খুবিতে টেকসই কাঁকড়া চাষ এর উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত
কৃষি গবেষনা
১২:৪৫ পূর্বাহ্ন
সঠিক সময়ে বীজ পাচ্ছেন না কৃষক। ত্রুটি রয়ে গিয়েছে সনাতনী উৎপাদন ব্যবস্থাপনায়ও। প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাতের পাশাপাশি দুর্বলতা রয়ে গিয়েছে জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের দিক থেকেও। ফলে উৎপাদন পর্যায়েই প্রচুর পরিমাণ নষ্ট হচ্ছে প্রধান খাদ্যশস্য ধান। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্যেও দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর উৎপাদন পর্যায়ে যে পরিমাণ ধান নষ্ট হচ্ছে, তা প্রতিরোধ করা গেলে চালের আমদানিনির্ভরতাও কাটিয়ে ওঠা যেত খুব সহজেই।
কৃষিবিদরা বলছেন, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান অনেক সুদৃঢ়। কিন্তু নানা কারণে শুধু উৎপাদন পর্যায়েই নষ্ট হচ্ছে ধানের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬৭ লাখ টন চাল নষ্ট হচ্ছে। এ ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা গেলে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন বাড়তি চাল পাওয়া সম্ভব ছিল। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে এখন পর্যন্ত বছরে সর্বোচ্চ চাল আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৯ লাখ টন। সে হিসেবে নষ্ট হওয়ার মাত্রাকে সহনীয় করে আনা গেলে চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারত বাংলাদেশ।
ব্রির ‘ডাবলিং রাইস প্রডাক্টিভিটি ইন বাংলাদেশ: আ ওয়ে টু অ্যাচিভিং এসডিজি২ অ্যান্ড মুভিং ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে শুধু উৎপাদন পর্যায়েই ধানের গড় ফলন নষ্ট হয়েছে ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে নষ্ট হয়েছে ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে ধান নষ্ট হওয়ার তুলনামূলক চিত্র ধরে এতে জানানো হয়, মূলত ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণেই ধান নষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর নষ্ট হওয়া ধানের ৪৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে শুধু ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকার কারণে। মোট নষ্ট হওয়া ধানে পরিবেশগত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণের অবদান ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া কৃষকের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে ২০ দশমিক ২৯ ও জাতের দুর্বলতার কারণে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ ধান নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্রি মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে ধানের ফলন নষ্টের পেছনে প্রধান কারণ ব্যবস্থাপনা ত্রুটি। সেটি কমিয়ে আনতে জাত উদ্ভাবন পর্যায় থেকে শুরু করে কৃষক পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও দক্ষতার সম্প্রসারণ করতে হবে। বিশ্বের ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন ও জাপানে ফলন পার্থক্য মাত্র ৫ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।
ফলে আমাদের দেশে যদি এ ফলন নষ্টের পরিমাণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা কমপক্ষে ৫০ লাখ টন বাড়তি চাল পেতাম। ধানের ফলন পার্থক্য কমিয়ে আনতে ব্রি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর আওতায় ২০৫০ সালের মধ্যে ফলন নষ্টের হার সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে আনা হবে। সেটি করা সম্ভব হলে ও ধারাবাহিক উৎপাদন বৃদ্ধিকে হিসাবে নিয়ে বলা যায়, ওই সময় ৮০ লাখ টন বাড়তি চাল পাওয়া যাবে। ব্যবস্থাপনা উন্নতির মাধ্যমে বাড়তি চাল পাওয়া গেলে যেমন অন্যান্য শস্য আবাদের জন্য জমি ছেড়ে দেয়া সম্ভব হবে, তেমনি দেশের খাদ্যস্বয়ম্ভরতাও টেকসই হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে দেশে মোট ১৭ কোটি ৭৮ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ কোটি ৪৭ লাখ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৮ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৩ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এ হিসাবে দেশে গত পাঁচ বছরে চাল উৎপাদনের বার্ষিক গড় পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৫৬ লাখ টন। গড়ে প্রতি বছর ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ হারে চাল নষ্ট হওয়ার তথ্যকে বিবেচনায় নিয়ে দেখা যাচ্ছে, বার্ষিক গড়ে প্রায় ৬৭ লাখ টন চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।
আবার ফলন-পরবর্তী পর্যায়ে চাল নষ্ট হওয়ার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে বিবিএসের ‘রিপোর্ট অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল স্ট্যাটিস্টিকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। এতে দেখা যাচ্ছে, ধান কেটে চাল বের করে আনার আগ পর্যন্ত ছয়টি ধাপে নষ্ট হচ্ছে উৎপাদিত চালের ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে ধান কাটার সময় ১-৩ শতাংশ, হ্যান্ডলিংয়ের সময়ে ২-৭, থ্রেশিং বা মাড়াইয়ে ২-৬, শুকানোয় ১-৫, গুদামজাতে ২-৬ ও পরিবহনে ২-১০ শতাংশ চাল অপচয় হচ্ছে।
