মশা কমাবে দেশীয় প্রজাতির খলিসা মাছ
কৃষি গবেষনা
বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশের শহর, গ্রাম সর্বত্র মশার উপদ্রবে বিপর্যস্ত। মশার মাধ্যমে মানুষের ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগ। এছাড়া ‘মাইক্রোসেফালি’ যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। মশা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষতিকর কীটনাশক। যা পরিবেশ ও মানুষের শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে মশা থেকে রক্ষা পেতে জৈবিক পদ্ধতিতে (মশাভুক্ত মাছ) মশা নিধনসহ সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ। রবিবার এক সাংবাদিক সম্মলেনে এসব কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মলেনের সভাপতিত্ব করেন মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুর।
ড. হারুনুর রশীদ জানান, মশার বিস্তার রোধে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। সমন্বিত ব্যবস্থাপনাগুলো মূলত ‘জৈবিক বালাইদমন পদ্ধতি’ যা দীর্ঘমেয়াদী কিন্তু টেকসই ও কার্যকর। মশা নিয়ন্ত্রণে পাশ^বর্তী সফল দেশগুলোর (ভারত, ভিয়েতনাম) দিকে তাকালে দেখতে পাই যে, সারা বছর ধরে বেশ কিছু জৈবিক (মশাভুক মাছ) ও রাসায়নিক দমন পদ্ধতির সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে সাফল্য পেয়েছেন তারা। আমরা তাদেরকে অনুসরণ করতে পারি। জৈবিক উপায়ে মশা নিধনের জন্য ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে একটি গবেষণা করেছিলাম। এসময় আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন ড্রেনে ও নর্দমার নোংরা পানিতে প্রচুর পরিমাণ মসকুইটো ফিশ পাই । তাদের পেট কেটে দেখেছি প্রচুর পরিমাণে মশার লার্ভা। এই মাছটি কিছুটা আমাদের দেশি দাড়কিনা মাছের মতো দেখতে এবং মাছগুলো শহরের অ্যাকোরিয়ামের দোকানে বিক্রি হয়ে থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রামে বেশ কয়েক বছর আগে এই মাছ ও গাপ্পি ছাড়া হয়েছিল বলে শুনেছি। আমি চট্টগ্রামের ড্রেনে গাপ্পি তেমন দেখিনি, কিন্তু মসকুইটো ফিশ প্রচুর পরিমাণে দেখেছি। এ মাছগুলো ড্রেনের নোংরা পানিতে শুধু বছরের পর বছর টিকে আছে তাই নয়, বংশও বিস্তার করছে। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ মশার লার্ভা খেয়ে আমাদের সাহায্য করছে।
পরবর্তীতে মসকুইটো ফিশ ছাড়াও দেশি-বিদেশি মাছ নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করি। উদ্দেশ্য ছিল মশার লার্ভা ভক্ষণে তাদের দক্ষতার তুলনা করা। গবেষণায় আমরা দেখেছি যে, বিদেশি মসকুইটো ফিশ বা গাপ্পির তুলনায় মশক লার্ভা ভক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের দেশি জাতের খলিসা মাছের দক্ষতা প্রায় দ্বিগুণ। বিদেশি মাছের তুলনায় দাড়কিনা মাছের দক্ষতাও ভালো লার্ভা দমনের ক্ষেত্রে কিন্তু ড্রেন বা নর্দমার পানিতে এই মাছ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। অপরদিকে খলিসা শুধু মশার লার্ভা ভক্ষণেই ভালো নয়, এটির ড্রেনের পানিতে অভিযোজন ও টিকে থাকার হারও ভালো। এসব মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন খুবই সহজ। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাছগুলো যাতে হারিয়ে না যায় এজন্য সিটি কর্পোরেশনগুলো প্রতিবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ও বড় করে শহরের বদ্ধ জলাগুলোতে প্রতিবছর ছেড়ে দিতে পারে। এতে করে এসব জলায় মশা ডিম ছাড়লে উৎপন্ন লার্ভা খেয়ে দেশি মাছগুলো মশা দমনে অনেকাংশে অবদান রাখবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে দেশের স্বার্থে এ পোনার প্রযুক্তি সরবরাহ, পোনা উৎপাদনের প্রশিক্ষণ সহায়তা থেকে শুরু করে যাবতীয় সহায়তায় বিশ^বিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বিশেষজ্ঞ দল বিনা পারিশ্রমিকে সহায়তা প্রদানের করবে বলেও আশ^স্ত করেন।