১:২৯ পূর্বাহ্ন

বুধবার, ১ মে , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : এপ্রিল ৫, ২০২২ ৪:৪২ অপরাহ্ন
ছাদে বাগানের খুঁটিনাটি
পাঁচমিশালি

ছাদে বাগানের প্রথম ধারণা এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে। মেসোপটেমিয়ায় রাজা নেবুচাঁদ নেজার তার স্ত্রীর জন্য ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রথম ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান তৈরি করেন। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ ছাদ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সকল অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির পারিবারিক বাগান তৈরি করা সম্ভব। এর দ্বারা পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদার মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

ছাদে বাগান করার প্রয়োজনীয় উপকরণ: মাটি বা সিমেন্টের টব, হাফ ড্রাম কিংবা সুবিধামত ছাদে স্থায়ী বেড; আয়তন ৩ ফুট বাই ৩ ফুট বা ছাদের কার্নিশ বাড়িয়ে স্থায়ী বেড করা যায়। এছাড়া সিকেচার, কোঁদাল, কাঁচি, সাবল, ঝরনা, বালতি, চালনি, করাত, ছুরি, খুপরী, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি।

ফুল বা ফলের জন্য কলমের বা গ্রাফটিং চারা ও বিভিন্ন প্রকারের ফুল, ফল ও শাক-সবজি চারা বা বীজ। মাটির মধ্যে বেলে দো-আঁশ মাটি বা পাহাড়িয়া লাল মাটি, গোবর, খৈলসহ বিভিন্ন প্রকার জৈব সার এবং গাছের রোগ-বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক।

ছাদে বাগান তৈরি করার উপযোগী গাছসমূহ: ছাদের বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছ লাগানো যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, ক্যনা, গাদা, বেলি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যান্য মৌসুমী ফুল, অর্কিড, বনসাই ও ক্যাকটাস লাগানো যায়। ফল গাছের মধ্যে রয়েছে আম্রপলি, আতা, আঙুর, লতা বোম্বাই জাতের আম, পেয়ারা, কুল, আমড়া, সফেদা, লেবু, ডালিম, বাতাবি লেবু, করমচা, বিলম্ব, জামরুল, ছোট জাতের কলা, ছোট জাতের আনারস, কমলা, কামরাঙা ইত্যাদি। সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো, শিম, মরিচ, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, পটল, শসা, বরবটি, করলা ইত্যাদি।

ছাদে বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি : টব পদ্ধতি : খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানাš-র করা যায় বলে টব ছাদ, আঙিনা ও ব্যালকণীর জন্য সর্বোত্তম বাগান পদ্ধতি বলে বিবেচিত। দিনদিন টব পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে আজকাল প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের টব তৈরি করা হচ্ছে এবং এসব টবের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।

হাফড্রাম পদ্ধতি :

টব পদ্ধতি ও হাফড্রাম পদ্ধতির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরোক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্থায়ী বেড পদ্ধতি :

স্থায়ী বেড পদ্ধতি হল স্থায়ীভাবে ছাদে বাগান করা। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। এর দু’টি পদ্ধতি আছে। যেমনঃ

ছাদের চারদিকে স্থায়ী বেড পদ্ধতি :

ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়।

ট্যাংক পদ্ধতি:

ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।

ছাদে গাছ লাগানোর কৌশল :

গাছের ধরন অনুযায়ী ড্রাম/টব নির্বাচন করে সার-মাটি দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ অথবা এ জাতীয় ছত্রাকনাশক ছাই এর সাথে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা যায়। মাটি শোধন করে আদর্শ নার্সারি থেকে চারা, কলম, কাটিং, বীজ সংগ্রহ করে নিজেই টবে লাগালে খরচ কম হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের মধ্যে ড্রাম বা টবের মাটি বদলাতে হবে। ড্রামে বা টবে ইউরিয়া সার না দেয়াই ভাল।

দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, অবসর সময় কাটাতে, কর্মসংস্থান ও শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ তৈরি করতে এবং টাটকা ফল ও শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাদে বাগান করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

প্রকাশ : অক্টোবর ২২, ২০২১ ৪:৫৩ অপরাহ্ন
ছাদ বাগানে ঝিঙে চাষ করে কৃষক আবু সাঈদের চমক
কৃষি বিভাগ