এর মধ্যে কাটার সময় ধান নষ্ট হওয়ার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে আর্দ্রতা অনুধাবনে কৃষকের সনাতন পদ্ধতি অনুসরণকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কৃষকরা এখন ধান কাটার আগে ময়েশ্চার মিটার মেশিন দিয়ে পরিবেশের আর্দ্রতা পরিমাপ করে নিচ্ছেন। কিন্তু দেশের কৃষকরা এখনো ধান কাটার আগে দাঁতে কামড় দিয়ে বা দৃশ্যমান অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেন। অবৈজ্ঞানিক এ পদ্ধতি অনুসরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মোট ফলনে। সঠিক আর্দ্রতায় ধান কেটে তা মাড়াই ও ভাঙানো হলে প্রতি মণ ধান থেকে ২৮-৩০ কেজি চাল পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক আর্দ্রতায় ধান কাটা হয় না। ফলে প্রতি মণ ধান থেকে ২৫-২৭ কেজির বেশি চাল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. ফা হ আনসারী বণিক বার্তাকে বলেন, ধান উৎপাদন ও কাটা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে নষ্টের কারণে দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবস্থাপনাগত পদ্ধতির উন্নয়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে দেশের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ও যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে তরুণ কর্মসংস্থানকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। ক্ষতি কমিয়ে আনতে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব, বিশেষ করে কৃষিতে সরকারকে আরো আর্থিক ও নীতিসহায়তা প্রয়োজন।
তবে দেশে ধানের ফলন পার্থক্য ও নষ্টের পরিমাণ গত কয়েক দশকে কমে এসেছে। ব্রির পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭১-৭৫ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ধানের ফলন ক্ষতির হার ছিল প্রায় ৩৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। পরের পাঁচ বছরে তা ছিল ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এছাড়া ১৯৮১-৮৫ সাল পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে ৩১ দশমিক ৮৮ শতাংশ, পরের পাঁচ বছরে ২৯ দশমিক ৯৮ ও ১৯৯১-৯৫ সাল পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এছাড়া ১৯৯৬-২০০০ সালের মধ্যে ২৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০০১-০৫ পর্যন্ত ২৪ দশমিক ২৯ ও ২০০৬-১০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ হারে ধান নষ্ট হয়েছে। সূত্র: বণিক বার্তা
শাকসবজি ও ফসলে বহু রকমের পোকামাকড় আক্রমণ করে। আবার এক এক সবজিতে এক এক পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যেমন বেগুনের ডগা ও ফলছিদ্রকারী পোকা শুধু বেগুনই আক্রমণ করে। আবার একই পোকা একই সাথে অনেক সবজিতে আক্রমণ করে। যেমন জাব পোকা, জ্যাসিড, মাকড়, লেদা পোকা ইত্যাদি। তাই শাক সবজির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে কৌশলী না হলে সেসব শত্রু পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না।
সাধারণত এ দেশের সবজি চাষিরা শাক সবজির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে বিষাক্ত কীটনাশকের উপর বেশি নির্ভর করেন। এখনো এ দেশে বিভিন্ন ফসলের মধ্যে সবজিতে সবথেকে বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। সবচেয়ে বেশি কীটনাশক দেয়া হয় বেগুন, শিম, বরবটি ইত্যাদি ফসলে। তাতে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ হয় বটে, কিন্তু তার ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ ও মানুষের উপর। যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পোকামাকড়ও সেসব কীটনাশকের প্রতি ধীরে ধীরে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে অন্যদিকে তেমনই চাষি ও সবজি ভোক্তারা কীটনাশকের বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে নানারকম অসুখ-বিসুখে ভোগে। এ অবস্থা কাম্য নয়। তাই বিষের হাত থেকে ফসল, পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে বসতবাড়িতে এখন প্রাকৃতিক উপায়ে শাক সব্জির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়া উচিত।
প্রকৃতিতেই এসব শত্রু পোকাদের শায়েস্তা করার নিদান লুকিয়ে আছে। আছে বিভিন্ন বন্ধু পোকা ও মাকড়সা, উপকারী রোগজীবাণু। ক্ষেতে কোনও বিষ না দিলে এরা বেঁচে থাকে এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই শত্রু পোকাদের মেরে ফেলে। এছাড়া আছে বিভিন্ন কীটবিনাশী গাছপালা। এসব গাছপালা থেকে উদ্ভিদজাত কীটনাশক তৈরি করে আক্রান্ত ক্ষেতে প্রয়োগ করলে তাতে শত্রু পোকা নিয়ন্ত্রণ হয় অথচ সেসব প্রাকৃতিক কীটনাশক বন্ধু পোকাদের কোনও ক্ষতি করে না। বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার ফলাফলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিচে শাক সবজির ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পোকামাকড়ের প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি বর্ণনা করা হল। আশা করি ক্ষেত জরিপ করে পোকামাকড়ের অবস্থা বুঝে এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিনা বিষে সবজির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সবজির জাব পোকা
জাব পোকা সবজি ফসলের একটি মহা শত্রু পোকা । শিম, বরবটি, মটরশুটি, মরিচ, টমেটো, ঢেঁড়শ, বেগুন, কুমড়া, কপিসহ প্রায় সব সবজিতেই এ পোকা আক্রমণ করে থাকে । এমনকি লেবু ও পেয়ারা গাছেরও জাব পোকা ক্ষতি করে । জাব পোকারা দলবদ্ধভাবে সাধারণতঃ পাতার নিচের পিঠে থাকে । পোকাগুলো দেখতে খুব ছোট ছোট, রঙ সবুজ থেকে কালচে সবুজ । জাব পোকা যেখানে থাকে সেখানে পিঁপড়াও ঘুরে বেড়ায় । তবে শুধু পাতা নয়, এরা কচি ফল ও ফুলেও আক্রমণ করে। সেখান থেকে রস চুষে খায় । ফলে পাতা, ফুল, ফল বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি থেমে যায় । পূর্ণাঙ্গ ও বাচ্চা দু অবস্থাতেই এরা ক্ষতি করে । এ ছাড়া জাব পোকা সবজির ভাইরাস রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে । বিনা বিষে এ পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি নেয়া যেতে পারে-
শুকনো গোবর গুঁড়ো করে সবজি গাছের জাব পোকা আক্রান্ত অংশে ছিটিয়ে দিতে হবে। একইভাবে কাঠের ছাই ছিটিয়েও উপকার পাওয়া যায় ।
একটি মাটির পাত্রে গো মূত্র রেখে ১৪ থেকে ১৫ দিন পচাতে হবে । পরে তার সাথে ১০ গুণ বেশি পানি মিশিয়ে ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে ।
সমপরিমাণ রসুন ও কাঁচা মরিচ বেটে তা ২০০ গুণ পানির সাথে মিশিয়ে জাব পোকা আক্রান্ত ক্ষেতে ছিটালে ভাল উপকার পাওয়া যায় ।
সেচ দেয়ার সময় সেচের পানির সাথে সেচ নালায় সামান্য পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায় ।
আতা, শরিফা, রসুন, নিম, তামাক ইত্যাদি গাছ গাছড়া থেকে বালাইনাশক তৈরি করে জাব পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা যায় ।এসব গাছের কাঁচা পাতা বেটে রস করে পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করা যায় । শুকনো তামাকপাতা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি ছেঁকে তার সাথে দশগুণ পানি মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করা যায় । ১০০ থেকে ২৫০ গ্রাম রসুনের কোয়া বেটে রস করে তা ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করা যায়।
হলদে রঙের আঠা ফাঁদ পেতেও পাখাযুক্ত জাব পোকাদের আকৃষ্ট করা যায়। একটা ছোট স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বয়মের ভেতরে হলুদ রঙ করে সেটা একটি কাঠির মাথায় উপর করে আক্রান্ত ক্ষেতে টাঙ্গিয়ে দেয়া যায়। এর ভেতরে গ্রীজ বা আঠালো পদার্থ লেপে দিলে পাখাওয়ালা জাব পোকারা হলুদ রঙে আকৃষ্ট হয়ে বয়ামের ভেতরে ঢুকে আঠায় আটকে মারা পড়বে । এতে ক্ষেতে জাব পোকার সংখ্যা ও বিস্তার কমে যাবে ।
সবজির জ্যাসিড পোকা
জ্যাসিড পোকা দেখতে খুব ছোট এবং হালকা সবুজ রঙের। পূর্ণাঙ্গ পোকা প্রায় ২.৫ মিলি মিটার লম্বা। পোকা সাধারণত পাতার নিচে লুকিয়ে থাকে গাছ ধরে ঝাঁকালে জ্যাসিড চারদিকে লাফিয়ে উড়ে যায়। এরা বেশ স্পর্শকাতর। ছোঁয়া লাগলেই দ্রুত অন্যত্র সরে যায়। জ্যাসিড বাংলাদেশে ঢেঁড়স ও বেগুন এর একটি অন্যতম প্রধান ক্ষতিকর পোকা। এ ছাড়া জ্যাসিড আলু, মরিচ, কুমড়াজাতীয় সবজি, টমেটো, তুলা, বরবটি ইত্যাদি ফসলেরও ক্ষতি করে থাকে। এ দেশে প্রায় ১০ প্রকার ফসলে জ্যাসিড ক্ষতি করে। শুষ্ক আবহাওয়ায়, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ক্ষেতে জ্যাসিডের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেতে এ সময়ে জ্যাসিডের ব্যাপক আক্রমণে প্রায় সব বেগুন গাছই নষ্ট হয়ে যায়। বছরের অন্য সময় এদের দেখা গেলেও মূলত বসন্তকালে এদের আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করে। পর্যায়ক্রমে এসব গাছে উপর্যুপরি বংশবিস্তার করে, ফলে সারা বছরই এদের দেখা যায়। প্রবল বর্ষায় এদের আক্রমণ কমে যায়। একটি প্রজাতির জ্যাসিড বেগুনে ক্ষুদে পাতা রোগের জীবাণু ছাড়ায় বলে জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ, দুই অবস্থাতেই জ্যাসিড সবজি গাছে আক্রমণ করে। চারা রোপনের পর পাতায় থাকে ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। এর ফলে আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কচি পাতা কুঁচকে যায়। আক্রমণ বেশি হলে পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে । পাতা থেকে রস চুষে খাওয়ার সময় জ্যাসিড পাতায় এক রকম বিষাক্ত পদার্থ গাছের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। এতে আক্রান্ত পাতা প্রথমে নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। পরে পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং শেষে পাতায় মরিচা রঙ হয়। একটি গাছের সমস্ত পাতা এমনকি আক্রমণ অত্যধিক হলে সম্পূর্ণ ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে করনীয় হচ্ছে-
বর্ষাকালে চারা রোপণ করতে হবে ।
বিএআরআই-এর কীটতত্ত্ব বিভাগ এক গবেষণা করে দেখেছে যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিলিটার নিমতেল অথবা নিমবিসিডিন মিশিয়ে তিন বার ক্ষেতে স্প্রে করতে পারলে জ্যাসিড দমনে সুফল পাওয়া যায় । নিম তেল ব্যবহার করলে নিম তেল ও পানির সাথে ১ মিলিলিটার তরল সাবান যেমন ট্রিক্স মেশাতে হবে ।
নিমতেল ছাড়া ১লিটার পানিতে ৫০টি নিম বীজের শাঁস ছেঁচে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর সে পানি ছেঁকে স্প্রে করলেও উপকার পাওয়া যায়।
প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ডিটারজেন্ট বা গুড়া সাবান গুলে ছেঁকে সে পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করেও জ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
চারা অবস্থায় আক্রান্ত গাছে ছাই ছিটানো যেতে পারে । চারা অবস্থায় জ্যাসিড দেখা গেলে মসলিন বা মসৃণ কাপড়ের তৈরি হাতজাল দ্বারা জ্যাসিড ধরে সংখ্যা কমাতে হবে ।
তামাক পাতা ১কেজি পরিমাণ নিয়ে ১৫ লিটার পানিতে এক রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে । এর সাথে সামান্য সাবান যোগ দিতে হবে। ছেঁকে সেই দ্রবণ স্প্রে করতে হবে ।
থ্রিপস
থ্রিপস সবজির একটি প্রধান ক্ষতিকর পোকা। শিম, বরবটি, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি সবজিতে এরা আক্রমণ করে থাকে। এমনকি ধান ফসলেও চারা অবস্থায় থ্রিপস ক্ষতি করে । ধানের থ্রিপস দেখতে কালচে রঙের, সবজির থ্রিপস বাদামি বা কালচে বাদামি। তবে শিমের থ্রিপস আবার কালো। থ্রিপস খুব ছোট, কাল পিঁপড়ার মত, পাখাযুক্ত । পাখাগুলো নারিকেল পাতার মত সূক্ষ্ম পশমে চেরা। পূর্ণবয়স্ক থ্রিপস কচি পাতা ও ফুলের রস চুষে খেয়ে ক্ষতি করে। এতে কচি পাতা কুঁকড়ে যায় এবং আক্রমণ অধিক হলে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় ও ফুল ঝরে পড়ে। এজন্য ফলন কমে যায়। প্রত্যক্ষ ক্ষতির পাশাপাশি থ্রিপস পরোক্ষ ক্ষতিও করে। যেমন এরা টমেটোর দাগযুক্ত নেতিয়ে পড়া রোগের ভাইরাস ছড়ায়।
বিনা বিষে এ পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি নেয়া যেতে পারে।
রসুন কোয়া ১০০ গ্রাম বেটে আধা লিটার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভেজাতে হবে। এর সাথে ১০ গ্রাম গুড়া সাবান মেসাতে হবে। এর পর ছাঁকতে হবে। এর সাথে ২০ গুণ অর্থাৎ ১০ লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সাবান পানি স্প্রে করলেও থ্রিপস পোকা দমন করা যায়। পরিমাণ হল প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০ গ্রাম গুড়া সাবান।
তামাক পাতা ১ কেজি পরিমাণ নিয়ে ১৫ লিটার পানিতে এক রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে । এর সাথে সামান্য সাবান যোগ করতে হবে । ছেঁকে সেই দ্রবণ স্প্রে করতে হবে।
গুড়া সাবান ৩০ গ্রাম বা শ্যাম্পু ৩০ মিলিলিটার পরিমাণ ৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। একটি মাটির পাত্রে গো মূত্র রেখে ১৪-১৫ দিন পচাতে হবে। পরে তার সাথে ১০ গুণ পানি মিশিয়ে ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে।
সবজির মাকড়
সবজি ফসলে সাধারণত লাল মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। লাল মাকড় একটি বহুভোজী শত্রু। বেগুন, কুমড়া, ঢেড়শসহ প্রায় ১৮৩টি ফসলে এদের আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। মাকড় অত্যন্ত ক্ষুদ্র। ভাল করে লক্ষ্য না করলে চোখে পড়েনা । এদের নিম্ফ বা বাচ্চা দেখতে হলে শক্তিশালী মাগনিফায়িং কাঁচ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র লাগে। দৈর্ঘ্যে একটি মাকড় মাত্র ০.৩৫ মিলিমিটার। রং হালকা বাদামী থেকে লাল। তবে স্ত্রী মাকড় বাদামী লাল অথবা সবুজ ও হলুদ বা গাঢ় বাদামী সবুজ।
পূর্ণবয়স্ক মাকড় ও নিম্ফ বা বাচ্চা উভয়ই সবজির ক্ষতি করে। এরা দলবদ্ধভাবে পাতার তলার পাশে থেকে পাতা থেকে রস চুষে খেতে থাকে। ফলে পাতার নিচের পিঠে লোহার মরিচা পরার মত রং দেখা যায়। মাকড়ের সূক্ষ্ম জাল, গোলাকৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিম এবং মাকড়ও সেখানে দেখা যায়। অধিক রস চুষে খেলে পাতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এদের বোনা জালে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয় ও ফলন কমে যায়। সেক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারে-
প্রতি ৩ দিন পর পর সবজির জমিতে জরিপ করে মাকড়ের উপস্থিতি নিরুপন করতে হবে। এ সময় মাকড় আক্রান্ত পাতা তুলে পলিব্যাগে নিয়ে তা মাঠের বাইরে এনে ধ্বংস করতে হবে।
রসুন ১০০ গ্রাম পরিমাণ বেটে, পানি ১ লিটার, ১০ গ্রাম সাবান ও ২ চা চামুচ কেরসিন তেল একত্রে মিশিয়ে আক্রান্ত ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে।
পাটায় পিষে নেয়া নিম বীজ ৫০০ গ্রাম পরিমাণ ৪০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে এক রাত রেখে দিতে হবে। তারপর তা ছেঁকে এক একর জমিতে স্প্রে করতে হবে। একবার স্প্রে করলে তা ২ সপ্তাহ পর্যন্ত মাকড়ের আক্রমণ মুক্ত থাকতে পারে।
গুড়া সাবান ৩০ গ্রাম বা শ্যাম্পু ৩০ মিলিলিটার পরিমাণ ৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সবজি পাতার ম্যাপ পোকা
শিম, বরবটি, কুমড়ো, টমেটোর ছোট গাছ বা চারা পাতায় অনেক সময় হালকা বা সাদা রঙের আঁকাবাঁকা সুরঙ্গের মত অনেক দাগ দেখা যায়। পাতা সুরঙ্গকারী এক ধরনের মাছির বাচ্চারা এ ধরনের দাগ সৃষ্টি করে থাকে। দাগগুলো দেখতে ম্যাপের মত বলে এ পোকাকে ম্যাপপোকা ও বলে। এসব সজীব দাগ বা আক্রান্ত স্থানে পাতার উপর ও নিচের পর্দার মধ্যে দাগ ফাটালে এ পোকার হলদেটে ম্যাগোট বা কীড়া দেখা যায়। অধিক আক্রমণে পুরো পাতাই শুকিয়ে যায়। এর ফলে চারা গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি আক্রান্ত চারা মারাও যায়। আক্রান্ত গাছে ফলন কম আসে ও ফল হয় ছোট। বিনা বিষে এ পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি নেয়া যেতে পারে-
আক্রান্ত পাতা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
তামাক পাতা ১ কেজি পরিমাণ নিয়ে ১৫ লিটার পানিতে ১ রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে । এর সাথে সামান্য সাবান যোগ করতে হবে । ছেঁকে সেই দ্রবন স্প্রে করতে হবে ।
প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিলিটার নিমতেল মিশিয়ে তিনবার ক্ষেতে স্প্রে করতে পারলে সুফল পাওয়া যায়। নিম তেল ব্যাবহার করলে নিম তেল ও পানির সাথে ১ মিলিলিটার তরল সাবান যেমন ট্রিক্স মেশাতে হবে । সূত্রঃ কৃষি বাংলা
খসরু মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনঃ দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন এবং কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন। গবেষণা দলে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একই বিভাগের সহকারী প্রফেসর মোঃ তৌফিকুর রহমান ও মোঃ জানিবুল আলম সোয়েব এবং শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা জেনিন, তানজিনা রহমান মিম, মোঃ রাইসুল ইসলাম রাব্বী, মোঃ নুরুল আজমীর, মিনহাজ উদ্দিন নয়ন, রুকন আহমেদ ইমন, শঙ্খরুপা দে, জিনাত জাহান, আনিকা তাসনিম, শহিদুল বাসার, আসিফ আল রাযী নাবিল, সাদিয়া আশরফি ফাইরুজ, সাদিকুর রহমান, আবু হানিফ, মোঃ আলমগীর আলম, সাব্বাহ তাহসিন চৌধুরী ও তুহিনুল হাসান।
