামুদ্রিক বন্যপ্রাণী এবং এদের গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক ও সাংবিধানিক অঙ্গীকারের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ হালনাগাদকৃত তালিকা হাঙর ও রে মাছের আটটি গণ ও ২৩টি প্রজাতিকে যথাযথ সুরক্ষা প্রদান এবং বন অধিদপ্তরের অনুমতিক্রমে একটি গণ ও ২৯টি প্রজাতির হাঙর ও রে মাছের টেকসই আহরণ, ব্যবহার ও বৈধভাবে বাণিজ্য করার অধিকার প্রদান করবে। যদি এদের আহরণ সামুদ্রিক পরিবেশে প্রজাতিগুলোর টিকে থাকার জন্য হুমকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত না হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ১৯৮১ সালে কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেনজারড স্পেশিস অব ওয়াইল্ড ফুনা অ্যান্ড ফ্লোরা (সিআইটিইএস) এবং ২০০৫ সালে কনভেনশন অন দ্য কনভারসেশন অব মাইগ্রেটরি স্পেশিস অব ওয়াইল্ড অ্যানিমেলসে (সিএমএস) স্বাক্ষরকারী দেশ। হাঙর ও রে মাছসহ বিপন্ন বন্যপ্রাণীর বৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ বাণিজ্য প্রতিরোধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে প্রাপ্ত হাঙর ও রে মাছের বিলুপ্তির ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রে আইনের এ সংশোধনী প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
আইনের এ সংশোধনীর কার্যকরী প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আইনে সংরক্ষিত প্রজাতিগুলোর জীবিত অবমুক্তকরণ পদ্ধতি এবং টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনার প্রতিবেশগত উপকারী দিকগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে। যদি মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা বুঝতে পারেন যে, বিপন্ন হাঙর ও রে মাছ রক্ষার মাধ্যমে তারা তাদের জীবন-জীবিকা ও খাদ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করছে, তাহলে বাংলাদেশে হাঙর ও রে মাছের অত্যধিক আহরণকে ভবিষ্যতে টেকসই সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এজন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে নিবেদিতভাবে কাজ করে চলেছে।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে প্রাপ্ত বা পাওয়া যেতে পারে এমন ১১৬ প্রজাতির হাঙর ও রে মাছের অর্ধেকেরও বেশি প্রজাতি বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। এ সংশোধিত তালিকাটি বন অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশ্বব্যাপী মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন। কিছু সামুদ্রিক বন্যপ্রাণীকে সুরক্ষা প্রদান করতে যেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, তেমনি বিপন্ন নয় এমন প্রজাতিগুলোর টেকসই আহরণের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের লাভবান করবে।