ইউরোপের মত দেশে থেকেও কৃষির নেশা ছাড়তে পারেনি সৌখিন কৃষক আবু সাঈদ। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন দেশে। বাড়ির ছাদে নানা সবজির চাষ করে ব্যাপক বিনোদন পান তিনি। এবার ছাদে বাক্স পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। মাচায় ঝুলে আছে ঝিঙে।এমন দৃশ্য দেখা যায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কুন্দরঘোড়া গ্রামে।

ইউরোপ প্রবাসী আবু সাঈদ জানান, তারা তিন ভাই ইউরোপের ইস্তাম্বুল, বেলারুশ ও স্পেনে থাকেন। তবে ইউরোপে থাকলেও কৃষির প্রতি তাদের দুর্বলতা রয়েছে। তিন ভাই বছরের বিভিন্ন সময় পালা করে দেশে আসেন। কৃষি ক্ষেত পরিচর্যা করেন। আবু সাঈদ জানান, গত দুই বছর আগে বাসার ছাদে কাঠ দিয়ে বাক্স বানিয়েছি। সেখানে মিষ্টি কুমড়ো চাষ করেছিলাম। প্রচুর মিষ্টি কুমড়ো হয়। আমার উৎসাহ বাড়ে। পরে ইস্তাম্বুল ও স্পেন থেকে আমার বড় ও ছোট ভাই আসে। তারাও কাজ শুরু করে।

আবু সাঈদ বলেন, গত মাসখানেক আগে বাসার ছাদে কাঠের বাক্স তৈরি করে ছাদ থেকে অন্তত দেড় ফুট উঁচুতে। জৈব সার দিয়ে মাটি প্রস্তুত করি। সেখানে ৩৫ টি ঝিঙে বীজ রোপণ করেছি। মাত্র এক মাসেই ছাদ বাগান থেকে দেড় মণ ঝিঙে পেয়েছি। দেড় মণ ঝিঙে থেকে ৩০ কেজি আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়েছি। বাকি ৩০ কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। মূলত শখের বসেই শাক সবজি চাষ করেন।

আবু সাঈদ জানান, গত দুই বছর আগে চিন্তা করেছি বাসার খালি ছাদটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। সেই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। কাঠ দিয়ে বাক্স তৈরি করে নানান জাতের সবজির চাষ করি। এ কাজে বীজ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে কৃষি কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বাসসকে জানান, প্রবাসী আবু সাঈদ একজন কৃষি উদ্যোক্তা। তার উৎসাহের কারনে উন্নত জাতের ঝিঙের বীজ দেই।

তিনি আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। ঝিঙের চমৎকার ফলন হয়। এই এলাকায় যাদের বাসায় ছাদ রয়েছে তারা এখন বাক্স পদ্ধতিতে সবজি চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। এতে করে পরিবারের ভিটামিনের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বাজারে বিক্রি করে অর্থসংস্থানও হচ্ছে।

প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ২, ২০২১ ২:৩৭ অপরাহ্ন
ছাদ বাগান করে প্রতি মাসে আয় ৭০ হাজার টাকা!
এগ্রিবিজনেস

চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকায় আব্দুর রশিদ টিটো মিয়া বাণিজ্যিকভাবে ছাদ বাগান করে প্রতিমাসে অনলাইনে গাছের চারা বিক্রি করে আয় করছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তাঁর বাগানে দেশি-বিদেশি প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ।

জানা যায়, তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বোনের দেওয়া ই-ফোরবিয়া গাছদিয়ে তার নিজের গড়া ছাদে বিশাল বাগান গড়ে তুলেছেন। অবিশ্বাস্য পরিকল্পনা তার। জমি না থাকলে ছাদেও যে বাণিজ্যিকভাবে বাগান করে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছেন আব্দুর রশিদ টিটো মিয়া। অসম্ভব পরিশ্রম, আধুনিক চিন্তা-ভাবনা ও সৃজনশীল গুণী মানুষ টিটো মিয়া (৬০)। এ বয়সেও বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