তন্মধ্যে আধুনিক কম্পিউটার ভিশন এর মাধ্যমে চায়ের ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তির দ্বারা চায়ের দানার টেক্সচারাল ফিচার এবং বাহ্যিক গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন চায়ের চারটি গ্রেডকে নির্ভুলভাবে নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন, সেচ ব্যবস্থাকে সহজ করে আবাদি জমিতে সঠিক মাত্রায় আর্দ্রতা বজায় রাখার লক্ষ্যে মাইক্রোকন্ট্রোলারে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ব্যবহার করে উদ্ভাবন করেছেন স্বয়ংক্রিয় সেচ যন্ত্র যার মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী মাটির আদ্রর্তা ও পানির উচ্চতা পরিমাপ করে স্বয়ংক্রিয় ভাবে পা¤প চালু এবং বন্ধ হবে। ভিন্ন ভিন্ন শস্যের ক্ষেত্রে পানির চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন আদ্রর্তা ও উচ্চতায় এই যন্ত্রের সুবিধা নেয়া যাবে।ফলে কৃষকরা সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। মাইক্রো-কন্ট্রোলার ভিত্তিক স্মার্ট অটোমেশন সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় ডিম ঘুরানোর পদ্ধতি সংযোজিত করে ডিমের প্রকার ও প্রজাতি ভেদে আলাদা আলাদা তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নির্ধারণ করার মাধ্যমে অধিক সুস্থ ও সবল বাচ্চা উৎপাদন করার লক্ষ্যে উদ্ভাবন করেছেন অত্যাধুনিক ইনকিউবেটর যা দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে পোল্ট্রি ব্যবসাকে আরো লাভজনক ও জনপ্রিয় করবে।
বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে লাকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উদ্ভাবনও করেছেন তরুণ বিজ্ঞানী ড. রাশেদ। দেশে প্রতিদিন ব্যাপক পরিমাণ চা, মাছ ও গবাদিপশুর বর্জ্য তৈরি হয়, যা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশের উপর নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এমনকি এটা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এই বর্জ্য পচেঁ প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় যা গ্রিনহাউজ গ্যাস হিসেবে কার্বনডাইঅক্সাইড এর চেয়ে ২৫ গুন বেশি ক্ষতিকর অথচ মাছের বর্জ্য, চায়ের বর্জ্য ও গবাদিপশুর বর্জ্য মিশিয়ে ৬৫% নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদন করা সম্ভব। এক সমীক্ষায় দেখা যায় ২০১৫ সালে প্রায় ৩০.২১ মিলিয়ন গরু ও মহিষ, ২৫.৬৯ মিলিয়ন ছাগল ও ভেড়া, এবং ১৬০.৭০ মিলিয়ন পোল্ট্রি রয়েছে যা থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন কেজির মতো বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হত। যদি এর ৫০% বর্জ্যও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় তবে তা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখবে।
অন্যদিকে বছরের অর্ধেকটা সময়, বিশেষ করে বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে দেশের প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি থাকে। ফলে জলাবদ্ধ জমিতে কোন কৃষিকাজ হয় না। সেসব এলাকায় উক্ত সময়টুকুতে কোন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ থাকে না। এ সময় জমিতে উৎপাদন না হওয়ায় কৃষকের লোকসানসহ ঘাটতি দেখা দেয় শাক-সবজি ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি মোকাবেলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের হাওরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে বছরব্যাপী কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে উলম্ব ভাসমান খামারে (ভার্টিক্যাল ফ্লটিং বেড) একক স্থান হতে অধিক ফসল উৎপাদন করে ক্রম-হ্রাসমান ভূমির উপর চাপ কমানোর এক অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন ড. রাশেদ। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বন্যাক্রান্ত অঞ্চলে বদ্ধ পানির উপর কাঠামোটি ভাসিয়ে কৃষকরা অনায়াসেই চাষাবাদ করতে পারবেন এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কাঠামোটি শুকনো অনাবাদি জমির উপর স্থাপন করে কৃষিকাজ সচল রাখতে সক্ষম হবেন। সম্পূর্ণরূপে অব্যবহার্য জলাবদ্ধ ভূমির উপর কাঠামোটি স্থাপন করে কয়েকটি উলম্ব স্তরে চাষাবাদ করার ফলে কম জায়গা ব্যবহার করে অধিক ফলন নিয়ে আসা যাবে যা গতানুগতিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে পাওয়া অসম্ভব। সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উপাদান দিয়ে তৈরি এই কাঠামোটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে।
এখন পর্যন্ত দেশে টমেটো সংরক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক কোন পদ্ধতি নেই যার ফলে কৃষকরা ফসল উৎপাদনের পর যথাযথ পদ্ধতিতে সংরক্ষণের অভাবে অনেক টমেটো পঁচে যায় । ফলে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় । এ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে টমেটোর জন্য বিশেষভাবে মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা হয়েছে যেখানে ২০ দিন পর্যন্ত টমেটো সংরক্ষণ করা সম্ভব । এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা তাদের অবিক্রিত টমেটো সংরক্ষণের মাধ্যমে গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে ভোক্তাদের সরবরাহ করতে পারবে।
আবার শীতকালীন রবি শস্য সমূহ যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, বেগুন ইত্যাদি উৎপাদন করার পর পরিবহন জনিত সমস্যার কারণে যথাসময়ে পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব হয় না ফলে এসব পণ্য পঁচে যাওয়ার কারণে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ সমস্যা সমাধানে অল্প খরচে ইভাপোরেটিভ কুলিং চেম্বার স্থাপন করে ৭ থেকে ১০ দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব যাতে পণ্যের গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে এবং তৃণমূল কৃষক সম্ভাব্য লোকসান থেকেও বাঁচতে পারে।
অব্যবহৃত ফুড এন্ড বেভারেজ এর অ্যালুমিনিয়াম ক্যানসমূহ দিয়ে স¦ল্প খরচে সোলার ড্রায়ার তৈরি করে মৌসুমী কৃষিজাত পণ্য ও বীজ বছরজুড়ে সংরক্ষণ করা যাবে। যা একদিকে পরিবেশ দূষণ রোধ করবে এবং অপরদিকে কৃষিপণ্যের অপচয় কমানো সম্ভব হবে। এছাড়াও যেসব অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট বিদ্যমান সেসব অঞ্চলে উদ্ভাবিত সোলার কুকার দিয়ে রান্নাবান্নার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। এতে জীবাশ্ম জ্বালানির দ্বারা পরিবেশ দূষণ রোধসহ গ্যাস বিদ্যুৎ চালিত চুলা কিংবা লাকড়ির চুলার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা সাশ্রয় হবে। নগর জীবন ও গ্রামীণ অঞ্চলে সোলার কুকার ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
ড. রাশেদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে বি.এসি. এগ্রি. ইঞ্জি., এমএস ইন ফার্ম পাওয়ার এন্ড মেশিনারি, জাপানের কুমামোতু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডভান্সড টেকনোলজি (নবায়নযোগ্য জ্বালানী) বিষয়ের উপর পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাউন্ড ওয়াটার লিডারশিপ প্রোগ্রামে রিসার্চ সায়েনটিস্ট হিসেবে গবেষণা করেন। তিনি জাপানের মনবুকাগাকুশু, কুমামোতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল কোর্স ও জাসসু স্কলারশীপ এবং এশিয়ান ডেভলাপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি-জেএসপি) ও এশিয়ান ইনিস্টিটিউশন অব টেকনোলজি ফেলোশীপ অর্জন করেন। তিনি জাপান, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ড. রাশেদ ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর উপর একটি বই লিখেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁর প্রায় ৪০ টির মতো পিয়ার রিভিউড বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পজিয়াম ও ওয়ার্কশপে বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন । তিনি নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা ও সিংগাপুরে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে এক্সিলেন্ট ও বেস্ট রিসার্চ পেপার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তিনি কুমামোতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট (জাপান) অ্যাওয়ার্ড, কিংডম অব সৌদি এরাবিয়া (মরক্কো) অ্যাওয়ার্ড, ভেনাস ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড (ভারত) থেকে আউটস্টেন্ডিং সায়েনটিস্ট ইন ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি শীর্ষক আর্ন্তজাতিক পদকসহ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেস্ট পাবলিকেশন (বাংলাদেশ) অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
তিনি চলমান গবেষণার পাশাপাশি দেশে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড বায়োসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রিসিশন এগ্রিকালচার, লাকসই কৃষি পণ্য উৎপাদন, পোস্ট-হারভেস্ট ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেন।
ড. রাশেদ গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল কেনাফের বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাটচাষিদের মাঝে বিনামূল্যে কেনাফ বীজ (এইচসি-৯৫) বিতরণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নে। এতে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ ডঃ মোঃ আইয়ুব খান, মাননীয় মহাপরিচালক, বিজেআরআই,ঢাকা
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য পরিচালক, বীজ ও উদ্যান, বিএডিসি,ঢাকা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ মোঃ শাহাদাত হোসেন, খামার ব্যবস্থাপনা ইউনিট,বিজেআরআই,ঢাকা,
কৃষিবিদ মোঃ আনোয়ার হোসেন, উপ-পরিচালক, পাট বীজ, বিএডিসি, ঢাকা অঞ্চল।
সভাপতিত্ব করেন ডঃ মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ।
সঞ্চালনায় ছিলেন কৃষিবিদ মোঃ আবুল বাশার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রঞ্জন চন্দ্র দাস, পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ। আরও উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেনসহ প্রায় ৭০-৮০ জন পাটচাষি। অনুষ্ঠান শেষে ৫০ জন কেনাফ চাষীদের মাঝে ফ্রি কেনাফ বীজ বিতরণ করা হয় যারা এবার নিজের বীজ নিজে উৎপাদন করতে উদ্বুদ্ব হয়েছেন এবং নাবী পাট বীজ উৎপাদন করে নিজেদের পাশাপাশি অন্য চাষিদের বীজের চাহিদা পূরণে বহুলাংশে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবেন।
সাইলেজ কি?
বায়ুশূন্য অবস্থায় সবুজ ঘাসকে ভবিষ্যতের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখার প্রক্রিয়াকে সাইলেজ বলা হয়।
সাইলেজ কেন করা প্রয়োজন?
বর্ষা মৌসুমে সবুজ ঘাসে ময়েশচ্যার বেশি থাকার কারনে শুকাতে সমস্যা হয়, আর শুকানো হলে পুষ্টিমান কমে যায়। তাই সারাবছর সঠিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ঘাস গরুকে খাওয়াতে সাইলেজ হতে পারে উত্তম প্রক্রিয়া। কাঁচা ঘাসের তুলনায় এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে রাখা ঘাসের গুনগত ও খাদ্যমান বেশি। সাইলেজ প্রক্রিয়ায় ঘাস ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
কোন কোন ঘাস সাইলেজ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা যায়?
বর্ষামৌসুমে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়; দেশীয় ঘাস যেমন দুর্বা, বাকসা, আরাইল, সেচি, দল ইত্যাদি।
গাছের পাতা যেমনঃ ধৈঞ্চা, ইপিল-ইপিল জমিতে চাষ করা উন্নত জাতের ঘাস যেমনঃ নেপিয়ার, পাকচং, জার্মান, ভূট্টা, সুদান, পারা, সরগম ইত্যাদি।
★ সাইলেজ তৈরিঃ
ধাপ-১ঃ ঘাস সংগ্রহ
ফুল আসার আগে একই পরিপক্বতার ঘাসগুলো কেটে নিতে হবে।
সবুজ ঘাসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সাইলেজ হয় ভুট্টার। কারন এই সাইলেজে কান্ড, পাতার সাথে ভুট্টাও থাকে যার ফলে দানাদার খাদ্যের চাহিদাও অনেকটায় পূরণ হয়। এজন্য আধা কাঁচা ভু্ট্টা থাকার সময় সংগ্রহ করা ভালো।
ধাপ-২ঃ ঘাস শুকিয়ে নেওয়া
ঘাসগুলোকে একদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ভেজাভাবটা না থাকে। নেপিয়ার ঘাস কাটার পর এতে Dry Matter(DM) থাকে ১৫-২০%। একদিন রোদে শুকানো হলে তা ৩০% এর কাছাকাছি হয়। যা সাইলেজ তৈরির জন্য উপযুক্ত।
অন্যদিকে গাছের পাতা কিংবা আগাছা ৪ঘন্টা রোদে শুকিয়ে নিলেই ৩০% DM থাকে।
ড্রাই ম্যাটার-৩০% আছে যেভাবে বুঝবেনঃ
• কান্ডটি আর্দ্র কিন্তু ভেজা না।
• হাতে নিয়ে চাপ দিলে আগের অবস্থানে যাবে না।
ধাপ-৩ঃ ঘাস ছোট ছোট টুকরো করে নেওয়া
১-৩ ইঞ্চি পরিমাণ করে কেটে নিতে হবে। বেশিপরিমাণে কাটার জন্য বাজারে মেশিন আছে যাকে ‘চপ কাটার’ বলে।
ধাপ-৪ঃ ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করার জন্য চিনি জাতীয় উপাদান যুক্ত করতে হবে। এজন্য লালিগুড় বা মোলাসেস ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া লাল চিনিও ব্যবহার করা যায়। (বিঃদ্রঃ ভুট্টা, জার্মান ঘাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকার কারনে মোলাসেস প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না)
প্রতি ১০০ কেজি ঘাসের জন্য ২-৩% বা ২-৩ কেজি মোলাসেস প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোলাসেসের সাথে একই পরিমাণ পানি যুক্ত করতে হবে। কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা (ধাপ-৫) এ পাবেন।
ধাপ-৫ঃ এবার সংরক্ষণের জন্য সিলো বা পাত্র ঠিক করতে হবে।
এজন্য প্লাস্টিক ব্যাগ বা বস্তা, ড্রাম ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া মাটিতে পুঁতেও সংরক্ষণ করা যায়।
প্লাস্টিক ব্যাগ, ড্রামে সংরক্ষণঃ
• ব্যাগটি যেন কোনোরকম ছেঁড়া না হয়।
প্রথমে মোলাসেস এবং পানি মিশ্রিত দ্রবণের অর্ধেক পরিমাণ ঘাসে প্রয়োগ করতে হবে।
তারপর সেই ঘাস ব্যাগে কয়েকধাপে ভরতে হবে। এক ধাপ ভরার পর ভালোভাবে চাপ দিতে হবে যেন ঘাসগুলোর মাঝে ফাঁকা না থাকে, ফাঁকা থাকলে সেখানে বাতাস থেকে যাবে, যার ফলে সাইলেজ ভালো না হওয়ার ধরুন বেশিদিন ঠিক থাকবে না।
• তারপর মোলাসেস মিশ্রিত পানি আবার খানিকটা প্রয়োগ করতে হবে।এভাবে কয়েকধাপে ব্যাগ কিংবা ড্রামে ভালোভাবে ভরে শক্তভাবে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে যেন বাতাস প্রবেশ না করতে হবে।
মাটিতে পুঁতে সংরক্ষণঃ
• এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হবে।
• প্রয়োজনীয় পরিমাণ গর্ত করে পলিথিন দিয়ে দিতে হবে।
• কয়েকধাপে সমপরিমাণে মোলাসেস এবং পানি মিশ্রিত ঘাস বিছিয়ে দিয়ে আবার মোলাসেস মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করতে হবে।
• পা দিয়ে ভালোভাবে চাপ দিয়ে কম্পেক্ট করতে হবে।
তারপর উপরে আবার পলিথিন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে মাটি চাপা দিতে হবে।
ধাপ-৬ঃ উক্ত প্রক্রিয়াটি ১-২ দিনের মাঝে শেষ করতে হবে।
সাইলেজ আরো পুষ্টিসমৃদ্ধ করার জন্য পোল্ট্রির জন্য ব্যবহৃত লিটার, অব্যবহৃত কলা, কলার খোসা, মিষ্টি আলু, আখের খোসা ও যুক্ত করা যায়।
ভালোভাবে সাইলেজ তৈরি করলে সর্বোচ্চ ১০-১২ বছর সংরক্ষণ করা যায় এবং পুষ্টিগুণাগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে।
★ সাইলেজ প্রস্তুতের পূর্বে ঠিক করতে হবে কতগুলো গবাদিপশুকে কতদিনের জন্য দৈনিক কত কেজি করে খাওয়ানো হবে। তারপর জায়গার মাপ নির্ধারণ করতে হবে।
মোঃ রকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব ভেটেরিনারি সাইন্স এ্যান্ড এনিম্যাল হাসব্যান্ড্রি,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
লকডাউনের কারণে বাজার পড়ে যাওয়া ও যানবাহনের অভাবে ঝিনাইদহে বাগানেই পচে যাচ্ছে আম। পুলিশ ও প্রশাসনের বাধায় করোনার লকডাউনে বাজারে আম তুলতে না পেরে মাথায় হাত পড়েছে সেখানকার চাষিদের।
ঝিনাইদহ কৃষি অফিসে তথ্যমতে এ বছর জেলায় দুই হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৫৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৩৭০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৭১০ হেক্টর, মহেশপুরে ৫০০ হেক্টর, শৈলকূপা ২৫ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডুতে ২৬ হেক্টর। এসব বাগানে এ বছর ৩৩ হাজার ৫১১ টন আম উৎপাদন হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের সন্টু জোয়ারদার বাগানে আমের ব্যাপক ক্ষতি দেখে শনিবার দুপুরে বাগানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনিও ঋণ নিয়ে আম চাষ করেছিলেন। ওই গ্রামের সাজেজার রহমানের সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে। তিনি কিছু আম বিক্রি করতে পারলেও এখন আর ব্যাপারীরা আম কিনতে আসছে না। কাশিমনগর গ্রামের মোদাচ্ছের, তোফাজ্জল হোসেন ও আলীনুর রহমানও জানালেন তাদের কষ্টের কথা।
সন্টু জোয়ারদার বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ফরিদপুর ও পিরোজপুর জেলার ব্যাপারীদের পদভারে এ সময় আম বাগান মুখরিত থাকতো। এখন আর কেউ আম কিনতে আসছেন না। কিছু ব্যাপারী আসলেও তারা ৬৮০ টাকা মণ আম কিনতে চাচ্ছেন। এ দামে আম বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে।
কোটচাঁদপুরের আড়তদার মোমিনুর রহমান জানান, করোনার কারণে আম বাজারজাত ও পরিবহন করা যাচ্ছে না। শনিবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভালে আম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা মন। আর বেশির ভাগ আম ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, চাষিদের আম পরিবহন সহজতর করার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু করোনার ভয়াল বিস্তার ও নানা বিধিনিষেধের কারণে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
ফল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। পণ্য দুটির উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে। নানা প্রতিবন্ধকতায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে ফল ও সবজি রপ্তানি বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে সাতটি ফল ও সবজি চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলের মধ্যে রয়েছে আম ও লেবু।
সবজির তালিকায় শিম, বেগুন, শসা, পটোল ও করলা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এ নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে।\হপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সবজি ও ফল রপ্তানি কীভাবে বাড়ানো যায়, কোন কোন দেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে, প্রতিবন্ধকতা কীভাবে দূর হবে, উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায় এবং কোন কোন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হবে। পরিকল্পনায় আরও কী কী যোগ করা যায় তা নিয়ে মতামত নিচ্ছে বারি।
শনিবার উদ্যান ফসলের রপ্তানি প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োগবিষয়ক সমাপনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের আলাদা একটি প্রকল্প প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়।
রাজধানীতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহযোগিতায় কর্মশালায় বারির পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) ড. মো. কামরুল হাসান সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের পিপিসি উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারির সবজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসী ইসলাম।
কর্মশালায় উদ্যান ফসলের রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রয়োগবিষয়ক প্রকল্প প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন বারির আঞ্চলিক কৃষি গবেষণাকেন্দ্র হাটহাজারী, চট্টগ্রামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ টন ফল এবং ১ কোটি ৬৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নানামুখী সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ লাখ ৫০ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে দেশে আনারস উৎপাদিত হচ্ছে বছরে সাড়ে চার লাখ টন। আর লিচু ফলছে প্রায় তিন লাখ টন। পেয়ারা উৎপাদনেও বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। এখন প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়। কোনো কোনো ফল সারা বছরই উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত ফল ও সবজি রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু রপ্তানির জন্য উৎপাদিত শস্যের গুণগত মানের অভাব, নিরাপদ শষ্য উৎপাদনের অভাব, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার, চুক্তিভিত্তিক কৃষক না থাকা, অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাবরেটরি না থাকা, তদারকি ও মানসনদের দুষ্প্রাপ্যতা, রপ্তানির জন্য বিশেষ অঞ্চল না থাকাসহ ২০ ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব পণ্য রপ্তানি বাড়াতে ১৬টি সুপারিশ করা হয়।\হপ্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি ও বেসরকারি খাতের কয়েকজন প্রতিনিধি। তারা বলেন, রপ্তানি করার জন্য উৎপাদিত ফল ও সবজির মান ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি চিহ্নিত করতে হবে। এর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এছাড়া কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে তদারকি বাড়ানো, দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কার্যকর ভূমিকা এবং বিমানের পরিবর্তে সমুদ্রগামী জাহাজে পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে উল্লিখিত সবজি সংগ্রহ করা হবে নরসিংদী, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে। এ ছাড়া লেবু সিলেট থেকে এবং আম রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা থেকে সংগ্রহ করা হবে। তবে নরসিংদী থেকে লেবু ও মানিকগঞ্জ থেকে সবজি সংগ্রহের পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে। এসব সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষক নির্দিষ্ট করে চুক্তিভিত্তিক চাষের পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনে নির্দিষ্ট জোন তৈরিরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। সূত্র: সমকাল
মাটি বিহীন হাইড্রোপনিক সবজি চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। সম্প্রতি কৃষি গবেষণার বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এতে কমবে চাষাবাদের খরচ, পাবে জিংক সমৃদ্ধি পুষ্টিকর খাদ্য। বাড়বে কৃষি উদ্যোক্তা, সৃষ্টি হবে বাজার, ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ১৪ ধরনের সবজি চাষ করা যায়।
হাইড্রোপনিক বা মাটি বিহীন এই পদ্ধতিতে সারা বছরে চাষ করা যায়। এটি মূলত নারিকেলের ছোবরা বিভিন্ন টবের মধ্য রেখে, চারা বপন করে নিউট্রেশন নিয়মিত নলের সাহায্যে প্রতিটি চারার গোড়ায় খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। এতে পুষ্টিকর সবজি উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
এখানে মূলত মোবাইলের অ্যাপসের মাধ্যমে গাছের সকল আন্ত:পরিচর্যার কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই পরিচর্যার জন্য বাড়তি কোন লোকবল প্রয়োজন হয় না। ফলে চাষের জন্য বাড়তি খরচের সুযোগ নেই। এই হাড্রোপনিক চাষ বাড়ীর ছাদে, পাহাড়ে অথবা যেসব এলাকায় পানির অভাব সেখানে চাষ করা যায়। নেট হাউজে অ্যাপস ভিত্তিক হাইড্রোপনিক কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই চাষ করা সম্ভব। বাগানের তাপমাত্রার আর্দ্রতা বেড়ে গেল সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃষ্টি দিয়ে ঠাণ্ডা করে দিবে। গাছে কোন সমস্যা বা খাবার প্রয়োজন হলে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠাবে। মোবাইল অ্যাপস সাথে সাথে সেটি সমাধান করে দিবে। বাগানে না এসেও এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়।
বাগানে সব সময় অ্যাপসটি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পরিচর্যা করায় সবজি, ফল খুব সুস্বাদু হয় এবং বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হাইড্রোপনিক চাষের সকল ডিভাইস, বুকলেট, প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিবে জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।
উদ্ভাবক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. খায়রুল মাজেদ জানান, অল্প খরচে এই পদ্ধতিতে চাষ করে অধিক লাভ করা যায়। হাইড্রোপনিক চাষের খাদ্য নিরাপদের কারনে বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে করোনা কালীন সময় শিশুদের জন্য বাড়তি জিংক সমৃদ্ধি সবজি পেতে মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে।
জামালপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মঞ্জুরুল কাদির জানান, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে অল্প জায়গাতে চাষ করা যায়, এখানে কীটনাশকের পরিমাণ ও পোকার আক্রমণ কম থাকে। এই চাষ পদ্ধতিকে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।