হালদার ডলফিন ও কার্প জাতীয় মাছের উন্মোচন হচ্ছে জীবনরহস্য
বিজ্ঞান ও গবেষণা
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বিপন্ন তালিকায় থাকা ডলফিনকে বাঁচাতে উদ্ঘাটন করা হচ্ছে তার জীবনরহস্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দু’বছর ধরে কাজ করছে ডলফিন নিয়ে। একই সঙ্গে জীবনরহস্য উন্মোচন করছেন তারা হালদার কার্প জাতীয় চার মাছ- রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের।
হালদায় কার্প জাতীয় মাছ ও বিলুপ্ত প্রজাতির ডলফিনের জীবন সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রজনন এবং বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে কোন কোন জিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তা বিস্তারিত জানা যাবে জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে। এরই মধ্যে জিন শনাক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এনসিবিআইর ডাটা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন গবেষকরা। সেখান থেকে মিলেছে অনুমোদন। আর এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের অধিকারও। আগামী মাসে গবেষণার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন গবেষকরা। উল্লেখ্য, হালদার ডলফিন ও কার্প জাতীয় চার মাছের জীবনরহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের এ প্রচেষ্টা বিশ্বে প্রথম।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএমএএম জোনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, পৃথিবীতে আমরাই প্রথম বিপন্ন প্রজাতির ডলফিনের জীবনরহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে ডলফিনের জিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এনসিবিআইর ডাটা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর অনুমোদন পাওয়া গেছে। আমরা এখন এ জিনগুলো গ্রুপ করছি।
জিনগুলো ডলফিন ও কার্প জাতীয় চার মাছের জীবনে কোন পর্যায়ে কী ভূমিকা পালন করে তা জানানোর চেষ্টা করছি আমরা। গবেষণার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগির এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করব আমরা। তিনি জানান, জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে হালদার বিলুপ্ত প্রজাতির ডলফিন এবং কার্প জাতীয় মাছের মালিকানা এখন বাংলাদেশের বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গবেষণা দলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য আমরা চীনে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে টোটাল ডিএনএ আসে।
এরপর সেগুলো আমরা এনসিবিআইতে জমা দেই। তারা এটা যাছাই-বাছাই করে প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ওনারশিপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি জানান, গবেষক দলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া ভেটেরিনারি ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
জীবনরহস্য উন্মোচিত হলে জানা যাবে কেন হালদার মাছ অন্যস্থানের চেয়ে আলাদা। এ নদীর ডলফিন ও মাছের মধ্যে স্বতন্ত্র কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের বংশবিস্তারে কোন জিন কীভাবে ভূমিকা রাখে জানা যাবে সেটিও। সংগৃহীত এসব তথ্য পরে আরও ব্যাপক আকারে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
গবেষণার জন্য যে ডলফিন ও মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে তা বিভিন্ন সময় হালদা নদী থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে মৃত অবস্থায় পাওয়া ৭০-৮০ কেজি ওজনের ডলফিন থেকে নমুনা নিয়েছেন গবেষকরা। আর নমুনা নেওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ মাছের ওজন ১৬ থেকে ১৭ কেজি।