করোনার মধ্যে তার অনলাইন বিসনেজ চালু ছিল। অনেক গাছ বিক্রি করেছেন। একজন নারী হিসেবে আমি বলবো, নারীরাও ছাদ বাগান করতে পারি। এটা করতে জমি লাগে না। যাদের বাসা আছে, ছাদ সবারই কম বেশি আছে। ছাদে আমরা ছাদ বাগান গড়ে তুলে অনলাইনে এই গাছ সেল করতে পারি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিন রাব্বি জানান, জমি না থাকলেও বাণিজ্যিক ছাদ বাগান করে অনেক বেকার যুবক-যুবতী অনলাইনের মাধ্যমে বেচা-কেনা করে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে পারে। করোনাকালে শুধু তরুণরাই নয় যে কোনো বয়সের মানুষই ছাদ বাগান করতে পারে। জমি না থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ছাদ বাগান করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।

ছাদ বাগান সৌন্দর্য বর্ধনের সাথে কর্মসংস্থান করাও যে সম্ভব তার জ্বলন্ত উদাহরণ টিটো মিয়া। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির কারণে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষিকে আমরা ভারট্রিক্যালে বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। যারই ফলশ্রুতিতে আমাদের অনেক মানুষ শখের বশে ছাদে বাগান করছে।

এতদিন পর্যন্ত বাগানগুলো শখের বশে দেখতাম। কিন্তু আমাদের চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার পুরাতন হাসপাতাল পাড়ায় আব্দুর রশিদ টিটো নামে এক ভদ্র লোক প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিভিন্ন প্রজাতির সৌখিন জাতীয় গাছের চারা সংগ্রহ করে এবং সেখানে উৎপাদন করছে। করোনাকালে মানুষ বেকার হয়ে যখন চাকরি হারাচ্ছেন সেই মুহূর্তে অন লাইনে চারা সরবরাহ করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা রোজগার করছেন টিটো মিয়া। গত বছর আমরা টিটো মিয়াকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম।

প্রকাশ : জুলাই ৭, ২০২১ ১:০৪ অপরাহ্ন
বর্ষাকালে ছাদ বাগানের যত্ন
প্রাণ ও প্রকৃতি

আবারও এসেছে বর্ষাকাল,গাছ লাগানোর মৌসুম।এমন দিনে চলে রোদ ও মেঘের লুকোচুরি খেলা। এই রোদ, আবার এই আকাশ থেকে নামছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি।প্রকৃতির এই নান্দনিক দৃশ্যগুলো যদি দেখা যায় বারান্দায় গড়ে ওঠা সবুজ বাগানে বসে, তবে সেই অনুভূতি কী রকম হয়, তা শুধু সেখানে বসেই অনুভব করা যাবে।

ইট-পাথরের এই শহরে যেদিকেই চোখ যায়, উঁচু দালান, গাড়ি, নানা চোখ ধাঁধানো স্থাপনা। সবুজ, সতেজ গাছগুলো ঠাঁই পাচ্ছে ছাদের ওপরেই।ইট-পাথরের শহুরে বাড়িঘরে একটু সবুজের পরশ যেন প্রাণের সঞ্চার করে।ঘরের সামনে একফালি সবুজ নিমেষে আপনার মন ভালো করে দিতে পারে। সারাদিনের ক্লান্ত অবসন্ন শরীর-মন নিয়ে যখন আপনি ঘরে ফেরেন, তখন এই সাধের সবুজ গেরস্থালিই, আপনার  মনে বুলিয়ে দিতে পারে শান্তির পরশ তাই অবসর পেলেই গাছের একটু যত্নআত্তি করুন।বিনিময়ে পান ফ্রেশ অক্সিজেনের আবিরাম যোগান।

বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি গাছের জন্য অনেক উপকারী। বৃষ্টির পানিতে যেমন থাকে পটাশিয়াম তেমনি থাকে সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফেট ও নাইট্রেট আয়ন। তাছাড়া এই বৃষ্টির পানিতে রয়েছে নাইট্রোজেন যা গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য সুনিশ্চিত করে। এক পশলা বৃষ্টির পর ছাদ বা বারান্দার গাছগুলোকে অন্যরকম লাগে। চির সবুজ একান্তই সতেজ নির্মল লাগে যা চোখে দৃষ্টি নন্দিত মনে হয়। হ্যাঁ এই বৃষ্টির পানি আপনার ট্যাপের পানির চেয়ে অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ যার জন্যে বর্ষাকালে গাছের পাতাগুলো আরো চির সজীব আরোও সবুজ মনে হয়। তবে এই অতিরিক্ত বৃষ্টি গাছের জন্য অনেক ক্ষতিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তাই এমনভাবে বাগান সাজাতে হবে, যাতে শুধু বৃষ্টির পানিটুকুই গাছ পায়। তার ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে বাগানকে।বর্ষায় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাগানকে রক্ষা করতে আপনাদের জন্য উপস্থাপন করা হলো কিছু টিপস।

