বরগুনায় ১০ বছর ধরে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী‘র
প্রাণ ও প্রকৃতি
হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে।
পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে বরগুনা জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র- প্রায় ১০ বছর ধরে বরগুনা জেলায় সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, অনুকূল আবহাওয়া এবং সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে চলতি মৌসুমে জেলায় সূর্যমুখীর প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২ দশমিক ১৪ টন হতে পারে। মোট ফলন ৬ হাজার ৭৬৮ দশমিক ৮২ টনের বেশী হবে, যা থেকে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৬০ লিটার তেল পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছিলো। সে বছর বরগুনা সদর উপজেলায় ৪৩০ হেক্টর, আমতলীতে ৩৮৫ হেক্টর, বেতাগীতে ৩৭৫ হেক্টর, বামনায় ৩০০ হেক্টর, পাথরঘাটায় ৩৩২ হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর চাষ করেছিলেন জেলার ২৮২৮ জন কৃষক। এর পর ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১৫৩২ হেক্টরে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৬২০ হেক্টরে, ২০১৯-২০ মৌসুমে ১৩৬৩ হেক্টরে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বদরুল হোসেন জানান, বরগুনা জেলায় আবাদকৃত জমির প্রায় ৯৫ ভাগ জমিতে ব্রাক কর্তৃক আমদানীকৃত হাইসান-৩৩ জাতের হাইব্রিড সূর্যমুখী ফসলের আবাদ হয়। বাকি জমিতে বারি সূর্যমুখী-১ (কিরণী) ও বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী ফসলের আবাদ হয়। কৃষকের পছন্দের জাতটি আমদানী নির্ভর ও হাইব্রিড জাতের হওয়ায় বীজের সহজলভ্যতার অভাবে আবাদ হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
পুষ্টিবিদদের মতে সূর্যমুখীর ভোজ্য তেল ও সব ধরনের সবজির সঙ্গে খাওয়া যায়। পুষ্টিমান অনেক অনেক গুণে বেশি। এটি কোলেস্টেরলমুক্ত তেল। এছাড়া সর্ষে বাটার মতো করে সূর্যমুখী ফুলের দানা খাওয়া যায়। সূর্যমুখী গ্রামের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে।
কৃষিবিদ ও কৃষকরা জানিয়েছেন, সূর্যমুখীর চাষে কোন ঝুঁকি নেই। চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। মূলতঃ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখীর চাষ করা হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। একরে সূর্যমুখী উৎপাদন হয় ৩৩-৩৫ মণ। একর প্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় কমবেশি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর বিশাল গাছগুলো জমিতে পঁচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখীর খড়ি ব্যবহার করে থাকে। এতে করে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, নতুন লাভজনক ফসল চাষে কৃষককে প্রেরণা যোগাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দু’ফসলি জমিতে কিভাবে বছরে ৩টি অর্থকরী কৃষি ফসল খাদ্য শষ্য চাষ করা যায় তা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে; সফলতাও এসেছে।- বাসস।