 

) গাছকে ছায়ায় রাখা

বর্ষাকালের অতিবৃষ্টি কিছু কিছু গাছের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনে। ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট সদস্যদের গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না তাই এদের খোলা আকাশের নিচে না রাখাই ভালো। এই জাতীয় গাছগুলোকে  কোনও শেডের তলায় নিয়ে গিয়ে রাখতে হবে। অথবা ছাদের একটা পাশে নিয়ে গিয়ে তার উপরে টিন বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন। শেডের সুবিধে না থাকলে চারাগুলিকে বারান্দার কোণে বা ঘরের জানালার কাছেও রাখতে পারেন।

) পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা রাখা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।গাছের গোড়ায় যেন বৃষ্টির পানি না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।  যেকোনো ঘরোয়া গাছের জন্য এমন টব বা পাত্র বাছাই করা দরকার যেটায় পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনমত ছিদ্র থাকে। আর ইদানীং বড় বড় ড্রাম ব্যবহার করা হয় তাই এই ড্রামগুলোতে যেন নির্দিষ্ট পরিমাণ ছিদ্র থাকে তা খেয়াল রাখা জরুরি।খোলা জায়গায় বাগান থাকলে যাতে সেখানে পানি না জমে সেদিকে নজর দিতে হবে।

) মাটির ক্ষয় রোধ:

অনেক সময়েই দেখা যায়, বর্ষার পানিতে গাছের মাটির উপরের স্তর ধুয়ে যায়। এর সঙ্গে কিন্তু মাটির সার, উর্বর অংশটুকুও ধুয়ে সাফ হয়ে যায়। ফলে গাছ পানি পেলেও পুষ্টি পায় না। তাই গাছের কাণ্ড থেকে প্লাস্টিক বেঁধে টবের মাটি ঢেকে রাখতে পারেন। তবে অস্বচ্ছ আবরণের পরিবর্তে পারফোরেটেড শিট দিয়ে টবের উপরটা ঢেকে দিতে পারেন। এতে বৃষ্টির পানি চুয়ে চুয়ে মাটিকে পুষ্ট করবে। এঁটেল মাটি বেশি ব্যবহার করতে পারেন। এরা খুব তাড়াতাড়ি জল টেনে নেয়।

) প্রুনিং:

বর্ষায় অনেক গাছই খুব ঝাঁকড়া হয়ে যায়। ফলে একনাগাড়ে অনেক দিন বৃষ্টির পরে মাঝেমাঝে রোদ উঠলেও গাছের সব জায়গায় সেই রোদ পৌঁছয় না। বিশেষ করে শিকড়ে রোদ, অক্সিজেন না পৌঁছলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। তাই গাছের ডাল ছেঁটে দিতে হবে। ফুলের গাছে যে ডালে ফুল শুকিয়ে যাবে, তা কেটে দিতে পারেন। তা হলে সেখান থেকে আবার নতুন কুঁড়ি জন্মাবে।

) কেঁচোর কারবার:

বর্ষায় কেঁচোর আনাগোনা বাড়ে। তবে এরা বন্ধু কীট। মাটি খুঁড়ে যেমন মাটি উর্বর করে তেমনই নাইট্রোজেনের জোগান দিয়েও গাছকে পুষ্টি দেয়। তাই কোনও গাছের গোড়ায় যদি দেখেন, একাধিক কেঁচো জমা হয়েছে, তাদের তুলে অন্যান্য গাছের টবে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে সব গাছেরই উপকার হবে।

) কীটনাশক:

বর্ষার আর্দ্র পরিবেশে পোকামাকড়ের আক্রমণ বাড়ে। নতুন পাতার রস খেতেও এরা গাছে জড়ো হয়। তাই বর্ষার শুরু থেকেই কীটনাশকের ব্যবহার শুরু  করতে হবে। প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে নিমের তেল, গোলমরিচ গুঁড়ো, শুকনো মরিচের গুঁড়া দিতে পারেন গাছের গোড়ায়। এতেও কাজ না হলে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

) সার প্রয়োগ:

যেহেতু বর্ষার পানি উপরের স্তরের মাটি অনেকটাই ধুয়ে যায় তাই গাছে সার দিতে হবে নিয়মিত।  তবে এ সময়ে গলা-পচা সারের তুলনায় শুকনো সারের উপরে ভরসা রাখাই ভাল। চায়ের পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে,  ডিমের খোলা শুকিয়ে গুঁড়ো করে দিতে পারেন।

নামঃসৈয়দা সাজেদা খসরু নিশা
শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : জুন ১৫, ২০২১ ৩:৫৭ অপরাহ্ন
ছাদে বাগানের খুঁটিনাটি
কৃষি বিভাগ

ছাদে বাগানের প্রথম ধারণা এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে। মেসোপটেমিয়ায় রাজা নেবুচাঁদ নেজার তার স্ত্রীর জন্য ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রথম ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান তৈরি করেন। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ ছাদ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সকল অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির পারিবারিক বাগান তৈরি করা সম্ভব। এর দ্বারা পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদার মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

ছাদে বাগান করার প্রয়োজনীয় উপকরণ: মাটি বা সিমেন্টের টব, হাফ ড্রাম কিংবা সুবিধামত ছাদে স্থায়ী বেড; আয়তন ৩ ফুট বাই ৩ ফুট বা ছাদের কার্নিশ বাড়িয়ে স্থায়ী বেড করা যায়। এছাড়া সিকেচার, কোঁদাল, কাঁচি, সাবল, ঝরনা, বালতি, চালনি, করাত, ছুরি, খুপরী, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি।

ফুল বা ফলের জন্য কলমের বা গ্রাফটিং চারা ও বিভিন্ন প্রকারের ফুল, ফল ও শাক-সবজি চারা বা বীজ। মাটির মধ্যে বেলে দো-আঁশ মাটি বা পাহাড়িয়া লাল মাটি, গোবর, খৈলসহ বিভিন্ন প্রকার জৈব সার এবং গাছের রোগ-বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক।

ছাদে বাগান তৈরি করার উপযোগী গাছসমূহ: ছাদের বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছ লাগানো যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, ক্যনা, গাদা, বেলি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যান্য মৌসুমী ফুল, অর্কিড, বনসাই ও ক্যাকটাস লাগানো যায়। ফল গাছের মধ্যে রয়েছে আম্রপলি, আতা, আঙুর, লতা বোম্বাই জাতের আম, পেয়ারা, কুল, আমড়া, সফেদা, লেবু, ডালিম, বাতাবি লেবু, করমচা, বিলম্ব, জামরুল, ছোট জাতের কলা, ছোট জাতের আনারস, কমলা, কামরাঙা ইত্যাদি। সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো, শিম, মরিচ, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, পটল, শসা, বরবটি, করলা ইত্যাদি।

ছাদে বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি : টব পদ্ধতি : খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানাš-র করা যায় বলে টব ছাদ, আঙিনা ও ব্যালকণীর জন্য সর্বোত্তম বাগান পদ্ধতি বলে বিবেচিত। দিনদিন টব পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে আজকাল প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের টব তৈরি করা হচ্ছে এবং এসব টবের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।

হাফড্রাম পদ্ধতি : টব পদ্ধতি ও হাফড্রাম পদ্ধতির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরোক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্থায়ী বেড পদ্ধতি :

স্থায়ী বেড পদ্ধতি হল স্থায়ীভাবে ছাদে বাগান করা। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। এর দু’টি পদ্ধতি আছে। যেমনঃ

ছাদের চারদিকে স্থায়ী বেড পদ্ধতি :

ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়।

ট্যাংক পদ্ধতি:

ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।

ছাদে গাছ লাগানোর কৌশল :

গাছের ধরন অনুযায়ী ড্রাম/টব নির্বাচন করে সার-মাটি দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ অথবা এ জাতীয় ছত্রাকনাশক ছাই এর সাথে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা যায়। মাটি শোধন করে আদর্শ নার্সারি থেকে চারা, কলম, কাটিং, বীজ সংগ্রহ করে নিজেই টবে লাগালে খরচ কম হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের মধ্যে ড্রাম বা টবের মাটি বদলাতে হবে। ড্রামে বা টবে ইউরিয়া সার না দেয়াই ভাল।

দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, অবসর সময় কাটাতে, কর্মসংস্থান ও শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ তৈরি করতে এবং টাটকা ফল ও শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাদে বাগান করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

 

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop